তায়েফে ইসলামের দাওয়াত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তায়েফে ইসলামের দাওয়াত | তায়েফের ঘটনা, ইবনে ইসহাক তায়েফের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। কুরাইশ যেমন ছিল মক্কার প্রধান উপজাতি, তেমনি তায়েফের প্রধান উপজাতি ছিল সাকিফ। ওই দুই উপজাতির মধ্যে ছিল ভীষণ রেষারেষি। নবিজি (সা) তায়েফে গিয়ে সেখানকার যে তিনজন নেতার কাছে উপস্থিত হন তারা ছিল তিন ভাই: আবদ ইয়ালিল, মাসউদ ও হাবিব। তাদের পিতা আমর ছিল তায়েফের শীর্ষনেতা। এই তিন ভাই এমন সমঝোতায় এসেছিল যে তারা পিতার উত্তরাধিকার নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করবে না, বরং সম্মিলিতভাবে তায়েফ শাসন করবে।

 

তায়েফে ইসলামের দাওয়াত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তায়েফে ইসলামের দাওয়াত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নবিজি (সা) প্রথমে এই তিন ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের কাছে ইসলামের বাণী পেশ করলেন, তাঁদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনজনই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করল। একজন বলল: আল্লাহ যদি তোমাকে নবি হিসেবে পাঠিয়ে থাকেন তবে তুমি কাবার পর্দা (আবরণ) ফেড়ে দেখাও।

 দ্বিতীয়জন বলল: নবি হিসেবে আল্লাহ কি তোমার চেয়ে ভালো আর কাউকে খুঁজে পাননি?

তৃতীয়জন বলল: আমি তোমার সঙ্গে কোনোক্রমেই কথা বলতে পারব না, কারণ তুমি যদি সত্যিই নবি হয়ে থাকো, তবে আমার জন্য তুমি বেশি পবিত্র। আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে তো তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা একদমই সাজে না (অর্থাৎ তুমি মর্যাদায় আমার চেয়ে অনেক নিচে)। তাদের এসব ঠাট্টা-তামাশায় নবিজি (সা) মনে অনেক কষ্ট পেলেন। তিনি শুধু বললেন, “ঠিক আছে, আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। তবে আপনারা দয়া করে কুরাইশদেরকে যেন না বলেন যে আমি এখানে এসেছিলাম।”

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তারা এতে সম্মত হয়েছিল এবং কথা রেখেছিল। কুরাইশরা অন্তত তাদের কাছ থেকে নবিজির (সা) এই সফর সম্পর্কে কিছু জানতে পারেনি আরেকটি বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) ওই তিন নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের পর পরই তায়েফ ছেড়ে চলে যাননি। তিনি সাধারণ মানুষদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও সপ্তাহখানেক সেখানে অবস্থান করেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তিনি প্রথমে সমাজের মর্যাদাবান ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু সাধারণ মানুষকে বাদ রাখেননি। এটা তাঁর বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে।

তায়েফের ঘটনার বিশদ বিবরণ আমাদের জানা নেই। সেই সময় নবিজির (সা) সঙ্গে শুধু কেবল জায়েদ (রা) ছিলেন, যিনি মুতার যুদ্ধে মারা যান। অর্থাৎ তায়েফের কাহিনি বর্ণনা করার জন্য জায়েদ বেশি দিন বেঁচে ছিলেন না। তবে পরবর্তী সময়ের কয়েকজন সাকাফি মুসলিমের স্মৃতি থেকে পাওয়া কিছু বর্ণনা আমাদের কাছে রয়েছে। তেমনই একজন বর্ণনা করেছেন, “আমার মনে আছে, নবিজি (সা) তায়েফের বাজারে ইসলামের বাণী প্রচার করতেন, কিন্তু কেউ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।”

 

তায়েফে ইসলামের দাওয়াত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজি (সা) সেখানে কয়েকদিন প্রচার চালানোর পর কয়েকজন তায়েফবাসীর ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা দেখা দিলে তা নিয়ে সেখানকার লোকদের মধ্যে হঠাৎ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। নেতারা তখন নবিজিকে (সা) পাথর মেরে শহর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কিছু দুষ্ট প্রকৃতির কিশোর ও যুবককে তাঁর পেছনে লেলিয়ে দেয়।

দুষ্ট কিশোর ও যুবকদের পাথরের আঘাতে নবিজি (সা) মারাত্মকভাবে আহত হন, তাঁর শরীরের বেশ কিছু স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান থেকে এত বেশি রক্তপাত হয় যে তাঁর স্যান্ডেলগুলো রক্তে ভিজে যায়। নবিজিকে (সা) রক্ষার জন্য জায়েদ যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, তা করতে গিয়ে তিনি নিজেও আপাদমস্তক আহত হন। হিংস্র মানুষগুলো পাথর ছুড়তে ছুড়তে একপর্যায়ে তাঁদের দুজনকে শহর থেকে বের করে দেয় ।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment