নবিজির (সা) মদিনায় আগমন | মদিনা যুগের সূচনা, নবিজির (সা) সময়ে সারা মদিনাজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন জনবসতি ছিল না। প্রতিটি উপজাতি ছোট ছোট এলাকায় বাস করত। বসতিগুলো মাঝে মাঝে ছিল মরুভূমি এবং গাছপালা। আগে উল্লেখ করেছি, মদিনার বাইরের প্রান্তে প্রথম বসতিটি যে এলাকায়, তার নাম কুবা। এখন মদিনা শহর এত বড় হয়েছে যে এর সীমানা কুবার বাইরেও অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
নবিজির (সা) মদিনায় আগমন | মদিনা যুগের সূচনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
নবি করিম (সা) ও আবু বকর (রা) কুবা পর্যন্ত এসে আলি (রা), আয়েশা (রা) ও আসমার (রা) জন্য প্রায় এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেন । সবাই এসে পৌঁছলে তাঁরা একসাথে মদিনা শহরের ভেতরে প্রবেশ করেন। দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন পাঁচ শতাধিক আনসার সুসজ্জিত হয়ে কুবায় গিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে নবিজিকে (সা) মদিনায় নিয়ে আসেন।
[প্রাসঙ্গিক বিষয়: নবিজির (সা) মদিনায় প্রবেশ নিয়ে একটি বিখ্যাত কাহিনি প্রচলিত আছে। জানা যায়, শহরে প্রবেশের সময় সেখানে ছোট ছোট মেয়েরা গান। ধরেছিল, “তালা আল-বদরু আলাইনা, মিন সানিয়াত আল-ওয়াদা”; অর্থাৎ আমাদের মাথার ওপর পূর্ণচাঁদ উঠেছে, এসেছে আল-ওয়াদা উপত্যকা থেকে। তবে এই ঘটনাটি হিজরতের সময়ে ঘটেনি। কারণ আল-ওয়াদা উপত্যকাটি মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার রাস্তার মধ্যে পড়ে না। প্রকৃতপক্ষে, উপত্যকাটি মদিনা থেকে মক্কা যেদিকে (দক্ষিণ) ঠিক তার বিপরীত (উত্তর) দিকে অবস্থিত। যদি এই ঘটনা ঘটেও থাকে তবে তা তাবুকের যুদ্ধের পরে ৯ম হিজরিতে হতে পারে; কিন্তু কোনোভাবেই হিজরতের সময়ে নয়।]

আনসাররা নবিজিকে (সা) নিয়ে মদিনা শহরে প্রবেশ করলেন। এখন প্রত্যেক আনসারই চাইছেন, যে নবিজি (সা) তাঁদের বাড়িতে গিয়ে উঠুক এবং সেখানে বাস করুক। এ তো এক মহা সমস্যা; সবাইকে তো সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, নবিজির (সা) উটটিকে নিজের মতো করে এগিয়ে যেতে দেওয়া হবে, সে যেতে যেতে যখানে গিয়ে বসবে, সেই স্থানটি যার বাড়ির সবচেয়ে কাছে, নবিজি (সা) তাঁর সঙ্গেই বসবাস করবেন। নবিজি (সা) বলেন, , উটটি যা-ই করুক, আল্লাহ তায়ালাই এর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
উটটি যেতে যেতে একসময় একটি ছোট বাগানে বসে পড়ল। লোকেরা খেজুর শুকানোর কাজে ওই জায়গাটা ব্যবহার করত। সেখানে কয়েকটি গাছ থাকলেও ফাঁকা জায়গাই ছিল বেশি। নবিজির (সা) মনে হলো, আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন তিনি সেই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করুন। উটটি বসে পড়ার পর নবিজি (সা) উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, “উটটি যে স্থানটিতে বসেছে, সেই স্থান থেকে আমার বংশের কে সবচেয়ে কাছাকাছি বাস করে?” তখন খালেদ ইবনে জায়েদ, যিনি আবু আইয়ুব আল- আনসারি হিসেবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন, বললেন, “হে আল্লাহর রসুল! আমি বনু নাজ্জার গোত্রের একজন।
[উল্লেখ্য, মদিনায় নবিজির (সা) দূর সম্পর্কের বেশ কিন্তু আত্মীয় ছিল, কারণ তাঁর প্রপিতামহী ছিলেন মদিনার বনু নাজ্জার গোত্রের।) আত্মীয়তার ক্ষেত্রে আবু আইয়ুব নবিজির (সা) ৬ষ্ঠ কাজিন। আমরা প্রথম দিকের পর্বগুলোতে আলোচনা করেছি, আরবরা নিজ নিজ বংশলতিকা অনেক প্রজন পর্যন্ত প্রায় মুখস্থ করে রাখত। সুতরাং আত্মীয়তার কারণেই নবিজি (সা) আবু আইয়ুবের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এ থেকে আমরা আত্মীয়স্বজনদের অধিকারের বিষয়টিও দেখতে পাই ।
আরও পড়ূনঃ