খাদিজার রা সঙ্গে বিয়ে | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ, ইতিহাসবিদরা এ ব্যাপারে একমত যে বিয়ের উদ্যোগটা খাদিজার (রা) নিক থেকেই এসেছিল এবং তিনিই এর পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে নবিজির (সা) কাছে প্রস্তাবটি কীভাবে এসেছিল সে সম্পর্কে মতপার্থক্য রয়েছে। বিয়ের ব্যাপারে সাধারণত ছেলেরাই প্রথম এগিয়ে আসে। মেয়েরাও যদি প্রথমে আগ্রহ প্রকাশ করে তবে তাও ইসলামে সম্পূর্ণ অনুমোদিত।

খাদিজার রা সঙ্গে বিয়ে | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

খাদিজার রা সঙ্গে বিয়ে | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এক বর্ণনায় জানা যায়, খাদিজা (রা) নাফিসা নামে তাঁর একজন বয়স্ক পরিচারিকার কাছে নবিজিকে (সা) বিয়ে করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তারপর নাফিসা গিয়ে নবিজিকে (সা) গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “হে মুহাম্মদ! তুমি বিে করছ না কেন?” নবিজি (সা) হাসতে হাসতে জবাব দেন, “আমাকে আবার কে বিয়ে করবে? আমি তো একজন এতিম ও গরিব।” তখন নাফিসা বলেন, “যদিখাদিজা তোমাকে বিয়ে করতে চায় (তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয় ?” এবার নবিজি (সা) শান্তভাবে বলেন, “তিনি কেন আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন?” লক্ষ করুন, তিনি কিন্তু না বলেননি

তিনি ভাবছিলেন খাদিজার (রা) তাঁকে বিয়ে করতে চাওয়ার কী কারণ থাকতে পারে। তবে নবিজিও (সা) যে এই বিয়েতে অগ্রহী ছিলেন তা নাফিসার সঙ্গে তাঁর আলোচনা থেকেই বোঝা যায়। নাফিসা খাদিজার (রা) কাছে ফিরে গিয়ে মুহাম্মদের (সা) সঙ্গে তাঁর কী কথাবার্তা হয়েছে, তা জানান। তারপর বিষয়টি পরবর্তী পর্যায়ে (অর্থাৎ বিয়ে পর্যন্ত) গড়ায়। ইবনে ইসহাকের ভাষ্য অনুসারে, নবি করিম (সা) বোসরা থেকে ফিরে আসার তিন মাস পরে সফর মাসে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিয়ের প্রস্তাব ও আলোচনার জন্য ওই তিন মাস সময় লেগেছিল।

আরেকটি বর্ণনা অনুসারে, খাদিজার (রা) পিতা সে-সময় বেঁচে ছিলেন এবং এ বিয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। এ জন্য তাকে মাতাল করা হয়েছিল, এবং যখন তাঁর হুঁশ ফিরে আসে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তবে এই বিবরণটি অন্যান্য প্রামাণ্য সূত্রগুলোর সঙ্গে খাপ খায় না। যেমন ইবনে হাজার এবং আরও অনেকের মত অনুসারে, খাদি’জার (রা) পিতা এর অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে তো খাদি’জার (রা) অত অর্থসম্পদের অধিকারী হওয়ার কথা ছিল না; কারণ সেটাই ছিল তৎকালীন সমাজের নিয়ম। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, এই বর্ণনাটি সত্য নয়।

এখন আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানটির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেব। খাদি’জার (রা) চাচা আমর ইবনে আসাদ নিকাহটি পরিচালনা করেছিলেন। আবু তালিবও এসেছিলেন নবিজির (সা) সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে। প্রাথমিক যুগের সিরাহ গ্রন্থগুলোর বর্ণনা অনুসারে, আবু তালিব বিয়ের অনুষ্ঠানে খুতবা পাঠ করেছিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে শুরু করেন। তারপর কুরাইশদের বংশমর্যাদা, কাবার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তাদের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ইত্যাদি উল্লেখ করার পাশাপাশি মক্কাবাসীরও গুণগান করেন। সবশেষে তিনি বলেন, “আমার ভাতিজাকে মক্কার অন্য কোনো যুবকের সঙ্গে তুলনা করা চলে না। কী তাঁর আদব-কায়দা! কী তাঁর আভিজাত্য ও বংশমর্যাদা। তিনি আপনাদের পরিবারের অভিজাত ভদ্রমহিলাকে মোহর হিসেবে ১২ ‘উকিয়া’ (রুপার বার) সহ কিছু মুদ্রা [আমাদের আজকের সময়ে কয়েকশ ডলারের সমপরিমাণ] দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।”

এই পর্যায়ে খাদিজার (রা) চাচা উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “এ এমন এক যুবক যাকে কোনোভাবেই প্রত্যাখ্যান করা যায় না। আমরা এই প্রস্তাবটি মেনে নিচ্ছি।” আমরা উল্লেখ করেছি, খাদি’জার এর আগে দুইবার বিয়ে হয়েছিল। প্রথম বিয়ে থেকে হালা নামে তাঁর একটি ছেলে ছিল। হালা পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবিজির (সা) সঙ্গে সম্মানের সাথে জীবনযাপন করেন।

এখানে একটি প্রশ্ন চলে আসে: নবিজিকে (সা) বিয়ে করার সময় খাদি’জার (রা) বয়স কত ছিল? এ ব্যাপারে বহুল প্রচলিত মতটি হলো, তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর [ এবং তিনি ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন)। এটি ইসলামের অন্যতম ক্লাসিক্যাল স্কলার আল-ওয়াকিদির মত। আরও একটি ব্যাপারে স্কলারদের সর্বসম্মত মত হলো, বিয়ের সময় নবিজির (সা) বয়স ছিল ২৫ বছর এবং তিনি খাদি’জার (রা) সাথে ২৫ বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন। তবে বেশ কিছু প্রামাণ্য রিপোর্ট অনুসারে, বিয়ে করার সময় খাদি’জার (রা) বয়স ৪০ বছরের চেয়ে অনেক কম ছিল। একাডেমিকভাবে বলতে গেলে, এই ৪০ বছরের ব্যাপারটি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে দুটি সমস্যা রয়েছে:

১) আল-বায়হাকি, ইবনে কাসিরসহ অনেক স্কলারের (গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে যাঁদের স্থান আল-ওয়াকিদির অনেক ওপরে) মতে, মৃত্যুর সময়ে খাদি’জার (রা) বয়স ছিল ৫০-এর কোঠায় (অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৯-এর মধ্যে)। এই মত গ্রহণ করলে যা দাঁড়ায় তা হলো, বিয়ের সময় খাদিজার (রা) বয়স ছিল ২৫-৩৫ বছর। ইসলামের প্রাথমিক যুগের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ স্কলার হিশাম আল- কালবির মত অনুসারে, খাদিজা (রা) ২৮ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। আবার ইবনে ইসহাকের বরাত দিয়ে আল-হাকিম বলেছেন, বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল। ২৮ বছর।

যেসব স্কলার ২৮ বছরের কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরা যেমন সংখ্যায় অনেক বেশি তেমনি জ্ঞানের দিক থেকেও আল-ওয়াকিদির চেয়ে অধিকতর গ্রহণযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মহানবি মুহাম্মদের (সা) সিরাহ বা জীবনী বর্ণনার ক্ষেত্রে ইবনে ইসহাক অবিসংবাদিত ও অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছাড়া ইবনে কাসির, প্রমুখও গুরুত্বপূর্ণ ।

২) মুহাম্মদ (সা) ও খাদিজার (রা) কমপক্ষে ছয়জন সন্তান ছিল; সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে। সাধারণভাবে বিবেচনা করলে, চল্লিশের কোঠার একজন নারীর পক্ষে ছয়টি সন্তান জন্ম দেওয়া সহজ ব্যাপার না। তবে ২৮ বছরের একজন নারীর পক্ষে তা অধিকতর বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য। একাডেমিকভাবে বিশ্লেষণ করলে, বিয়ের সময় খাদি’জার (রা) ২৮ বছর ছিল, এই মতটিই সঠিক বলে মনে হয়।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

আমাদের শিক্ষণীয়

(১) জীবনে সততা এবং শিষ্টাচার (“আখলাক’) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবি করিম (সা) ছোটবেলা থেকেই মহৎ আচরণের দ্বারা সমাজে প্রশংসিত ছিলেন। তাঁর সততা, বিশ্বাসযোগ্যতা, বিনয় ও নম্রতার কারণে একজন রাখাল বালক থেকে আয়- উপার্জনেও উত্তরণ ঘটেছিল। এসব গুণের জন্যই খাদিজা (রা) প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ব্যবসায় ওরকম ভালো (লাভের অংশ ৫০% – ৫০% ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

২) এখানে আমরা খাদি’জার (রা) বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাবোধেরও পরিচয় পাই। তিনি মুহাম্মদের (সা) মধ্যে একজন ভবিষ্যতের আদর্শ স্বামীকে দেখতে পেয়েছিলেন। এরকম একজন ভালো মানুষকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য তাঁর মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছিল তাতে দোষের কিছু নেই। খাদি’জা (রা) এই প্রকৃতিপ্রদত্ত অনুভূতিকে অনুমোদিত (‘হালাল’) উপায়েই পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

৩) নবি করিমের (সা) ভবিষ্যতের মিশনের জন্য জোরালো সমর্থন ও একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থলের প্রয়োজন ছিল। কথায় আছে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনে থাকেন একজন সহায়ক নারী; অন্যথায় তাঁদের পক্ষে সফল হওয়া কঠিন। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসুলকে (সা) খাদিজার (রা) মতো একজন উপযুক্ত ও গুণবতী নারীকেই স্ত্রী হিসেবে দিয়েছিলেন। 

৪) খাদিজার (রা) ওপর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক বিশেষ মাশীর্বাদ ছিল, যেমন:

  • (ক) তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি নবিজির (সা) নবুয়তের ওপর বিশ্বাস করে। ইমান এনেছিলেন; 
  • (খ) ওহি নাজিলের পরপরই তিনি নবিজির (সা) মানসিক স্থিরতা আনার জন্য সান্ত্বনা দিয়েছিলেন; 
  • (গ) প্রথমবার ওহি নাজিলের পর তিনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে অনতিবিলম্বে নবিজিকে (সা) ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে পরামর্শের জন্য নিয়ে যান;
  • (ঘ) তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর বাড়িতে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) যেতেন; জিব্রাইল (আ) নবিজির (সা) অন্য কোনো স্ত্রীর বাড়িতে যাননি । একদা নবিজি (সা) খাদিজাকে (রা) বলেছিলেন, “হে খাদিজা! এখানে জিব্রাইল এসেছেন, তিনি তোমার প্রতি আল্লাহর সালাম প্রেরণ করছেন। তিনি নিজেও তোমাকে সালাম দিচ্ছেন, এবং তোমাকে জান্নাতে একটি বাড়ির সুসংবাদ দিচ্ছেন যেখানে কোনো কষ্ট থাকবে না।” খাদিজা (রা) অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এর জবাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ হচ্ছেন আস-সালাম। জিব্রাইলের ওপর সালাম বর্ষিত হউক। আপনার ওপরও সালাম বর্ষিত হউক, হে আল্লাহর রসুল।” এখানে লক্ষণীয়, তিনি কিন্তু বলেননি, “ওয়ালাইকাস্সালাম, হে আল্লাহ।” কারণ সালাম তো আল্লাহর কাছ থেকেই আসে; আল্লাহ তায়ালাই তো “আস-সালাম’।

এ প্রসঙ্গে খাদি’জা (রা) সম্পর্কে আয়েশার (রা) ধারণা প্রণিধানযোগ্য। আয়েশা (রা) ছিলেন নবিজির (সা) মদিনা পর্বের সহধর্মিণীদের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয়। তিনি বলেছিলেন, “আমি খাদিজার (রা) প্রতি যতটা ঈর্ষান্বিত ছিলাম, অন্য আর কোনো নারীর প্রতি ততটা ছিলাম না। যদিও আমি তাঁকে কখনই দেখিনি, তবু তাঁর প্রতি প্রচণ্ড ঈর্ষা অনুভব করতাম। কারণ আমি ভালো করেই জানতাম আল্লাহর রসুল (সা) তাঁকে কতটা ভালোবাসতেন।”

একবার নবিজি (সা) আয়েশার (রা) সামনে খাদি’জা (রা) সম্পর্কে প্রশংসাসূচক কিছু বলেছিলেন। কথাটি শুনে আয়েশা (রা) নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে এমন কিছু বলে ফেলেছিলেন যা বলা তাঁর মোটেই উচিত হয়নি। তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহর রসুল! আপনি আর কতদিন ধরে ওই দন্তহীন বৃদ্ধাকে নিয়ে পড়ে থাকবেন, যেখানে আল্লাহ আপনাকে তার পরিবর্তে একজন যুবতি ‘উর্বর জমি’ দিয়েছেন?”

এ কথা শুনে তখন নবিজি (সা) এতই বিরক্ত (এবং রাগান্বিত) হয়েছিলেন যে তিনি আয়েশাকে (রা) জবাব দিয়েছিলেন, “আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে তাঁর (খাদিজার) চেয়ে ভালো কাউকেই দেননি। যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে-ই আমার ওপর প্রথম বিশ্বাস রেখেছিল। যখন সবাই আমাকে ত্যাগ করেছে, তখন সে-ই আমাকে তাঁর অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য করেছিল। আমার সম্প্রদায়ের লোকজন আমাকে ছেড়ে চলে গেলেও সে আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। আল্লাহ তাঁর মাধ্যমেই আমাকে সন্তানাদি দান করেছেন।”

 

খাদিজার রা সঙ্গে বিয়ে | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আয়েশার বর্ণনা অনুসারে, তিনি এই ঘটনার পরে আর কখনও নবিজির (সা) সামনে খাদিজার (রা) কথা উল্লেখ করেননি। খাদি’জার (রা) প্রতি আয়েশার (রা) ঈর্ষান্বিত হওয়ার কারণ ছিল। যখনই নবি করিম (সা) কারও কাছ থেকে কোনো উপহার পেতেন, তিনি তার কিছু অংশ খাদিজার (রা) বন্ধুদের কাছে পাঠাতেন। এ থেকে বোঝা যায়, নবিজি (সা) খাদিজা (রা) সম্পর্কে কতটা ভাবতেন।

একবার খাদি’জার (রা) বড় বোন হালা মদিনায় নবিজির (সা) সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আয়েশা (রা) সেই সময় ঘরে ছিলেন। তিনি লক্ষ করলেন, দরজার বাইরে খাদি’জার (রা) বোনের পায়ের শব্দে শুনেই নবিজির (সা) আচরণ ও মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তি বদলে গেল। কারণ খাদি’জার (রা) পায়ের শব্দের কথা তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু খাদিজার (রা) বোন ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইতেই নবিজির (সা) মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল, কারণ তিনি জানতেন এটি খাদি’জা নয়। তাঁর মনে খাদি’জার (রা) স্মৃতি এতটাই জাগরূক ছিল যে অনেক বছর পরেও খাদিজার (রা) স্মরণে তিনি ভারাক্রান্ত হতেন। এক সাহাবি বলেছিলেন, “খাদিজা (রা) মারা যাওয়ার পর কয়েক মাস ধরে আমরা নবিজিকে (সা) হাসতে দেখিনি।”

৫) খাদি’জার (রা) সঙ্গে বিয়ের ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে নবি করিম (সা) মোটেই কামুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন না। তিনি চাইলে কোনো অল্পবয়সি কুমারী নারীকে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু বিয়ে করেছিলেন সন্তানসহ দুবার তালাকপ্রাপ্তা এক নারীকে; কারণ তিনি বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে চরিত্রের মাধুর্যকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। খাদিজার (রা) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। পরে, বয়স পঞ্চাশের কোঠা পার হওয়ার পর তিনি একে একে বেশ কয়েকটি বিয়ে করেন।

এ থেকে বোঝা যায়, তিনি নিছক যৌনলিপ্সু মানুষ ছিলেন। না, তিনি তাঁর প্রবৃত্তি ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। ১১৫ নবি করিমের (সা) সব সন্তানের জন্ম হয় খাদিজার (রা) গর্ভেই। তাঁদের কমপক্ষে ছয়জন সন্তানের প্রথমজনের নাম আল-কাসিম। [এ জন্য নবিজির (সা) আরেক নাম ছিল ‘আবু আল-কাসিম’ বা ‘আবুল কাসিম’। কাসিমের জন্য হয়েছিল। জাহেলি যুগে। সে এমন এক বয়সে (আনুমানিক ৭-৮ বছর) মারা যায় যখন সে উটের পিঠে চড়তে পারত। তারপর একে একে জন্ম নেয় জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা। আরও পরে খাদিজার (রা) গর্ভে আরেক পুত্র আবদুল্লাহর জন্ম হয়।

কিছু কিছু ভাষ্য অনুযায়ী, নবিজির (সা) আরও দুই সন্তান ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মত অনুসারে, আবদুল্লাহরই দুটি ডাকনাম ছিল: আল-তাহির ও আল-তাইয়িব। সম্ভবত এই দুটি নামের কারণে ওই দুই অতিরিক্ত সন্তান থাকার কথা কিছু মানুষের কাছে প্রচার পেয়েছিল। আবদুল্লাহর জন্ম হয়েছিল নবুয়তের পরে; শৈশবেই তাঁর মৃত্যু হয়। নবিজির (সা) চার কন্যাসন্তানই পরিপূর্ণ বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, বিয়েশাদি করে সংসার করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ফাতেমা (রা) ছাড়া বাকি তিনজনই নবিজির (সা) জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করেন।

নবিজি (সা) মৃত্যুশয্যায় থাকাকালে একদিন ফাতেমাকে (রা) কানে কানে কিছু বললে তিনি কেঁদে ফেলেন। তারপর আবার তাঁর কানে ফিসফিস কিছু বললে তিনি (ফাতেমা) হেসে ওঠেন। নবিজির (সা) মৃত্যুর কয়েক মাস পরে আয়েশা (রা) ফাতেমাকে (রা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আল্লাহর রসুল (সা) তোমাকে সেদিন যা বলেছিলেন তা কি আমাকে বলবে?” ফাতেমা (রা) জবাবে বলেছিলেন, “আমার বাবা যখন আমাকে বলেছিলেন যে তিনি মারা যাচ্ছেন, তখন আমি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেলেছিলাম।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই যখন তিনি। আমাকে বললেন, ‘আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য তুমিই হবে আমার পরিবারের প্রথম ব্যক্তি’, তখন আমি আনন্দে হেসে উঠেছিলাম।”

 ফাতেমা (রা) তাঁর বাবার মৃত্যুর পর মাত্র কয়েক মাস বেঁচে ছিলেন।

আরো পড়ুনঃ

 

Leave a Comment