গোয়েন্দা তৎপরতা | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি, ধারণা করা যায়, নবি করিম (সা) মুসলিম বাহিনী নিয়ে দ্বিতীয় হিজরি সালের ১২ই রমজানে মদিনা ত্যাগ করেন। যাওয়ার সময় তিনি মদিনার দায়িত্ব আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুমকে দিয়ে যান। উল্লেখ্য, এই সাহাবি ছিলেন অন্ধ, তবু তাঁকে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে ইসলাম কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করে না। এই ঘটনা ছাড়াও নবিজি (সা) ইবনে উম্মে মাকতুমকে কমপক্ষে এক ডজন বার মদিনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কারণ ইবনে উম্মে মাকতুম ছিলেন একজন জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মানুষ। তাঁর মদিনার অস্থায়ী ‘মেয়র’ হওয়ার পথে অন্ধত্ব কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
গোয়েন্দা তৎপরতা | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইতোমধ্যে আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে কাফেলাসমেত ফিরে আসছে। কিন্তু এবার সে অতিরিক্ত সতর্ক। কারণ সে গাজওয়াতুল উশায়রার সময় প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিল। ফেরার পথে সে অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে মুসলিম গুপ্তচরদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য একটি দল পাঠিয়েছিল। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুসারে, আবু সুফিয়ানের গুপ্তচর বেদুইনরা দুই ব্যক্তিকে গুপ্তচরবৃত্তি করতে দেখেছিল। এই দুজন ছিলেন তালহা এবং সাদ ইবনে জায়েদ । বেদুইনরা আবু সুফিয়ানকে সেখানে নিয়ে যায়।
আবু সুফিয়ান ক্যাম্প ও আশেপাশের সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার অংশ হিসেবে সেখানে ছড়িয়ে থাকা উটের গোবরের ভেতরটাও খুলে দেখে। গোবরের ভেতরে সে খেজুরের বীজ খুঁজে পায়। বীজ পরীক্ষা করে সে নিশ্চিত হয় যে, ওগুলো ইয়াসরিবের খেজুর। এবার সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই আতঙ্ক থেকে মাত্রাতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে সে দুটি কাজ করে। কাজ দুটি তাকে বাঁচিয়ে দিলেও কুরাইশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ও বয়ে আনে।
আবু সুফিয়ানের সতর্কতামূলক কাজ দুটি ছিল:
১. ফেরার পথে সে একজন স্থানীয় গাইড ভাড়া করে বলে, “আমাদের এখান থেকে জলদি সরিয়ে নিয়ে যাও।” গাইডের সাহায্যে সে পুরো শহরকে পাশ কাটিয়ে লোহিত সাগরের কাছাকাছি অনেক দূরের এক অচেনা রাস্তা দিয়ে চলে যায়।
২. পুরো ঘটনা কুরাইশদের জানানোর জন্য সে তার দ্রুততম উটচালক দামদাম ইবনে আমির আল-গিফারিকে মক্কায় পাঠায়। সে মক্কার কুরাইশদের কাছে যে বার্তাটি পাঠিয়েছিল তা হলো: “যদি তোমরা এখন কোনো কিছু না কর, তাহলে কাফেলার সব মালামাল হাতছাড়া হয়ে যাবে।” অর্থাৎ ‘যদি তোমরা আমাদের সাহায্য করার জন্য অস্ত্রশস্ত্রসহ লোকবল না পাঠাও তাহলে তোমাদের সব অর্থসম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে।’
দামদাম খুব দ্রুতই মক্কায় গিয়ে পৌঁছে। সম্ভবত দিনটি ছিল রমজান মাসের ১০ তারিখ। তালহা ও সাদ মদিনায় ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবিজি (সা) বললেন, ‘এখনই চলো।’ তিনি চাননি সংবাদটি আবু সুফিয়ানের কাছে পৌঁছে যাক; তাই তিনি খুব দ্রুত মুসলিম বাহিনীকে নিয়ে রওনা হতে চেয়েছিলেন। ফলে ধরে নেওয়া যায়, দামদাম দুই-তিন দিনের মধ্যে মক্কায় পৌঁছে গিয়েছিল এবং একই দিনে মক্কার কুরাইশরা সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যেই বদরে পৌঁছেছিল। পুরো ব্যাপারটিই ঘটেছিল খুব দ্রুতগতিতে।
আরও পড়ুনঃ