আবু তালিবের মৃত্যুর পরের ঘটনা ও প্রভাব | খাদিজা (রা) ও আবু তালিবের মৃত্যু, আবু তালিব মারা যাওয়ার পর নবি করিম (সা) রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় পড়ে যান। আমরা জানি, আবু তালিবই ছিলেন তাঁর মূল নিরাপত্তা ও সুরক্ষা। বলা যাতে পারে তাঁর ‘পাসপোর্ট’। ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, আবু তালিবের মৃত্যুর পর কুরাইশরা নবিজি (সা) ও মুসলিমদের ওপর অত্যাচার- নিপীড়ন আগের চেয়েও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আবু তালিবের মৃত্যুর পরের ঘটনা ও প্রভাব | খাদিজা (রা) ও আবু তালিবের মৃত্যু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
অন্য এক তাবেয়ির বর্ণনা অনুসারে, কুরাইশরা আগে মুসলিমদের প্রতি শত্রুতামূলক কাজ একটু লুকিয়ে করত, কিন্তু আবু তালিবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তা তারা প্রকাশ্যে করতে শুরু করে। আবু তালিবের মৃত্যুর পরে আবু লাহাব বনু হাশিমের নেতৃত্ব গ্রহণ করে, কারণ তখন সে-ই ছিল গোত্রের সর্বাধিক প্রবীণ ব্যক্তি। গোত্রের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে হঠাৎ তার মধ্যে নবিজির (সা) প্রতি এক ধরনের নমনীয় মনোভাব লক্ষ করা যায়। গোত্রের বাইরের কেউ নবিজিকে (সা) বেশি গালমন্দ করলে আবু লাহাব তার ভাতিজাকে গিয়ে বলত, “হে মুহাম্মদ, তুমি আবু তালিবের সময় যেমন ছিলে তেমনই থাকো (অর্থাৎ আবু তালিবের সময় বনু হাশিম গোত্রের একজন হিসেবে যেসব অধিকার ভোগ করতে তা তোমার জন্য এখনও অটুট আছে)। আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তুমি একইভাবে থাকবে।

এখানে দেখা যাচ্ছে, আবু লাহাব বনু হাশিমের গোত্রপ্রধান হিসেবে নবিজিকে (সা) রক্ষা করার কিছুটা দায়িত্ব অনুভব করেছিল। এটা একটা সাধারণ মানবিক মনস্তত্ত্বের বিষয়। মানুষ কোনো দায়িত্ব পাওয়ার আগে অনেক কিছুই বলতে পারে, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর তার আচরণ আর একই থাকে না। আবু লাহাব ক্ষমতায় আসার আগে নবিজিকে (সা) মেরে ফেলতে চেয়েছিল; কিন্তু যখন সে গোত্রপ্রধানের দায়িত্ব পায়, তখন নিজের সম্প্রদায়ের লোকদের রক্ষা করা কর্তব্য বলে মনে করতে শুরু করে। নবিজির (সা) প্রতি আবু লাহাবের নমনীয় আচরণের কারণও ছিল সেই কতব্যবোধ, তাঁর প্রতি বিশেষ কোনো ভালোবাসা নয় ।
মক্কার কুরাইশরা যখন আবু লাহাবের নমনীয় মনোভাবের কথা জানতে পারল, তখন তারা গুজব রটিয়ে দিল যে আবু লাহাব ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি মুসলিম হয়েছেন?” আবু লাহাব উত্তরে বলল, “না, আমি শুধু আমার গোত্রকে সুরক্ষা দিচ্ছি।” তখন আবু জেহেল ও উতবা এই সুরক্ষা সরানোর জন্য চক্রান্তে লিপ্ত হলো। তারা আবু লাহাবকে বলল, “আপনি আপনার বাবা আবদুল মুত্তালিবের পরিণতি সম্পর্কে আপনার ভাতিজাকে জিজ্ঞেস করুন।” আবু লাহাব তা-ই করল। এটা একটা কৌশলী প্রশ্ন ছিল। নবিজি (সা) উত্তর দিলেন, “তিনি তাঁর লোকদের সঙ্গে আছেন।”
এখানেই নবিজির (সা) বুদ্ধিমত্তার ব্যাপরটি ফুটে ওঠে। তিনি এমন কোনো মন্তব্য করেননি যাতে বিষয়টা খারাপ দিকে গড়ায়; অন্যদিকে তিনি যা বলেছেন, তা মিথ্যাও নয়। জবাব পেয়ে আবু লাহাব খুশি হয়ে ফিরে গিয়ে আবু জেহেলকে বলল, “সব ঠিক আছে। তিনি তাঁর লোকদের সাথেই আছেন।” তখন আবু জেহেল বলল, “আপনি আস্ত একটা বোকা! তাঁর (মুহাম্মদের) মত অনুসারে তিনি (আবদুল মুত্তালিব) কোথায় আছেন তা জানেন? তিনি জাহান্নামে আছেন!” আৰু লাহাব অবশেষে ব্যাপারটি বুঝতে পেরে রেগে গিয়ে নবিজির (সা) ওপর থেকে সুরক্ষা তুলে নিল। তার ফলে মক্কায় নবিজির (সা) আর কোনো সুরক্ষা রইল না।
আরো পড়ূনঃ
- স্কলারদের যুক্তি-তর্ক | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবু বকরের (রা) হিজরত না করার কারণ | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় ফিরে আসা | প্রধান চার সাহাবি কি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- উসমান ইবনে মাজউন | আবিসিনিয়ায়-দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত) | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবু সালামা | আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত) | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন