শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস নিয়ে আজকের আলোচনা। সেই সাথে এখানে আমরা আলোচনা করবো শবে কদরের রাতে নিয়ে। পাশাপাশি থাকবে শবে কদরের গুরুত্ব, শবে কদরের আলামত, শবে কদরের ইতিহাস, দোয়া, শবে কদরের ফজিলত, শবে কদরের আমল ও শবে কদরের ফজিলত ও আমল, শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর, ফার্সিতে: شب قدر‎‎, আরবি তে لیلة القدر‎‎। এর অর্থ “অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত” বা “পবিত্র রজনী”। ফার্সি ভাষায় “শাব” এর অর্থ রাত্রী। আবার আরবি ভাষায় “লাইলাতুল” অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী। অন্যদিকে ‘কদর’ শব্দের অর্থ মর্যাদা, সম্মান, মহাসম্মান। এ অন্য অর্থ রয়েছে, যা হল ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এ রাতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয়। পাশাপাশি এই রাতেই মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস

উপরোক্ত বিবেচনায় সকল মুসলমানদের কাছে, এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে বিবেচিত। আল কুরআন এর বর্ণনা অনুসারে, মহান আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং সকল রজনীর মধ্যে এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, প্রতিবছর মাহে রমজানের এই মহিমান্বিত রজনী, বা লাইলাতুল কদর রাত্রি মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে, মুসলিমগণ তারা বিশ্বাস করে।

পবিত্র কুরআনে লাইলাতুল ক্বদর-এর ফযীলত:

সুরা আল-কদর [ক্বদর]: ১-৫

وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى (إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ تَنَزَّلُ الْمَلاَئِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ سَلاَمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ)

قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ مَا كَانَ فِي الْقُرْآنِ (مَا أَدْرَاكَ) فَقَدْ أَعْلَمَهُ وَمَا قَالَ (وَمَا يُدْرِيكَ) فَإِنَّهُ لَمْ يُعْلِمْهُ

আর মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কী? মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশত্রুমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’’ (আল-কদর [ক্বদর]ঃ ১-৫)

6 3 শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, নামাজের নিয়ম ও দোয়া

ইবনু ‘উয়ায়না (রহ.) বলেন, কুরআন মাজীদে যে স্থলে (مَا أَدْرَاكَ) উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবহিত করেছেন। আর যে স্থলে (وَمَا يُدْرِيكَ) উল্লেখ করা হয়েছে তা তাঁকে অবহিত করাননি।

রোযা রোজা ফার্সি روزہ রুজ়ে সাউম বা সাওম আরবি صوم স্বাউম্‌ অর্থঃ সংযম সিয়াম Roja Ramzan Ramadan 15 শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস:

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ১:

বুখারি, হাদিস নং : ৬৭২
মিশকাত শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস নং ২:

মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯
রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ৩

বুখারি, হাদিস নং: ২০১৭
একদা হযরত উবায়দা (রা.) নবী করীম (সা.) কে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজী সেই সাহাবিকে বললেন রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোকে তালাশ করো।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ৪

মুসলিম, হাদিস নং : ৮২৩
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ লাইলাতুল কদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজনের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। তাই ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানের রাতগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ৫

মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭
ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেন, যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হল। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ৬

তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫১
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি তবে আমি কি করব? তখন রাসূল (সা.) আমাকে এই দুয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’।

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ৭

আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪
২০১৪. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (৩৫)

শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ৮

সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ৭৬০; সহিহ বোখারি: হাদিস নং ২০১৪
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে।

এছাড়া:

  •  রাসূল (সা.) বলেন, শবে কদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই যেন ক্ষ্যান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফজিলতের উপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকেই কম গুরুত্ব না দেয়া এবং পুরোটাই ইবাদাতের মাধ্যমে শবে কদর অন্বেষণ করা।
  • শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (তাফসিরে মাজহারি)।

রোযা রোজা ফার্সি روزہ রুজ়ে সাউম বা সাওম আরবি صوم স্বাউম্‌ অর্থঃ সংযম সিয়াম Roja Ramzan Ramadan 9 শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে কদরের দোয়া:

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

কোরআন নাজিলের মাসে ক্ষমা ও রহমত কামনার কোরআনি দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া যেতে পারে। তাহলো-

১. رَبَّنَا اكْشِفْ عَنَّا الْعَذَابَ إِنَّا مُؤْمِنُونَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানাকশিফ আন্নাল আজাবা ইন্না মুমিনুন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপর থেকে আপনার শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।’ (সুরা দুখান : আয়াত ১২)

২. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)

৩. رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)

৪. رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’

অর্থ : ‘(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

৫. رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’

অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)

৬. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

৭. رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)

৮. سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ

উচ্চারণ : ‘সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।’

অর্থ : ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)

৯. رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا

উচ্চারণ : ‘ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)

১০. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

১১. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)

১২. رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)

আল্লাহর রহমত পেতে এ দোয়াগুলোও বেশি বেশি পড়া-

১৩. رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১‌)

অর্থ : ‘হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।’

১৪. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি ওয়া লা তাঝআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাজিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।’

১৫. رَبِّ بِمَا أَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًا لِّلْمُجْرِمِينَ

উচ্চারণ : রাব্বি বিমা আনআমতা আলাইয়্যা ফালান আকুনা জ্বাহিরাল লিলমুঝরিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৭)

১৬. বাবা-মার জন্য দোয়া করা-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ২৪)

১৭. اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।

২৭ রমজানের রাত ‘লাইলাতুল কদর’

রমজানের ২৭ তারিখ অর্থাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাত লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাও অন বেজোড় রাতের চেয়ে বেশি। এ সম্পর্কেও হাদিসের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছা করো, সে যেন তা ২৬ রমজান দিবাগত রাত তথা ২৭ রমাজনে অনুসন্ধান করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

রোযা রোজা ফার্সি روزہ রুজ়ে সাউম বা সাওম আরবি صوم স্বাউম্‌ অর্থঃ সংযম সিয়াম Roja Ramzan Ramadan 3 শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে-কদরের নামাজের নিয়ত:

নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্‌রি নফ্‌লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।

অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম:

লাইলাতুল কদরে বিশেষ কোনও নামাজের পদ্ধতি নেই। লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ দুই রাকাত করে যত সুন্দর করে, যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি পড়তে পারবেন। এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত করবেন। বেশি বেশি দোয়া পড়বেন। ইস্তেগফার পড়বেন। তওবা করবেন।

 

শবে কদরের ইতিহাস:

খৃষ্টীয় ৬১০ সালে, শবে কদরের, বা পবিত্র রাতে, মক্কার নূর পর্বতের, হেরা গুহায়, ধ্যানরত মহানবী, হযরত মুহাম্মদের সঃ নিকট, সর্বপ্রথম কোরআনের ওহি নিয়ে আসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। সর্বপ্রথম তার নিকট, কুরআনের প্রথম সূরা, বা সুরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। এই রাতেই আল্লাহর ফেরেশতা জীবরাই আমীন এর নিকট, সম্পূর্ণ কোরআনটি অবতীর্ণ হয়। জীবরাইল আমীন পরবর্তিতে ২৩ বছর ধরে, হজরত মুহাম্মদ সা: এর নিকট, তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।

মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাত বিষয়ে হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এমনকি আল কোরআনে, সূরা ক্বদর নামে একটি স্বতন্ত্র ও পরিপূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। সূরা ক্বদরে শবে কদরের রাত্রিকে, হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ রয়েছে।

ইসলাম ধর্ম মতে, হজরত মুহাম্মদ সা: এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ, দীর্ঘায়ু লাভ করার কারণে, বহু বছর আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। কোরান ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা – আইয়ুব, জাকরিয়া , হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন, প্রতিজনই অন্তত ৮০ বছর স্রষ্টার উপাসনা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তারা তাদের জীবদ্দশায় কোন প্রকার পাপ কাজে নিয়জিত হননি। কিন্তু হজরত মুহাম্মদ সা: এর থেকে শুরু করে, তার পরবর্তী উম্মতগণ আয়ু অনেক কম হওয়ায়, তাদের পক্ষে, পূর্ববর্তীয়ের মতো স্রষ্টার আরাধনা করে, সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভবর নয়। এই কারণে তাদের মধ্যে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপ বিবেচনা করে, তাদের জন্য সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের ভাষ্যমতে জানা যায়।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment