মসজিদুন নববির ছাদ | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ, পরবর্তী বড় ঘটনাটি সংঘটিত হয় সংবিধান তৈরির কয়েক মাস পরে। এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি। আগে যেমনটি বলেছি, সিরাহ অনেক ধারাবাহিক খণ্ডচিত্রের মতো, সেখানে শুধু প্রধান ঘটনাগুলোই সন্নিবেশিত হয়েছে। বড় ঘটনাগুলোর মাঝে সংঘটিত ছোট ছোট ঘটনার পর্যায়ক্রমিক বিবরণ আমাদের জানা নেই । সিরাহগ্রন্থগুলোতে উল্লিখিত পরবর্তী বড় ঘটনাটি হলো কেবলার পরিবর্তন, তা ঘটে নবিজির (সা) মদিনায় হিজরত করার ১৫-১৬ মাস পর। এই ঘটনায় অনেক কারণে একটি ছোটখাটো সংকট সৃষ্টি হয়েছিল:
সম্ভবত এর মূল কারণটি হলো, এই প্রথম আল্লাহ তায়ালা তাঁর দেওয়া আগের কোনো বিধান বাতিল বা রহিত করেন। ‘নাসখ’ বা রহিতকরণের ধারণাটি সেই সময় মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের জন্যই ছিল নতুন। নাসখ অর্থ আল্লাহ একটি বিধান দেওয়ার পর ওই বিষয়ে আবার নতুন একটি বিধান দিতে চাইলে তিনি আগের বিধানটি বাতিল বা রহিত করেন। ‘উসুল আল ফিকহে” এই বিষয়টির বিশদ ব্যাখ্যা আছে।
নাসথের একটি ক্লাসিক উদাহরণ হলো: আল্লাহ কোরানে নাজিল করেছিলেন, কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে পুনরায় বিয়ে করার জন্য তাঁকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে [সুরা বাকারা, 2:280]। কিছু সময় পরে আল্লাহ অপেক্ষার মেয়াদ এক বছরের পরিবর্তে ৪ মাস ১০ দিন করেন [সুরা বাকারা, ২:২৩৪]। এখানে দেখা যাচ্ছে, কোরানে এই বিষয়ে দুটি আপাত-সাংঘর্ষিক আয়াত রয়েছে। এটি আসলে কোনো অসংগতি নয়, বরং নাসথের একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ। এখানে কোনো বৈপরীত্য নেই, কারণ আমরা বাতিল হওয়া বিধানটি বাস্তবায়ন করি না।
কেবলার পরিবর্তন মুসলিমদের জন্য নাসখের প্রথম উদাহরণ।

মসজিদুন নববির ছাদ | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
কেবলা পরিবর্তনের পরে মসজিদুন নববির পেছনের অংশটি সামনের অংশে পরিণত হয় আর সামনের অংশটি পেছনে চলে যায়। তারপর নবিজি (সা) মসজিদটির পেছনের অংশটিকে (যা আগে সামনের অংশ ছিল) ছাদ দিয়ে ঢেকে দিয়ে সেখানে একটি তৈরি করার জন্য সাহাবিদের নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, মসজিদটিতে প্রথমে ছাদ ছিল না। খেজুর গাছের কিছু ডালপালা ওপরের দিকে লাগানো ছিল, যা পানি আটকাতে পারত না। মসজিদের পানিরোধক ছাদ আরও অনেক পরে তৈরি করা হয়েছিল।
মদিনায় হিজরতকারী মুহাজিরদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকলে আনসারদের পক্ষে সবাইকে আশ্রয় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অতিরিক্ত আশ্রয়স্থলের প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই সাথে নতুন ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ফলে নবিজি (সা) মসজিদের ভেতরে পেছনের দিকটিতে সবার জন্য উন্মুক্ত গণআশ্রয়স্থল নির্মাণের ব্যবস্থা করেন। এই আশ্রয়স্থলই পরবর্তী সময়ে ‘সুফা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। সেখানে অবস্থানকারী সাহাবিদের ‘আহলে আল-সুফ্ফা’ (সুফ্ফার লোক) বলা হতো।
আরও পড়ুনঃ