সূরা ক্বাফ আজকের ভিডিও এর বিষয়। “সূরা ক্বাফ [ Surah Qaf ]” আল-কুরআনের [ Al-Quran ] ৫০তম সূরা বা অধ্যায় [ Surah/Chapter 50], এর আয়াত সংখ্যা ৪৫টি। “সূরা ক্বাফ [ Surah Qaf ]” মাক্কী সূরা [ Makki Surah ]।
সূরা ক্বাফ
সূরা ক্বাফ (আরবি ভাষায়: سورة ق) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কুরআনের ৫০তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪৫টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ৩টি। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আখিরাত। সূরার প্রথম বর্ণটিই এর নাম হিসেবে গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ এটি সেই সূরা যা ক্বাফ বর্ণ দিয়ে শুরু হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহ থেকে জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’ঈদের নামাযে এ সূরা পড়তেন । উম্মে হিশাম ইবনে হারেসা নাম্নী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিবেশিনী এক মহিলা বর্ণনা করেছেন যে, প্রায়ই আমি নবীর মুখ থেকে জুমআর খুতবায় এ সূরাটি শুনতাম এবং শুনতে শুনতেই তা আমার মুখস্থ হয়েছে।
অপর কিছু রেওয়ায়াতে আছে যে, তিনি বেশির ভাগ ফজরের নামাযেও এ সূরাটি পাঠ করতেন। এ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, নবীর দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। সে জন্য এর বিষয়বস্তু অধিক সংখ্যক লোকের কাছে পৌছানোর জন্য বারবার চেষ্টা করতেন।
সূরাটি মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করলে এর গুরুত্বের কারণ সহজেই উপলব্ধি করা যায়। গোটা সূরার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আখেরাত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা মুয়াযযমায় দাওয়াতের কাজ শুরু করলে মানুষের কাছে তার যে কথাটি সবচেয়ে বেশি অদ্ভুত মনে হয়েছিল তা হচ্ছে, মৃত্যুর পর পুনরায় মানুষকে জীবিত করে উঠানো হবে এবং তাদেরকে নিজের কৃতকর্মের হিসেব দিতে হবে। লোকজন বলতো, এটা তো একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। এরূপ হতে পারে বলে বিবেক-বুদ্ধি বিশ্বাস করে না।
আমাদের দেহের প্রতিটি অণু-পরমাণু যখন মাটিতে মিশে বিলীন হয়ে যাবে তখন হাজার হাজার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐসব বিক্ষিপ্ত অংশকে পুনরায় একত্রিত করে আমাদের দেহকে পুনরায় তৈরি করা হবে এবং আমরা জীবিত হয়ে যাব তা কি করে সম্ভব? এর জবাবে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এ ভাষণটি নাযিল হয়। এতে অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট বাক্যে একদিকে আখেরাতের সম্ভাব্যতা ও তা সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে প্রমাণাদি পেশ করা হয়েছে।
অপরদিকে মানুষকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা বিস্মিত হও, বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী মনে করো কিংবা মিথ্যা বলে মনে করো তাতে কোন অবস্থায়ই সত্য, পরিবর্তিত হতে পারে না। সত্য তথা অকাট্য ও অটল সত্য হচ্ছে এই যে, তোমাদের দেহের এক একটি অণু-পরমাণু যা মাটিতে বিলীন হয়ে যায় তা কোথায় গিয়েছে এবং কি অবস্থায় কোথায় আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত আছেন। বিক্ষিপ্ত এসব অণু-পরমাণু পুনরায় একত্রিত হয়ে যাওয়া এবং তোমাদেরকে ইতিপূর্বে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ তা’আলার একটি ইংগিতই যথেষ্ট।
অনুরূপভাবে তোমাদের ধারণাও একটি ভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয় যে, এখানে তোমাদের লাগামহীন উটের মত ছেড়ে দেয়া হয়েছে, কারো কাছে তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে না। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ তা’আলা নিজেও সরাসরি তোমাদের প্রতিটি কথা ও কাজ সম্পর্কে এমনকি তোমাদের মনের মধ্যে জেগে ওঠা সমস্ত ধারণা ও কল্পনা পর্যন্ত অবহিত আছেন। তাছাড়া তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের প্রত্যেকের সাথে থেকে তোমাদের সমস্ত গতিবিধি রেকর্ড করে সংরক্ষিত করে যাচ্ছে।
যেভাবে বৃষ্টির একটি বিন্দু পতিত হওয়ার পর মাটি ফুড়ে উদ্ভিদরাজির অঙ্কুর বেরিয়ে আসে ঠিক তেমনি নির্দিষ্ট সময় আসা মাত্র তাঁর একটি মাত্র আহবানে তোমরাও ঠিক তেমনি বেরিয়ে আসবে। আজ তোমাদের বিবেক-বুদ্ধির ওপর গাফলতের যে পর্দা পড়ে আছে তোমাদের সামনে থেকে সেদিন তা অপসারিত হবে এবং আজ যা অস্বীকার করছো সেদিন তা নিজের চোখে দেখতে পাবে। তখন তোমরা জানতে পারবে, পৃথিবীতে তোমরা দায়িত্বহীন ছিলে না, বরং নিজ কাজ-কর্মের জন্য দায়ী ছিলে।
পুরস্কার ও শাস্তি, আযাব ও সওয়াব এবং জান্নাত ও দোযখ যেসব জিনিসকে আজ তোমরা আজব কল্প কাহিনী বলে মনে করছো সেদিন তা সবই তোমাদের সামনে বাস্তব সত্য হয়ে দেখা দেবে। যে জাহান্নামকে আজ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী বলে মনে করো সত্যের সাথে শত্রুতার অপরাধে সেদিন তোমাদের সেই জাহান্নামেই নিক্ষেপ করা হবে। আর যে জান্নাতের কথা শুনে আজ তোমরা বিস্মিত হচ্ছো মহা দয়ালু আল্লাহকে ভয় করে সঠিক পথে ফিরে আসা লোকেরা সেদিক তোমাদের চোখের সামনে সেই জান্নাতে চলে যাবে।
সূরা সূরা ক্বাফ পাঠ ঃ
আরও দেখুনঃ