আবদুল মুত্তালিব: জমজমের পুনরাবিষ্কার | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

আবদুল মুত্তালিব: জমজমের পুনরাবিষ্কার | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর, জমজম একবার ভরাট করা হয়েছিল। আবদুল মুত্তালিব তাহলে কীভাবে সেটা পুনরাবিষ্কার করেছিলেন? তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন (আল্লাহই তাঁকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন) কাবার চত্বরের ঠিক কোন স্থানে (অর্থাৎ কোন প্রতিমা বা পাথরের কোন পাশে) জমজম আছে, যেখানে খনন করলে তা পাওয়া যাবে। প্রথমে তিনি স্বপ্নটি উপেক্ষা করেছিলেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারেন যে এটি নিশ্চয়ই। আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।

 

আবদুল মুত্তালিব: জমজমের পুনরাবিষ্কার | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

আবদুল মুত্তালিব: জমজমের পুনরাবিষ্কার | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

সেই সময় তাঁর একটাই মাত্র ছেলে ছিল, তার নাম ছিল হারিস। তিনি পুত্র হারিসকে সঙ্গে নিয়ে একটি কুড়াল ও একটি বেলচা দিয়ে খনন শুরু করেন। তা দেখে কুরাইশরা তাঁকে বিদ্রূপ করা শুরু করে: “তুমি কি মনে কর আমরা যে জমজম ৩,৪০০ বছর ধরে খুঁজে পাইনি তা তুমি এত সহজে আবিষ্কার করতে পারবে?” কিন্তু তিনি তাদের বিদ্রূপে কর্ণপাত না করে খনন কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। খনন করতে করতে এক পর্যায়ে তিনি পানির সন্ধান পান।

সেখান থেকে যখন বুদবুদের মতো পানি ওঠা শুরু করে তখন কুরাইশরা এবং তার আত্মীয়- স্বজনরা তাঁকে ঘিরে ধরে বলে, “এটা এখন আমাদের সম্পত্তি।” আবদুল মুত্তালিব তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “না। আমি এটা আবিষ্কার করেছি। এর উপর আমার অধিকার থাকবে ।” এখানে মনে করার কারণ নেই যে, আবদুল মুত্তালিব তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের পানি দিতে চাননি। আসলে এই দাবির মাধ্যমে তিনি তাঁর উপজাতির লোকদের কাছে নিজের শক্তি ও প্রতিপত্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কিন্তু উপজাতির মধ্যে তাঁর লোকেরাও তাঁকে এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি ছিল না। তখন আবদুল মুত্তালিব আল্লাহর কাছে মানত করেন, “হে আল্লাহ। আপনি যদি আমাকে রক্ষা করার জন্য ১০ জন পুত্রসন্তান দান করেন তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আমি আপনার জন্য তাদের মধ্য থেকে একজনকে কোরবানি দেব।”

এদিকে কুরাইশরাও তাঁর সঙ্গে ঝগড়া চালিয়ে যেতে চাচ্ছিল না। তাই ব্যাপারটি সুরাহা করার জন্য তারা আবদুল মুত্তালিবকে নিয়ে এক জ্যোতিষী মহিলার কাছে যেতে সম্মত হয়। সেখানে যাওয়ার রাস্তায় তারা পথ হারিয়ে ফেলে। হাঁটতে হাঁটতে তারা তৃষ্ণায় বেশ কাহিল হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাদের মনে হয় যে, তারা মারা যাচ্ছে। তখন আবদুল মুত্তালিব বলেন, “আমাদের প্রত্যেকের এখন নিজের কবর খনন করা উচিত, কারণ আমরা এতটাই দূর্বল যে আমাদের একে অপরকে সমাহিত করার শক্তি থাকবে না।”

এই বলে যখন আবদুল মুত্তালিব নিজের কবর খনন করতে শুরু করেন, তখন সেই গর্ত থেকে পানি বের হতে শুরু করে। আর তা দেখে কুরাইশরা বুঝতে পারে যে এটা নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নিদর্শন, এবং ওই পানির কারণেই তারা সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে যায়। এজন্য পুরোহিতের কাছে না গিয়ে তারা আবার মক্কায় ফিরে আসে এবং স্বেচ্ছায় আবদুল মুত্তালিবকে জমজমের অধিকার প্রদান করে।

আবদুল মুত্তালিব: তাঁর সন্তানগণ

শেষ পর্যন্ত আবদুল মুত্তালিবের ১২ জন পুত্র এবং ৬ জন কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছিল। ধারণা করা হয়, তাঁর আরও বেশি সন্তান ছিল, যারা অল্প বয়য়ে মারা গিয়েছিল। তবে উল্লেখিত ১২ জন পুত্র এবং ৬ জন কন্যা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছিল।

আবদুল মুত্তালিব ৮০ বছরের উপর বেঁচে ছিলেন, যখন আরব অঞ্চলের মানুষের গড় আয়ু ছিল খুব কম, ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তাঁর পুত্রকন্যাদের বিশদ বিবরণ আমরা জানি না, কারণ তাদের বেশিরভাগই নবিজির (সা) জন্মের আগেই মারা গিয়েছিল। বড় ছেলে হারিস আবদুল মুত্তালিবের জীবদ্দশাতেই মারা যায়। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আবদুল্লাহর নামটি আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। আবদুল্লাহ ছিলেন তাঁর বয়োকনিষ্ঠ পুত্রদের মধ্যে একজন।

 

আবদুল মুত্তালিব: জমজমের পুনরাবিষ্কার | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

আবদুল মুত্তালিবের পুত্রসন্তানদের মধ্যে যাঁরা একই মায়ের গর্ভে জন্মেছিলেন তাদের ভাগগুলো এ রকম:

  • আবদুল্লাহ, জুবায়ের এবং আবু তালিব
  • আব্বাস ও ধিরার
  • হামজা, মুকাওয়াম এবং হাজল
  • আবু লাহাব

আবদুল মুত্তালিবের ৬ জন কন্যাসন্তান ছিলেন। তাঁরা হলেন: সাফিয়া, আতিকা, উম্মে হাকিম, উমাইমা, আরওয়া ও বারাহ। তাঁদের মধ্যে একমাত্র সাফিয়াই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে নিশ্চিতভাবে জানা যায়। অন্য কন্যাদের মধ্যে আতিকা নবিজির (সা) ইসলাম প্রচারের শুরুর সময় জীবিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন কি না তা জানা যায়নি; তবে সম্ভবত তিনি তা গ্রহণ করেননি। উমাইমার কন্যা ছিলেন জয়নব বিনতে জাহশ, যাঁকে নবি করিম (সা) বিয়ে করেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ

 

Leave a Comment