অণুগল্প ২: ‘আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না” | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

অণুগল্প ২: ‘আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না” | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি, নবি করিম (সা) মদিনা ত্যাগ করার সময় আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল। মদিনার অন্যতম পৌত্তলিক, যে সাহসিকতা ও রণকৌশলের জন্য বিখ্যাত ছিল, নবিজির (সা) কাছে এসে বলল, “আমি আপনার সঙ্গে যোগ দিতে চাই।” সাহাবিরা তার মতো একজন শক্তিশালী ব্যক্তিকে নিজেদের পক্ষে আসতে দেখে খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নবিজি (সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আল্লাহই তোমার একমাত্র প্রতিপালক এবং আমিই তাঁর রসুল?” সে জবাব দিল, “না।” একথা শুনে নবিজি (সা) বললেন, “আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না।”

অণুগল্প ২: ‘আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না” | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

অণুগল্প ২: ‘আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না” | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

লোকটি যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেল। কয়েক ঘণ্টা পরে সে আবার বলল, “আমাকে আপনার সঙ্গে আসার অনুমতি দিন।” নবিজি (সা) তাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে…?” লোকটি এবারও জবাব দিল, “না।” নবিজিও (সা) তাকে একই জবাব দিলেন, “আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না।”

কয়েক ঘণ্টা পরে সে নবিজির (সা) কাছে ফিরে এসে মুসলিম বাহিনীতে যোগদানের অনুমতির জন্য আবার অনুরোধ করল। নবিজি (সা) আবারও আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে…?” এবার লোকটি ‘হ্যাঁ’ বলল  এবং কালেমা শাহাদাত পড়ার মধ্য দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করল। তারপরই তাকে বদরের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

‘আমরা পৌত্তলিকদের সাহায্য চাই না’—এই হাদিসটি নিয়ে পণ্ডিত- গবেষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। প্রশ্ন হলো, মুসলিমরা কি কোনো অমুসলিমের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা চাইতে পারে?” কিছু পণ্ডিতের মতে কখনই এ জাতীয় কোনো সহায়তা চাওয়া যাবে না। আবার অন্যান্য পণ্ডিতের মতে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইমাম আন-নওয়াবি বলেছেন, “এই হাদিসটি থেকে দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো পৌত্তলিক বাহিনীর কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া যাবে না। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। আবু তালিবের মৃত্যুর পরে আবু লাহাব নবিজির (সা) নিরাপত্তা-সুরক্ষা দেওয়া বন্ধ করার পরে নবিজি (সা) মুতিম ইবনে আদির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। একইভাবে নবিজি (সা) নিজেই হিজরতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আবদুল্লাহ ইবনে উরাইকিতের (যিনি একজন পৌত্তলিক ছিলেন) কাছ থেকে পথপ্রদর্শক হিসেবে সাহায্য নিয়েছিলেন।

এই লোকটি (উরাইকিত) কিন্তু নবিজিকে (সা) ধরিয়ে দেওয়ার পুরস্কার হিসাবে ১০০টি উট পেতে পারত। তবু নবিজি (সা) আল্লাহ আজ্জা ওয়াজালের পরে আবদুল্লাহ ইবনে উরাকিতের ওপর নিজের জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভরসা করেছিলেন। এই ঘটনার ভিত্তিতে ইমাম আন-নওয়াবি বলেন, যদি কোনো মুশরিক ব্যক্তির ইসলামের প্রতি ভালো ধারণা থাকে এবং যদি তাকে বিশ্বাস করা যায়, তাহলে পরিস্থিতির প্রয়োজনে কেউ (কোনো মুসলিম) তার (মুশরিকের) সাহায্য চাইতে পারে।

এই বিষয়ে অনেক ধরনের মত রয়েছে; প্রতিটি মতামতের পক্ষেই কিছু না কিছু যুক্তি ও প্রমাণ আছে। আসল কথাটি হলো, প্রতিটি ঘটনাই আলাদা আলাদা করে বিবেচনা ও পর্যালোচনা করতে হবে। তারপর পরিস্থিতির আলোকে সেই দেশের বা অঞ্চলের পণ্ডিতেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করবেন। এটি ‘ইজতেহাদ’-এর {২} বিষয়।

এখানে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইসলাম ধর্ম মানুষের মনের মধ্যে কী আছে তা আমাদের দেখতে বলে না। ওই লোকটি সত্যিকার অর্থেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল কি না তা নিয়ে যে কোনো সাধারণ ব্যক্তিই সন্দেহ পোষণ করবে। তবে ইসলাম বলে, ‘মানুষকে বাহ্যিকভাবে বিচার করো। আর তার অন্তরে কী আছে তা বিচারের ভার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ওপর ছেড়ে দাও।’

 

পৌত্তলিকদের সাহায্য

 

মানুষের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করবেন না। এটি ঠিক যে, সেই সময় মুসলিম হিসেবে অভিযানে অংশ নিতে পারলে অনেক সম্পদের ভাগ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। নবিজি (সা) তাকে তিনবার জিজ্ঞেস করেছেন, “তুমি কি মুসলিম?” তৃতীয়বারের জিজ্ঞাসায় সে যখন বলল, “আমি একজন মুসলিম”, তারপর তার ইসলাম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি।

আমাদের ধর্ম অনুসারে মানুষকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে; তা হতে পারে কখনও আর্থিক, কখনও রাজনৈতিক। যদি কেউ প্রথমে কোনো জাগতিক কারণেও ধর্মান্তরিত হয়, আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে সে এক সময়ে সঠিক কারণেই ইসলামকে হৃদয়ে বরণ করে নেবে। আমাদের পরিচিত পরিমণ্ডলেও আমরা দেখতে পাই, কেউ কেউ বিয়ে করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করছে। ধরে নিলাম, সে অর্থসম্পদের জন্য অথবা বিয়ে করার জন্য ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? এরপর কী হবে? আস্তে আস্তে ইসলাম এবং ইমান তার হৃদয়ে প্রবেশ করবে।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment