মহানবি মুহাম্মদের জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন, মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্মের বিষয়ে অনেক কিংবদন্তি ও কাহিনি প্রচলিত আছে। এগুলোর মধ্যে শুধু একটিকেই একাডেমিকভাবে সঠিক বলে ধরা যায়। বাকি সব কেবলই কল্পকাহিনি। সত্যি বলতে কী, মহানবির (সা) মহিমা প্রকাশ করার জন্য আমাদের মিথ্যা কাহিনি বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সত্যি ঘটনাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। প্রথম দিকের গ্রন্থগুলোতে তাঁর জন্ম সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় পরবর্তী যুগে তাঁর জন্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো অনেক বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো কোথা থেকে এসেছে, তা সত্যিই অবাক করার মতো ব্যাপার।
মহানবি মুহাম্মদের জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
ইবনে ইসহাক ছিলেন সিরাহর ওপর প্রথম বিস্তৃতভাবে বর্ণনাকারী গ্রন্থের লেখক। তাঁর কথা অনুসারে, তিনি নবিজির (সা) জীবনের সব বিষয়ের ওপরই লিখেছেন। তবু তাঁর বইয়ের আকার মাত্র ১০-১৫ খণ্ড। আরও ৭০০ বছর পরে লেখা জীবনীগ্রন্থের আকার ইবনে ইসহাক লিখিত গ্রন্থের চেয়ে কলেবরে পাঁচ গুণ বড়। দেখা গেল, সিরাহর মধ্যে অনেক নতুন নতুন কাহিনি ঢুকে গেছে: যেমন: (১) মুহাম্মদ (সা) সুন্নতে খাতনা জন্ম নিয়েছিলেন; (২) তিনি জাহ করেই সেজদায় পড়েছিলেন; (৩) তিনি জন্মগ্রহণ করেই আকাশের দিকে আঙুল তুলে ‘শাহানা’ বলেছিলেন, ইত্যাদি ।
আমাদের এই ধরনের কল্পকাহিনি আবিষ্কার করার প্রয়োজন নেই। মহানবি মুহাম্মদ (সা) ছিলেন মানবকুলের সেরা। তা প্রমাণের জন্য তাঁর জীবনের তথ্যপূর্ণ ঘটনাগুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমরা যখন আমাদের নবিকে (সা) আরও মহিমান্বিত করার জন্য বিভিন্ন কল্পকাহিনির আশ্রয় নিই, তখন তা আমাদের ধর্মের মর্যাদা মোটেও বাড়ায় না। ইবনে ইসহাক ওপরের তিনটি ঘটনার কোনোটিরই উল্লেখ করেননি। তাহলে ৭০০-৮০০ বছর পরে আরেক জীবনীকার কীভাবে এতসব ঘটনার বিবরণ জানতে পারলেন? আমিনা যখন তাঁর সন্তান প্রসব করেন।
সেটার সাক্ষীই বা কে? এ ব্যাপারে একটি মাত্র অথেনটিক হাদিস আছে যাতে নবিজি (সা) নিজেই বলেছেন, “যখন আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন (বা গর্ভে ধারণ করেছিলেন) তখন তিনি তাঁর কাছ থেকে একটি আলোকরেখা বিচ্ছুরিত হতে দেখেছিলেন, যার বিস্তৃতিতে বুসরা শহরের (সিরিয়ায় অবস্থিত, সৌদি আরবের সীমানার কাছাকাছি) প্রাসাদগুলো পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠেছিল।”

এখানে সিরিয়ার একটি স্থানের নাম উল্লেখ করার কারণ হতে পারে এই জন্য যে সিরিয়া ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি আশীর্বাদপুষ্ট ও পবিত্র স্থান। এর আরেকটি নাম ‘আল-শাম’। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের সুরা বনি ইসরাইলে উল্লেখ করেছেন ‘মসজিদুল আকসা পরিবেশ তাঁরই (আল্লাহর) আশীর্বাদপূত? (১৭:১]। নবিজিও (সা) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে শাম ইসলামের দুর্গ হিসেবে থেকে যাবে। আশ্চর্যজনকভাবে, আরব উপদ্বীপের বাইরে আল-শাম, এবং এর শহর বুসরা, ছিল মুসলিমদের জয় করা প্রথম এলাকা।
এখানে মনে রাখতে হবে, ইসলাম আসার আগে দামেস্ক ছিল রোমানদের ব্যাবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার কেন্দ্রস্থল। সেই দামেস্কই যে আরব সভ্যতার মূল কেন্দ্র হবে তা আরবদের পক্ষে সেই সময় চিন্তা করাও অসম্ভব ছিল। সুতরাং মা আমিনার থেকে বিচ্ছুরিত সে আলোই আমাদের এক প্রকার ইঙ্গিত দেয় যে ইসলাম সিরিয়া জয় করতে চলেছে, যা অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটেছিল আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে, নবিজির (সা) জন্মের সময় নাকি পৌত্তলিকদের মন্দিরগুলো ভেঙে পড়েছিল, যা বাস্তবিক সত্য বলে মেনে নেওয়া দুষ্কর। অনেক স্কলারের মতে, নবিজির (সা) জন্মগ্রহণের সময় থেকে জিনদের নভোমণ্ডলে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তার আগ পর্যন্ত ফেরেশতাদের কথা শোনার জন্য জিনদের নভোমণ্ডলে প্রবেশের অনুমতি ছিল। আল্লাহ তায়ালা কোরানে উল্লেখ করেছেন: আগে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে কিছু শোনার প্রত্যাশায় বসে থাকতাম; কিন্তু আমাদের এখন কেউ যদি (এসব ঘাঁটিতে বসে) কিছু শোনার চেষ্টা করে তাহলে সে তার ওপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডের সন্মুখীন হয়।” (সুরা জিন, ৭২:৯] সঠিক মতামতটি হচ্ছে, এই ঘটনাটি নবিজির (সা) জন্মের সময় ঘটেনি তবে তাঁর নবুয়তের শুরুর সময় থেকে নভোমণ্ডল শয়তানদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইবনে ইসহাক আরও উল্লেখ করেছেন, নবিজির (সা) জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর সুন্নতে খতনা করা হয়। পিতামহ আবদুল মুত্তালিব এ উপলক্ষে একটি ভোজের আয়োজন করেন।
তিনিই ‘মুহাম্মদ’ নামটি রেখেছিলেন, যা সেই সময় খুব একটা প্রচলিত নাম ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, ওই নামে মক্কায় তখন আর কেউ ছিল না। লোকেরা আবদুল মুত্তালিবকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আপনি কেন তার নাম। মুহাম্মদ রাখলেন?” উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি চাই সে ভূমণ্ডলের লোকদের দ্বারাও প্রশংসিত হোক, আবার নভোমণ্ডলের লোকদের দ্বারাও প্রশংসিত হোক।” মুহাম্মদের (সা) জন্মের সংবাদটি তাঁর চাচা আবু লাহাবের কাছে পৌঁছে একজন ক্রীতদাসীর মাধ্যমে। আবু লাহাব সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে খবরটি বয়ে নিয়ে আসা ক্রীতদাসীকে মুক্তি দিয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায়, ভাতিজা মুহাম্মদের (সা) জন্মে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন।
আরো পড়ূনঃ
- হাতির বছর উপসংহার | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
- প্রাক-ইসলামি আরব: জাহেলি আরবরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করত | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
- মহানবি মুহাম্মদকে (সা) আরব ভূখণ্ডে প্রেরণের পেছনে প্রজ্ঞা | মহানবি-মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন
- মহানবি মুহাম্মদের পিতামাতা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী হযরত-মুহাম্মদ সাঃ জীবন
- মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্মের সময়কাল | মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্ম | মহানবী-হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন