পবিত্র কোরানে ইসরা ও মিরাজ | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১, পবিত্র কোরানে দুটি পৃথক সুরায় ইসরা ও মিরাজের উল্লেখ আছে। ইসরার জন্য আল্লাহ একটি সম্পূর্ণ সুরা নাজিল করেছেন। ‘আল-ইসরা (অথবা, ‘বনি ইসরাইল’) নামের সুরাটি শুরু হয়েছে বিখ্যাত এই আয়াতটি দিয়ে। “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে তাঁর নিদর্শন দেখাবার জন্য রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদ আল-হারাম থেকে মসজিদ আল-আকসায়, যেখানকার পরিবেশকে আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য। তিনি তো সব শোনেন, সব দেখেন।” [১৭:১] এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি প্রশংসার যোগ্য। ‘সুবহানা অর্থ ‘সমুচ্চ’ (বা ‘উন্নত’)।
পবিত্র কোরানে ইসরা ও মিরাজ | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘অপূর্ণতা থেকে মুক্ত’ (অর্থাৎ ‘তার কোনো দোষ বা ত্রুটি নেই’। সুতরাং আমরা বলি, ‘সমস্ত মহিমা (প্রশংসা) তাঁর জন্য’ কারণ তিনি তাঁর বান্দাকে অলৌকিক ভ্রমণ দিয়ে রহমত করেছেন। অন্য কথায়, আল্লাহ বলেছেন, এই ভ্রমণের কারণে তিনি প্রশংসা ও সম্মান পাওয়ার যোগ্য। এ থেকেই বোঝা যায়, ভ্রমণটি কত অলৌকিক, মহিমান্বিত ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
“যিনি তাঁর বান্দাকে”—এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ‘আব্দ’ (বান্দা বা দাস) শব্দটির মাধ্যমে তাঁর রসুলের (সা) সর্বোচ্চ প্রশংসা করেছেন। সুরা জারিয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “আমি আমার ইবাদতের জন্যই মানুষ ও জিন সৃষ্টি করেছি। [৫১:৫৬] সুতরাং আল্লাহ সুরা ইসরায় স্বীকৃতি দিচ্ছেন যে, রসুল (সা) তাঁর ইবাদতের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জন করেছেন। আমাদের নবিজির (সা) মতো পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদত কেউ করতে পারেনি।

ইবনে তাইমিয়াহ বলেন, “আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল আমাদের নবিজিকে (সা) তাঁর নাম ধরে না ডেকে তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন উপাধিতে ডেকেছেন।” এমনকি আমেরিকায়ও আমরা নাম উল্লেখ না করে ‘মি. প্রেসিডেন্ট’, ‘মি. সিনেটর’ ‘ইয়োর এক্সিলেন্সি’ ইত্যাদি শব্দমালা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মান জানাতে ব্যবহার করে থাকি। এটি আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তায়ালা রসুলকে (সা) কখনও কখনও নাম দ্বারা সম্বোধন করলেও প্রায়শই তাঁকে উপাধি দ্বারা সম্বোধন করেছেন।
‘আবদুল্লাহ’, ‘আবদিহি’ ইত্যাদি ৭২;১৯ (১৭:১] (১৮-১) উপাধির মাধ্যমে বোঝা যায়, তিনি আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণতা অর্জন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, তিনি মসজিদ আল-আকসা ও তার আশেপাশের এলাকার ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। ইসরা সম্পর্কে আল্লাহ আমাদের বলছেন, তিনি তাঁর বান্দাকে বিস্ময়কর অলৌকিক নিদর্শনগুলো প্রদর্শন করাতে চেয়েছেন। এখানে ‘প্রদর্শন করানো কথাটি আরবিতে একবচন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তার মানে হলো, ইসরার পুরো ভ্রমণটি ছিল শুধু নবিজির (সা) জন্য। আমাদের কেবল বিশ্বাস করতে হবে যে, ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছে।
মিরাজের কথা আল্লাহ তায়ালা সুরা আন-নাজমে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:
“তিনি যা দেখেছেন তাঁর হৃদয় তা অস্বীকার করেনি। তিনি যা দেখেছেন তোমরা কি সে সম্বন্ধে বিতর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন, শেষ সীমান্তে অবস্থিত সিদরা গাছের নিকটে, যার কাছেই ছিল জান্নাতুল মাওয়া (আশ্রয় উদ্যান)। তখন সিদরাহ গাছটা আচ্ছাদিত ছিল যা দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি বা দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। তিনি তো তাঁর প্রতিপালকের অন্যতম নিদর্শনগুলো দেখেছিলেন।”
[৫৩:১১-১৮] সুরা ইসরা ও সুরা নাজম উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহ তায়ালা প্রায় একই শব্দগুচ্ছ বা বাক্যাংশ—’যাতে আমরা তাঁকে আমাদের লক্ষণগুলো দেখাতে পারি’—ব্যবহার করেছেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ইসরা ও মিরাজ ছিল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে শুধু নবিজির (সা) একার জন্য একটি ব্যক্তিগত উপহার, যা ছিল তাঁর জন্য বরকতস্বরূপ। এই উপহার দেওয়ার সময়টিও ছিল একদম উপযুক্ত। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন, এবং সেই ব্যক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তখন কখনো কখনো তিনি সে পরীক্ষার ফল বা পুরস্কারের স্বাদ ওই ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গেই পাইয়ে দেন।
আরো পরূনঃ
- আবু তালিবের মৃত্যুর পরের ঘটনা ও প্রভাব | খাদিজা (রা) ও আবু তালিবের মৃত্যু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- তায়েফ যাওয়ার সিদ্ধান্ত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- তায়েফ যাত্রা | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- তায়েফে ইসলামের দাওয়াত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- তায়েফে প্রত্যাখ্যানের পর | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন