আল-আরকামের বাড়ি | আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন?, ধীরে ধীরে সাহাবিদের সংখ্যা তিরিশের কাছাকাছি পৌঁছল। নবিজি (সা) বুঝতে পারছিলেন, মুসলিমদের একত্রিত হওয়ার জন্য এখন আলাদা একটা জায়গা দরকার। অনেকেই গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু সে কথা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবকে জানাচ্ছিলেন না। যেসব ক্রীতদাস ইতিমধ্যে মুসলিম হয়েছেন, তাঁরাও তাদের মনিবদেরকে কিছু বলেননি। নামাজ পড়ার জন্য তাঁদের কোনো ‘মসজিদ’ ছিল না। ইসলামের প্রথম মসজিদ ‘মসজিদুল কুবা’ আরও অনেক পরে মদিনাতে নির্মিত হয়েছে।
আল-আরকামের বাড়ি | আল্লাহ কেন মুমিনদের পরীক্ষা করেন? | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
এই পরিস্থিতিতে নবি করিম (সা) মুসলিমদের একত্রিত হওয়ার স্থান হিসেবে ‘আল-আরকাম ইবনে আবি আল-আরকামের (আল-আসাদ ইবনে আবদ-উজ্জা) বাড়িটি বেছে নেন। এটা প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করার কয়েক মাস পরের ঘটনা। আগে উল্লেখ করেছি, নবুয়তের তিন বছর পর প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু হয়েছিল, তখন থেকেই মুসলিমদের ওপর অত্যাচারও শুরু হয়েছিল।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, আল-আরকামের বাড়িটি বেছে নেওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? সিরাহের বইগুলোতে এ বিষয়ে তেমন কিছুর উল্লেখ নেই। তবে আমরা কিছু কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছি:

১) আল-আরকাম ছিলেন বনু মাখলুম গোত্রের একজন অভিজাত ব্যক্তি। আমরা জানি, বনু মাখজুম ও বনু হাশেমের মধ্যে এক ধরনের রেষারেষি ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই কেউ সন্দেহ করেনি যে, একজন মাখজুমি একজন হাশেমিকে সাহায্য করবে। তাই নবিজি (সা) তাঁর নিজের গোত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি গোত্র থেকে কাউকে বেছে নিয়েছিলেন, যাতে ব্যাপারটি কারও মাথায় না আসে।
২) আল-আরকাম ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম দশ ব্যক্তির মধ্যে একজন। অতএব তাঁর ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখা যায়।
৩) এক বর্ণনা অনুসারে, আল-আরকাম এই সম্পত্তিটি তাঁর বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। একজন ১৮-১৯ বছরের যুবক নবিজিকে (সা) সাহায্য করার ঝুঁকি নেবে, এটা কারও ধারণায় আসার কথা নয়।
৪) আল-আরকামের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি তখনো পর্যন্ত গোপন ছিল।
৫) আল-আরকামের বাড়িটি ছিল সাফা পাহাড়ের ঠিক পেছনে। এই পাহাড়টি ছিল মক্কার কেন্দ্রস্থলে। মক্কার প্রায় সবাইকেই প্রতিদিন ওই এলাকা দিয়ে যেতে হতো। ওই এলাকায় আনাগোনা করা খুব স্বাভাবিক ছিল। শহরের মাঝখানে এমন একটি স্থানে গোপন বৈঠক হতে পারে তা কারও ভাবার কথা ছিল না। আবার বাড়িটি ছিল কাবার ঠিক পাশেই। সুতরাং কেউ ওই বাড়িতে প্রবেশ করলে লোকেরা ভাববে যে সে কাবাঘরের ভেতরে যাচ্ছে। আবার যখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে, তখন ভাববে যে সে কাবাঘর থেকে বাইরে যাচ্ছে।
৬) বাড়িটি ছিল বেশ বড়, সেখানে সহজেই ৪০ জন লোকের জমায়েত করা যেত। [প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, আম্মার ইবনে ইয়াসির, সুহায়েব আল-রুমি ও উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) এই বাড়িতেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। উমর (রা) অনুতপ্ত হয়ে যখন ইসলাম গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তখন খাবার ইবনুল আরাত তাঁকে এই বাড়িতেই নিয়ে এসেছিলেন। উমরের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা পরবর্তী একটি পর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।]
আরো পড়ূনঃ
- অলৌকিক কিছু ঘটানোর জন্য নবিজিকে সা চ্যালেঞ্জ | কুরাইশদের-বিরোধিতা-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- মাঝামাঝি অবস্থানে আসার চেষ্টা | কুরাইশদের বিরোধিতা-১ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- নবিজিকে সা জিজ্ঞাসাবাদ | কুরাইশদের-বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- সরাসরি নির্যাতন | কুরাইশদের-বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- প্রত্যক্ষ নির্যাতনঃ খাবাব ইবনুল আরাত (রা) | কুরাইশদের-বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন