নবিজির (সা) চাচা ও ফুপুদের মধ্যে কারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, কারা করেননি, মহানবি মুহাম্মদের (সা) পিতা আবদুল্লাহর ছিলেন ১০ ভাই। আবদুল্লাহসহ মোট ১১ ভাইয়ের মধ্যে সাতজন নবুয়তের আগেই মারা যান। সুতরাং তাঁদের কাছে তওহিদের বাণী পৌঁছেনি। বাকি চারজনের (হামজা, আব্বাস, আবু তালিব এবং আবু লাহাব) মধ্যে দুজন ইসলাম গ্রহণ করেন ।
নবিজির (সা) চাচা ও ফুপুদের মধ্যে কারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, কারা করেননি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
নবিজির (সা) চাচাদের মধ্যে যে দুজন ইসলাম গ্রহণ করে নি, কাকতালীয়ভাবে তাদের দুজনেরই ছিল পৌত্তলিক নাম। আর যে দুজন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের ছিল সুন্দর ও অর্থবোধক নাম। এখানে বলা প্রয়োজন, কিছু মানুষ আবু জেহেলের সঙ্গে আবু লাহাবকে মিলেয়ে ফেলে। লক্ষ করুন, আবু লাহাব বনু হাশিম গোত্রের এবং আবু জেহেল বনু মাখজুম গোত্রের; এই দুজন আলাদা ব্যক্তি ।
আবু লাহাবের নাম আসলে আবদ আল-উজ্জা। সে দেখতে খুব সুদর্শন ছিল। তাই লোকেরা তাকে ‘আবু লাহাব’ বলে ডাকত, কারণ তার মুখমণ্ডল ছিল আগুনের মতো লাল। লাহাব শব্দের অর্থ আগুনের শিখা, কিন্তু আল্লাহ এই নামটি নিয়ে রসিকতা করে আক্ষরিক অর্থেই তাকে ‘লাহাব’ বলে ডেকেছিলেন, যার অর্থ সে আগুনে পুড়বে।

আবু তালিবের নাম ছিল আবদ মানাফ। তিনি ছিলেন নবিজির (সা) পিতা আবদুল্লাহর আপন ভাই।মানাফ এবং আল-উজ্জা ছিল দুটি প্রতিমার নাম। এই দুটি নামের চাচা দুজন কেন ইসলাম গ্রহণ করেননি তা কেবল আল্লাহই জানেন । যে দুই ভাই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা হলেন হামজা ও আব্বাস। দুজনেরই নামের অর্থ সিংহ। হামজা শক্তি অর্থে আর আব্বাস সাহসিকতা অর্থে। নবিজির (সা) হয় ফুপু ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এমন একজনের কথাই শুধু আমরা জানি। তিনি ছিলেন সাক্ষিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব, হামজার আপন বোন।
আরেক ফুপু আতিকা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, তিনি ইসলাম সম্পর্কে শুনেছিলেন। তবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না সে সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। নবিজির (সা) অন্য চাচা ও ফুপুদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না, কিংবা তাঁদের কেউ নবুয়তের পরেও জীবিত ছিলেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে মোটামুটিভাবে ধরে নেওয়া যায়, বাকিদের কেউই ইসলাম গ্রহণ করেননি; করে থাকলে আমরা তা সম্পর্কে জানতাম ।
আবু তালিব কি গোপনে মুসলিম হয়েছিলেন?
ইসলামে দুটি দল রয়েছে যারা বিশ্বাস করে আবু তালিব আসলে মুসলিম ছিলেন: প্রথম দলটি শিয়া সম্প্রদায়; তাঁরা বলেন ১২ জন ইমামের পিতা কাফের হতে পারেন না। এ বিষয়ে অন্য কিছু বললে তাঁরা অপমানিত বোধ করেন। তবে তাঁদের এই যুক্তি খণ্ডন করা খুবই সহজ: ইমামগণের মধ্যে কেউই তো ইব্রাহিমের (আ) চেয়ে মর্যাদাবান ছিলেন না; আল্লাহ বলেছেন তাঁর পিতা প্রতিমা তৈরি করতেন এবং তা পূজা করতেন।
অন্য দলটি সুফিদের; যেমন বেরেলভি। তাদের একটি যুক্তি হলো, আবু তালিব আল্লাহর রসুলের (সা) নিকাহ পরিচালনা করেছেন; তিনি নিশ্চয়ই একজন মুসলিম ছিলেন, নইলে নিকাহটি অবৈধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে আমাদের যুক্তি: নিকাহটি হয়েছিল জাহেলি যুগে, তখন কেউই মুসলিম ছিলেন না। আর কোরানে তিনটি পৃথক আয়াত, সহিহ হাদিস ও ইবনে ইসহাকের সিরাহ গ্রন্থে উল্লিখিত বর্ণনার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, আবু তালিব মুসলিম হিসেবে মারা যাননি।
আরো পড়ুনঃ
- উমর ইবনুল খাত্তাব | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- উমরের ইসলাম গ্রহণ | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবু তালিব বয়কট | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- বয়কটের সমাপ্তি | উমর ও হামজার ইসলাম গ্রহণ এবং বয়কট | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবু তালিবের মৃত্যু | খাদিজা (রা) ও আবু তালিবের মৃত্যু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন