সুহায়েব আল-রুমি (রা) ) | কুরাইশদের বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

সুহায়েব আল-রুমি (রা) ) | কুরাইশদের বিরোধিতা-২, আম্মার, সুহায়েব ও বেলাল—এই তিনজন ছিলেন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সিরাহের বইগুলোতে সব সময় তাঁদের কথা একসঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে। একবার কয়েকজন কুরাইশদের নেতা (আবু জেহেল, উমাইয়া ইবনে খালাফ প্রমুখ) নবিজির (সা) সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিল। নবিজি (সা) এই ভেবে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।

 

সুহায়েব আল-রুমি (রা) ) | কুরাইশদের বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সুহায়েব আল-রুমি (রা) ) | কুরাইশদের বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আলোচনা শুরু হলে আবু জেহেল লক্ষ করল, তার সাথের অন্য কুরাইশ নেতারা সহানুভূতির সুরে কথা বলছে। সেই সময় আম্মার, সুহায়ের ও বেলাল পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবু জেহেল সঙ্গে সঙ্গে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মন্তব্য করল, “হে মুহাম্মদ! এটা কীভাবে সম্ভব যে তুমি সত্য পথে আছ, আর এইসব লোক আমাদেরও আগে তোমাকে অনুসরণ করা শুরু করেছে? তুমি যদি চাও যে আমরা তোমাদের ধর্ম গ্রহণ করি, তাহলে তোমাকে এই লোকদেরকে ত্যাগ করতে হবে।”

এখানে আবু জেহেল মূলত বোঝাতে চাইছিল, যেখানে এইসব নীচ প্রকৃতির ক্রীতদাসরা মুহাম্মদের (সা) ধর্মের অনুসরণ করছে, সেখানে উত্তম ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা কীভাবে একই দলে থাকতে পারে? এটা অবশ্যই জাহেলি মানসিকতা। আল্লাহ এ বিষয়ে এই আয়াতটি নাজিল করেন: “যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টিলাভের জন্য ডাকে তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিও না। তাদের কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয়, আর তোমার কোনো কর্মের জাবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে তুমি তাদের তাড়িয়ে দেবে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

যদি তাড়িয়ে দাও তবে তুমি জালিমদের (অন্যায়কারীদের) অন্তর্ভূক্ত হবে।” [সুরা আনআম, ৬:৫২] এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর রসুলকে (সা) বলছেন, ‘তুমি যদি আম্মার, সুহায়ের ও বেলাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাঁদের ওপর অভিজাত কুরাইশদেরকে বেছে নাও, তবে তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”

এখন আসা যাক সুহায়ের আল-রুমির কাহিনিতে। তাঁকে আল-রুমি (রোমান) নামে ডাকা হতো বটে, কিন্তু তিনি রোমান বংশধারার কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন ইরাকি বালক যাঁকে বন্দি করে রোমে পাঠানো হয়েছিল এবং সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি আরবি ভুলে গিয়েছিলেন, কিন্তু লাতিন ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। তিনি যে একজন আরব, তা তিনি জানতেন। তাই তিনি রোম থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কার আবদুল্লাহ ইবনে জুদানের কাছে বিক্রি হয়ে যান।

 

সুহায়েব আল-রুমি (রা) ) | কুরাইশদের বিরোধিতা-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইবনে হুনান তাঁর ক্রীতদাসদের প্রতি অন্য মনিবদের তুলনায় বেশি। সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই সুহায়েবকে অতটা নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। লেখাপড়া জানার কারণে সুহায়েব প্রকৃতপক্ষে তাঁর মনিবের ব্যবসায় ম্যানেজারের মতোই কাজ করছিলেন। ফলে ধীরে ধীরে তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে ওঠেন। ইবনে জুদানের মৃত্যুর পরে সুহায়েব মুক্ত হয়ে যান, কারণ ইবনে জুদান ‘উইল’-এ লিখে রেখে গিয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পরে সুহায়েব মুক্তি পাবেন। এভাবে সুহায়েব ক্রীতদাস থেকে ‘মাওলা’ হয়ে যান । সুহায়েব আল-রুমির মদিনায় হিজরত করার ঘটনাটিও ছিল বেশ রোমাঞ্চকর, যা আমরা পরবর্তী কোনো পর্বে আলোচনা করব । 

আরো পড়ূনঃ

Leave a Comment