নবিজির (সা) প্রথম জুমার নামাজ | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ, নবি করিম (সা) বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষণা করেন, তিনি পরদিন সকালে মদিনায় প্রবেশ করবেন। তার আগে মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার তিনি কুবায় মসজিদ নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। শুক্রবার সকালে তিনি কুবা ছেড়ে মদিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে জুমার নামাজের সময় উপস্থিত হয়। সুতরাং নবিজি (সা) প্রথম জুমার নামাজ যেখানে পড়েন, তা কুবা মসজিদও ছিল। না, মসজিদুন নববিও ছিল না। তিনি এর মাঝামাঝি বনু সালামা এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করেন।
নবিজির (সা) প্রথম জুমার নামাজ | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
সেখানেই তিনি প্রথমবারের মতো জুমার খুতবা দেন। ইবনে ইসহাক ও আল-বায়হাকি এই খুতবার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। যদিও এর বর্ণনা-পরম্পরা কিছুটা দুর্বল, তবু তা বলতে কোনো সমস্যা নেই। উল্লেখ্য, বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা নবিজির (সা) যে কয়েকটি খুতবার কথা জানতে পারি, সেগুলোর প্রতিটিই ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। কোনোটাই পাঁচ মিনিটের চেয়ে দীর্ঘ ছিল না।
এক বর্ণনায় আছে, নবিজি (সা) বলেছেন, “খুতবা ছোট করে নামাজ দীর্ঘ করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।” কিন্তু আমাদের সময়ে এর উল্টোটাই হয়। কেন? কারণ আমাদের সময়ে জুমার নামাজই একমাত্র সময় যখন প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম মসজিদে আসেন। নবিজি (সা) যাদের সামনে খুতবা দিয়েছিলেন তাঁদের ইমানের স্তর ছিল অন্য উচ্চতায়। আমাদের যেমন প্রতিনিয়ত ধর্মের বিধানগুলো মনে করিয়ে দিতে হয়, তাঁদের জন্য তার প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং খুতবার বিষয়টি উম্মাহকে সংগত কারণেই পরিবর্তন করতে হয়েছে।
নবিজি (সা) সেখানে দুটি খুতবা পাঠ করেন। প্রথম খুতবাটিতে তিনি সাদাকা (দান), মৃত্যু, আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ, হিসাব (জবাবদিহিতা), এবং ভালো কথা বলা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উপস্থিত মুসলিমদের। উদারভাবে দান করতে উৎসাহিত করেন মৃত্যুর সত্যতা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন, আল্লাহ প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করবেন তাঁকে কী দেওয়া হয়েছিল এবং সে কীভাবে বায় করেছে, তা স্মরণ করিয়ে দেন।

অতঃপর তিনি উঠে দাঁড়ান এবং ‘খুতবা আল-হাজাহ দিয়ে দ্বিতীয় খুতবা শুরু করেন। [আনুষঙ্গিক বিষয়: আমরা খুতবা আল-হাজাহ দিয়ে হুমার প্রথম খুতবা শুরু করি। আরেকটি বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) পরবর্তী সময়ে খুতবা আল-হাজাহ দিয়ে প্রথম খুতবা শুরু করতেন।
তারপর তিনি বলেন: “সেই ব্যক্তি সফল আল্লাহ তায়ালা যার অন্তরকে সুন্দর করেছেন, কুফর ছেড়ে তাকে ইসলামে প্রবেশ করিয়েছেন, এবং উত্তম বিষয়ের জন্য তাকে অন্যের চেয়ে ওপরে বেছে নিয়েছেন (অর্থাৎ ‘তোমরা যারা ইসলাম গ্রহণ করেছ তারা পৃথিবীতে অন্যদের চেয়ে বরকতপ্রাপ্ত হয়েছ’)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যা ভালোবাসেন তা ভালোবাসো। আল্লাহকে সমস্ত হৃদয় দিয়ে ভালোবাসো। আল্লাহর বাণী ও জিক্র (স্মরণ) তোমাদের যেন কখনও ক্লান্ত না করে। তোমাদের হৃদয়কে কখনও কঠোর হতে দিও না।
আল্লাহ কোরান ও জিকুকে সবচেয়ে মঙ্গলময় কাজ হিসেবে বরকত দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর ইবাদত করো এবং কাউকে তাঁর অংশীদার করো না। তাঁকে ভয় (তাকওয়া) করো, যা তোমাদের করা উচিত। এবং আল্লাহর উদ্দেশে যা বলো তা আন্তরিকভাবে বলো। আল্লাহর কথা স্মরণ করে একে অপরকে ভালোবাসো এবং স্মরণ রেখো যে, আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীকে ঘৃণা করেন। ওয়াসসালামু আলাইকুম।”
লক্ষ করুন, খুতবাটি অর্থের দিক থেকে কত ব্যাপক, কত প্রাসঙ্গিক। প্রথম খুতবায় নবিজি (সা) সাদাকার ওপর জোর দিয়েছেন, কারণ ইসলামের জন্য তখন অর্থ ও ত্যাগের প্রয়োজন ছিল। সন্দেহাতীতভাবে, ইসলামের শুরুর দিনগুলোতেই আল্লাহর উদ্দেশে দান করার প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। তারপর তিনি তাঁদের জীবনের বাস্তবতা ও মৃত্যুর নিশ্চয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
এই সংক্ষিপ্ত খুতবায় ভয় ও পুরস্কার দুটোর কথাই বলা হয়েছে। এটিই ইসলামের পথ। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সম্ভাব্য পুরস্কারের কথায় মানুষ যেমন আনন্দিত ও আশাবাদী হয়, তেমনি সম্ভাব্য শাস্তির কথা তাদের ভীত ও চিন্তিত করে তোলে। লক্ষ করুন, প্রথম খুতবাটি ছিল কর্মভিত্তিক, আর দ্বিতীয়টি সম্পূর্ণভাবে আধ্যাত্মিক। এই দুই মিলেই ইসলাম পরিপূর্ণতা পায়। জুমার নামাজ শেষে নবিজি (সা) মদিনায় প্রবেশ করলেন। সেখানকার ঘটনাগুলো (যেমন: উটের বসে পড়া ইত্যাদি) এবং আবু আইয়ুবের বাড়িতে তাঁর আতিথ্য গ্রহণের কথা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি।
আরও পড়ূনঃ