ফিজারের যুদ্ধ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল, কিশোর মুহাম্মদের (সা) বয়স যখন ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে (তবে ১৫ বছরের কাছাকাছি), তখন ফিজার যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। এই যুদ্ধটি ছিল আরবের দুটি বড় উপজাতির মধ্যে সংঘটিত অনেক ছোট ছোট লড়াইয়ের সমষ্টি। এর এক পক্ষে ছিল কুরাইশ যা কিনানা নামের এক বড় উপজাতির অংশ। আরেক পক্ষে ছিল কায়েস আইলান, গাতাফান, হাওয়াজিন প্রভৃতি গোত্রের সমন্বয়ে গঠিত।
ফিজারের যুদ্ধ | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
কিনানা গোত্রের এক ব্যক্তি হাওয়াজিন গোত্রের একজনকে হত্যা করেছিল। তা জানতে পেরে হাওয়াজিনরা কিনানাদের আক্রমণ করে বসে। সেই যুগে এমন একটি রীতি প্রচলিত ছিল যে, যে ব্যক্তি হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ: অর্থাৎ তাকে আর কেউ আক্রমণ করতে পারবে না। সুতরাং কুরাইশসহ কিনানারা হাওয়াজিনদের ধাওয়া খেয়ে তাড়াতাড়ি মক্কায় তথা হারামে ফিরে আসে।
কিন্তু হাওয়াজিনরা এতটাই ক্ষেপে গিয়েছিল যে তারা হারামের পবিত্রতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে মক্কায় হারামের ভেতরে ঢুকে কিনানাদের ওপর হামলা এখানে লক্ষণীয়, কিনানারা প্রথম ভুলটি করলেও হাওয়াজিনরদের পাল্টা আক্রমণ করার বিষয়টি ছিল আরও বড় ও মারাত্মক ভুল। কাউকে হত্যা করা একটি অপরাধ। আর হারামের ভেতরে যুদ্ধ করে এর পবিত্রতা ভঙ্গ করা আরও অনেক বড় অপরাধ। এর (হারামের ভেতরে আক্রমণের) জের ধরে কুরাইশরা হাওয়াজিন ও কায়েস আইলান গোত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। এটাকেই ফিজারের যুদ্ধ বলা হয়।

এই যুদ্ধে কিশোর মুহাম্মদের (সা) কাজ ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট তিরগুলি খুঁজে বের করে তাঁর চাচাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। প্রথমদিকে কুরাইশরা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জিতে যায়। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, যেদিনই মুহাম্মদ (সা) কুরাইশদের সঙ্গে হাজির থাকতেন তারা বিজয়ী হতো। অন্যদিকে যেদিন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকতেন, সেদিন তারা যুদ্ধে সুবিধা করতে পারত না। আবু তালিব এই বিষয়টি লক্ষ করে বলেন, “এখন থেকে তুমি সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকবে।”
অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি হয়েছিল। কুরাইশরা রক্তের বিনিময়ে অর্থ প্রদানে সম্মত হলে যুদ্ধ বন্ধ হয়। অনেক বছর পরে নবি করিম (সা) বলেন, “আমি ফিজারের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা স্মরণ করতে পারি। আমি আমার চাচাদের জন্য তির সংগ্রহ করতাম, এবং তাদের কাছে তা ফিরিয়ে দিতাম।” যা-ই হোক হোক, এই যুদ্ধ উভয় পক্ষেরই ভুল অবস্থানের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তবে দুই ভুলের মধ্যে হারামের পবিত্রতা ভঙ্গ করা ছিল অধিকতর গর্হিত কাজ। নবিজি (সা) বলেছেন, “এই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য আমি আফসোস। করি না।”
আরো পড়ূনঃ
- আমিনার মৃত্যু | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আবদুল মুত্তালিবের অভিভাবকত্ব | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- মুহাম্মদের সা অনাথ হওয়ার পেছনে আল্লাহর প্রজ্ঞা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- নবিজির (সা) ছোটবেলায় সিরিয়ায় যাওয়া। আসলেই কি তা ঘটেছিল? | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- রাখাল বালক মুহাম্মদ (সা) | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন