মদিনায় হিজরত: সুহায়েব আল-রুমি | মদিনায় প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরত, সুহায়েব আল-রুমি ছিলেন সাহাবিদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যিনি ল্যাটিন ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারতেন। নামের শেষে ‘রুমি’ থাকলেও তিনি জাতিগতভাবে রোমান ছিলেন না। তিনি ছিলেন উত্তর আরবের একটি গোত্রের লোক। জাহেলি যুগে কোনো এক যুদ্ধে কেউ তাঁর মালিকানা পেয়ে তাঁকে রোমানদের কাছে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। তারপর তিনি রোমানদের মাঝে। বেড়ে ওঠেন। তাঁর গায়ের রং ছিল কিছুটা লালবর্ণের। সেজন্য লোকেরা তাঁকে “সুহায়ের আল-রুমি’ বা রোমান সুহায়ের নামে ডাকত।” তিনি একটু ভিন্নধর্মী বাচনভঙ্গিতে আরবি বলতেন ।
মদিনায় হিজরত: সুহায়েব আল-রুমি | মদিনায় প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
সুতরাং বলা যেতে পারে, সুহায়েব জাতিগতভাবে আরব হলেও সাংস্কৃতিকভাবে ছিলেন একজন রোমান। তাঁর রোমান মনিব একসময় তাঁকে এক আরবের কাছে বিক্রি করে দেয়। মালিকানা বদলের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত তাঁর আশ্রয় হয় আয়েশার (রা) দূর সম্পর্কের আত্মীয় আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের বাড়িতে। একজন মুক্ত/স্বাধীন মানুষ হওয়ার প্রত্যয়ে সুহায়ের অনেক পরিশ্রম করেন এবং শেষ পর্যন্ত একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান।
সুহায়েবও হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রথমে তিনি তা গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। মক্কার মতো একটি ছোট শহরে প্রত্যেকের ওপর প্রত্যেকের নজর ছিল। আপনি দেশ ছেড়ে চলে যান, তবে আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস, খাবার, পানি ইত্যাদি গোছাতে হবে। তা কারও না কারও চোখে পড়বেই। দেশত্যাগের বিষয়টি গোপন রাখা ছিল খুব কঠিন ।

সুহায়ের হিজরতের জন্য যাত্রা করছেন এই খবর পেয়ে কুরাইশরা তাঁকে শহরের উপকণ্ঠে থামানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা তাঁকে ঘিরে ধরে। সুহায়েব খাপ থেকে তিরধনুক বের করে বললেন, “হে কুরাইশ সম্প্রদায়। আমার কাছে ৪০টি তির আছে। আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, আমি এই ৪০টি তিরের সব ব্যবহার করার আগ পর্যন্ত তোমাদের কেউই আমার কাছে ঘেঁষতে পারবে না। আর এই হলো আমার তলোয়ার। আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, তোমাদের মধ্যে কেউ আমাকে আঘাত করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে প্রথমে আঘাত করি।”
কুরাইশরা এখন কী করবে তা ভেবে পেল না। সুহায়েবই একটা সমাধান বের করলেন। তিনি তাদের বললেন, “আমার সব সম্পদ কোথায় লুকিয়ে রেখেছি তা যদি আমি তোমাদের জানিয়ে দেই?” সুহায়েবের কথাটির অর্থ হলো, “আমি যদি বলি আমার সমস্ত সম্পদ কোথায়, তাহলে কি তোমরা আমাকে যেতে দেবে?’ কুরাইশরা বলল, “ঠিক আছে, আমরা তাতে রাজি আছি।”
সুহায়েব তাঁর সম্পদ কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন তা তাদের বিস্তারিতভাবে বলে দিলেন। ফলে তিনি একদম কপর্দকশূন্য হয়ে শুধু পরনের কাপড়টি নিয়ে মদিনায় গিয়ে পৌঁছলেন। মক্কায় অঢেল ধনসম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি মদিনায় গিয়ে নতুন জীবন শুরু করেন। নবিজি (সা) তাঁকে মদিনায় দেখতে পেয়ে সানন্দে বলেন, “হে সুহায়েব! আল্লাহ তোমার সম্পর্কে কোরানে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন: ” “আর মানুষের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার সবকিছু বিসর্জন দেয়।
আর আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদেরকে বড় দয়া করেন।” [সুরা বাকারা, 2:207) নবিজি (সা) আরও বলেন, “হে আবা ইয়াহিয়া (সুহায়েবের ডাক নাম)! তোমার লেনদেন সফল হয়েছে! তোমার লেনদেন সফল হয়েছে!” সুহায়েব কিন্তু নবিজিকে (সা) তখনও কিছু বলেননি। কিন্তু তিনি না বললে কী হবে, সুহায়েব কী করেছেন তা জিব্রাইল (আ) ঠিকই নবিজিকে (সা) ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ূনঃ
- কিনদা উপজাতি | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- বনু শায়বান ইবনে সালাবা | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- ইয়াসরিনের একটি ছোট উপজাতি: খাজরাজ | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- খাজরাজরা কেন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- খাজরাজের কাছে দাওয়াত থেকে শিক্ষণীয় | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন