মিরাজ: বায়তুল মামুর | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-2, মিরাজ সম্পর্কিত একটি বর্ণনা অনুসারে, নবি করিম (সা) বলেছেন, “তখন আমি বায়তুল মামুরকে দেখেছি।” অন্য একটি বর্ণনায় তিনি বলেছেন, “আমি ইব্রাহিমকে (আ) সপ্তম আকাশে দেখতে পেয়েছি, তিনি বায়তুল মামুরের পেছনে পিঠে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।”
মিরাজ: বায়তুল মামুর | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-2 | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
এই দুটি বর্ণনার ঘটনা একই সময়ে ঘটেছিল, নাকি নবিজি (সা) দুটি পৃথক সময়ে বায়তুল ‘মামুরকে দেখেছিলেন তা আমরা সঠিকভাবে জানি না। সাধারণভাবে সিরাহের ক্ষেত্রে, এবং বিশেষভাবে ইসরা ও মিরাজের ক্ষেত্রে, এরকম অনেকবার ঘটেছে। মানবিক সীমাবদ্ধতার কারণেই সাহাবিদের বর্ণনায় কিছুটা তারতম্য খুবই স্বাভাবিক। আমাদের মেনে নিতে হবে, সবার হুবহু একই রকম হওয়া সম্ভব নয়।
যেমনটি আমরা আগে উল্লেখ করেছি, নবিজি (সা) বলেছেন, “বায়তুল ‘মামুর কাবার অনুরূপ একটি ঘর।” আবার অন্য একটি হাদিসে আছে, এটি কাবার ঠিক ওপর বরাবর অবস্থিত; অর্থাৎ যদি তা নিচে পড়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে কাবার ওপরে পড়বে। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বায়তুল মামুর সৃষ্টি করার পর থেকে সেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার প্রবেশ করেন, আর কখনো বেরিয়ে আসেন না। এখন যদি আপনি অঙ্ক কষতে বসেন সেখানে ফেরেশতা আছেন, তাহলে আপনার মাথা খারাপ হওয়ার দশা হবে। আল্লাহ কোরানে বলেছেন, শুধু তিনিই জানেন কতজন সৈন্য (ফেরেশতা) আছে [৭৪:৩১)।

মিরাজ: আসল অবয়বে জিব্রাইল (আ) তারপর নবি করিম (সা) বলেছেন, তিনি ফেরেশতা জিব্রাইলকে (আ) তাঁর আসল অবয়বে দেখতে পেয়েছিলেন, যা তিনি অনেক হাদিসে বর্ণনা করেছেন। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, “জিব্রাইলের (আ) ৬০০ ডানা ছিল। তিনি পুরো দিগন্তজুড়ে বিস্তৃত ছিলেন।” তাবারির একটি হাদিসে আছে, “জিব্রাইলের (আ) ডানার পালক থেকে মুক্তো ও প্রবাল ফোঁটা ফোঁটা করে ঝরে পড়ছিল।” সুতরাং বলা যায়, সিদরাতুল মুনতাহার মতো জিব্রাইলও (আ) কোনো স্থির সৃষ্টি নন।
এখানে উল্লেখ্য, একজন ফেরেশতার সর্বোচ্চ ৬০০ ডানা থাকতে পারে, যা জিব্রাইলের (আ) ছিল, কারণ তিনি ছিলেন ফেরেশতাদের মধ্যে সেরা। তবে বেশির ভাগ ফেরেশতার ডানার সংখ্যা দুই, তিন কিংবা চার। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের সুরা কাতিরে [৩৫১] উল্লেখ করেছেন।
মিরাজ: আল্লাহর প্রধান নিদর্শনসমূহ
ইবনে মাসউদ বলেছেন, নবিজির (সা) জিব্রাইলকে (আ) দেখার বিষয়টি কোরানে উল্লিখিত আছে। “তিনি তো তাঁর প্রতিপালকের অন্যতম নিদর্শনগুলো দেখেছিলেন।” [সুরা নজম, ৫৩:১৮] এই প্রধান নিদর্শনগুলো বলতে আমরা নিচের তিনটি জিনিস বুঝতে পারি।
১। সিদরাতুল মুনতাহা,
২। বায়তুল ‘মামুর,
৩। জিব্রাইলের (আ) আসল অবয়ব।
সিদরাতুল মুনতাহা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে ওপরের স্তরে অবস্থিত বস্তু বা স্থান। বায়তুল ‘মামুর আকাশে অবস্থিত আধ্যাত্মিক কাবা, যেখানে অসংখ্য ফেরেশতা প্রতিনিয়ত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল। অন্যদিকে জিব্রাইল (আ) ফেরেশতাদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাপেক্ষা পছন্দের। এখানে আদম সন্তানদের (মানুষদের) মধ্যে সর্বাপেক্ষা পছন্দের ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা পছন্দের ফেরেশতাকে আসল অবয়বে দেখতে পাচ্ছেন। বর্ণিত আছে, নবি করিম (সা) জিব্রাইলকে (আ) তাঁর আসল অবয়বে এইবারসহ মোট দুবার মাত্র দেখেছিলেন।
আরও পড়ূনঃ
- ইসরা কখন সংঘটিত হয়েছে? | রাতের ভ্রমণ এবং-ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- ইসরার শুরু কোথা থেকে? | রাতের ভ্রমণ এবং-ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আল ইসরা | রাতের ভ্রমণ এবং-ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আকাশ সামা ও বেহেশতের জান্নাত মধ্যে পার্থক্য | রাতের ভ্রমণ এবং-ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-১ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আল মিরাজ: নবিদের সম্ভাষণ | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে-আরোহণ-১ | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন