উট ভাগাভাগি | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি, আমরা জানি, ওই অভিযানে অংশগ্রহণকারী সাহাবিরা উটগুলো ভাগাভাগি করে ব্যবহার করেছিলেন। নবি করিমের (সা) জন্য যে উটটি বরাদ্দ ছিল তা আলি ইবনে আবি তালিবের এবং আবু লুবাবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার কথা। একবার কল্পনা করুন, আপনাকে নবিজির (সা) সঙ্গে একটি উট ভাগাভাগি বা শেয়ার করতে হবে। আপনি এখন কী করবেন? আপনি নিশ্চয়ই বলবেন, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি উটের পিঠে চড়ুন, আমরা হেঁটে যাচ্ছি।” আলি ও আবু লুবাবা ঠিক তা-ই বলেছিলেন।
উট ভাগাভাগি | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইমাম আহমদ তাঁর মুসনাদে যেমনটি উল্লেখ করেছেন, তাঁরা (আলি ও আবু লুবাবা) উভয়েই বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে এবং জোর দিয়েই বলেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমরা হেঁটে চলব; আপনি উটটি নিয়ে নিন।” নবিজি (সা) তাঁদের এক চমৎকার ও প্রজ্ঞাপূর্ণ জবাব দিয়েছিলেন। তিনি তো বলতে পারতেন, ‘হ্যাঁ’। যদি তিনি হ্যাঁ বলতেন তাহলে কে আপত্তি করত? তিনি হলেন আল্লাহর রসুল! ধৰ্মীয়
সিকটি বাদ দিলেও তিনি তো অভিযানের প্রধান সেনাপতি এবং নেতাও বটে। সেনাপতি/নেতা কখনই সাধারণ সৈনিকদের মতো যাতায়াত করেন না। সুতরাং তিনি উটটিতে চড়লে কারও কোনো আপত্তি করার কথা ছিল না। আবার তিনি এ- ও বলতে পারতেন, ‘এসো, আমরা ভাগাভাগি করে উটটিতে চড়ি, এবং সেটিই হবে সবার জন্য ন্যায্য। কিন্তু নবিজি (সা) এর কোনোটাই করলেন না। তিনি তাঁদের দিকে ফিরে মুচকি হেসে বললেন, “তোমাদের দুজনের মধ্যে কেউই আমার চেয়ে তরুণ বা শক্তিশালী নও; এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার প্রয়োজনটা তোমাদের দুজনের চেয়ে আমার কিছু কম নেই।”

হিসেব করে দেখলে, সেই সময় আলির (রা) বয়স মধ্য বিশের কোঠায়। যদিও আবু লুবাবার বয়স আমাদের জানা নেই, নবিজির (সা) বয়স তখন ৫৪-৫৫ বছর। সুতরাং বলা যেতে পারে, নবিজি (সা) বয়সে তাঁদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন। এভাবেই নবিজি (সা) তাঁর দুই সঙ্গীর সাথে উটটি পালাক্রমে ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যায্যতা নিশ্চিত করেছিলেন।
নবিজির (সা) এই হেঁটে যাওয়ার মনস্তাত্ত্বিক দিকটি না উল্লেখ করলেই নয়। একবার কল্পনা করুন: আপনি যখন মুসলিম বাহিনীর অংশ হিসেবে যাত্রায় মরুভূমির উত্তাপ, বালু, তৃষ্ণা ইত্যাদিতে কষ্ট পাচ্ছেন, তখনই দেখলেন যে বাহিনীর নেতা এবং প্রাণপ্রিয় নবি হেঁটে চলেছেন! এ অবস্থায় কি আপনি আর কোনো অভিযোগ করতে পারবেন? আর নবিজির (সা) এই ন্যায়নিষ্ঠ আচরণের কারণে তিনি এতটা শ্রদ্ধার পাত্র হতে পেরেছিলেন।
[প্রাসঙ্গিক দ্রষ্টব্য: খলিফা উমর (রা) জেরুসালেম জয় করে শহরে প্রবেশ করার সময় হাঁটছিলেন, আর তাঁর দাস উটের উপরে ছিল, কারণ তাঁরা পালাক্রমে উটটিতে চড়ছিলেন। আপনি পৃথিবীতে কোন নেতাকে পাবেন যিনি তাঁর দাসকে উটের পিঠে বসিয়ে নিজে হেঁটে চলেছেন? উমর (রা) কোথা থেকে এই শিক্ষা পেয়েছিলেন? তিনি পেয়েছিলে জগতের সেরা শিক্ষক মহানবি মুহাম্মদের (সা) কাছ থেকে।]
আরও পড়ুনঃ