প্রথম পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত, সেই সময় মক্কার সম্ভ্রান্ত সব মানুষ ছিল কুরাইশ উপজাতির। রসুল (সা) আল্লাহর বাণী প্রকাশ্যে প্রচারের জন্য প্রথমে বেছে নেন কুরাইশদের মধ্যে তাঁর নিকটতম গোত্র বনু হাশিমকে। তিনি তাঁর আপন চাচা-চাচিসহ বনু হাশিমের প্রায় ৪০ জনকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করেন এবং আলি ইবনে আবু তালিবকে খাবার ও স্যুপ রান্না করতে বলেন। কথিত আছে, যদিও সব খাবার একটি প্লেটেই ছিল, সবাই এমন পেট পুরে খেয়েছিলেন, যেন নিজ নিজ প্লেট থেকে নিয়ে খেয়েছেন।
প্রথম পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আবু লাহাব আঁচ করতে পারছিলেন যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, মুহাম্মদ (সা) এতদিন যা ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে বলে আসছিলেন, তা এখন লোকসমক্ষে বলা শুরু করতে পারেন। অতএব সকলের আহার শেষ হওয়ার আগেই আবু লাহাব এক কাজের অজুহাত দেখিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়েন। মুরুব্বিস্থানীয় আবু লাহাব চলে যাওয়াতে আসরটি এক রকম ভেঙে যায়। আরও বেশ কয়েকজনও তাঁর সঙ্গে চলে যান।
নবিজি (সা) বুঝতে পেরেছিলেন, এটা আবু লাহাবের একটা কৌশল। তাই কদিন পর তিনি আবার আলিকে খাবার তৈরি করতে বলে সবাইকে দাওয়াত দেন। এবার সবার খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই নবিজি (সা) উঠে দাঁড়িয়ে কথা বলা শুরু করেন। তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসা করে খুতবা আল-হাজাহ’ দিয়ে শুরু করেন, “হে বনি আবদুল মুত্তালিব। আমি জানি না আমার আগে কোনো আরব তার সম্প্রদায়ের কাছে এমন বার্তা নিয়ে এসেছে কি না- আমি এখন যা বলছি তা থেকে উত্তম।

আমি তোমাদের কাছে এমন এক বার্তা নিয়ে এসেছি যা তোমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে, তোমরা দুনিয়া ও আখিরাত দুই ক্ষেত্রেই উপকৃত হবে। আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে বার্তাবাহক হিসেবে তোমাদের কাছে এসেছি। তোমরা যদি প্রতিমাপূজা ছেড়ে দাও এবং তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে আস, তাহলে আল্লাহ তোমাদের একদিকে যেমন এই পৃথিবীতে মঙ্গল করবেন অন্যদিকে তেমনি পরের জীবনেও জান্নাত দান করবেন।”
নবিজির (সা) বক্তব্যের একপর্যায়ে আবু লাহাব বিরক্ত হয়ে আশেপাশের লোকদের বলেন, “এসব বাজে কথা। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে পথ দেখিয়ে গেছেন আমরা সে পথে অবিচল আছি। এই যুবক নিজেকে কী মনে করে যে সে আমাদের পূর্বপুরুষদের পথের বিরোধিতা করছে?” সেখানে আবু লাহাবই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভীষণ রূঢ় আচরণ করেছিলেন। বাকিরা ততটা প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
একটি সিরাহ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, আলি (রা) সেই সময় উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনাকে সাহায্য করব।” আলি (রা) তাঁর জীবদ্দশায় এ রকম সাহসের পরিচয় আরও অনেকবার দিয়েছেন। যাই হোক, সে মুহূর্তে মুহাম্মদের (সা) নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কেউই ইসলাম গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেননি। এই সময়ের পর থেকে তিনি প্রচার চালিয়ে যেতে শুরু করেন। এর আগে মক্কার লোকেরা শুনত যে মুহাম্মদ (সা) এক নতুন ধর্মতত্ত্ব প্রচার করছেন, কিন্তু তাদের কাছে সরাসরি বার্তাটা যায়নি। এই প্রথম তাদের কানে ইসলামের বাণী পৌঁছাল।
আরো পড়ুনঃ
- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) | দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- সাওয়াত ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখার অনেক কারণ ছিল | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- দাওয়াতের বিভিন্ন পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- প্রকাশ্যে ধর্মপ্রচার | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন