সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । [ গাভী কুরবানী ] সূরা নং ২ । মাদানী সূরা । আল কুরআন

সূরা বাকারা পর্ব ১,আল বাকারা (আরবি ভাষায়: سورة البقرة) মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের দ্বিতীয় সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ৪০ টি। আল বাকারা সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে।

 

সূরা বাকারা
সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি ।

Table of Contents

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০১)

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০২)

এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
This is the Book (the Qur’ân), whereof there is no doubt, a guidance to those who are Al-Muttaqûn [the pious and righteous persons who fear Allâh much (abstain from all kinds of sins and evil deeds which He has forbidden) and love Allâh much (perform all kinds of good deeds which He has ordained)].

ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
Thalika alkitabu la rayba feehi hudan lilmuttaqeena

YUSUFALI: This is the Book; in it is guidance sure, without doubt, to those who fear Allah;
PICKTHAL: This is the Scripture whereof there is no doubt, a guidance unto those who ward off (evil).
SHAKIR: This Book, there is no doubt in it, is a guide to those who guard (against evil).
KHALIFA: This scripture is infallible; a beacon for the righteous;

০২। এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নাই, ইহা আল্লাহ্‌ ভীরুদের তথা মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক ২৬।

২৬। ‘আল্লাহ্‌ ভীরু বা তাকওয়া অবলম্বনকারী’-এ আরবী শব্দটির অর্থ আল্লাহ্‌ ভীতি। আল্লাহ্‌ ভীতি অর্থ এই নয় যে অপরাধীরা যেভাবে বিচারককে ভয় পায় সেভাবে শুধুমাত্র শাস্তির ভয়ে ভয় করা। তাকওয়ার মূল ভাব হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসা। আর এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। অর্থাৎ মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা আল্লাহ্‌র আদেশকে মেনে চলার বা যা থেকে আল্লাহ্‌ বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকা। আল্লাহ্‌র প্রতি এই ভালবাসাই হচ্ছে সকল কিছুর মূল চালিকাশক্তি।

তাকওয়াকে এভাবে প্রকাশ করা যায়। প্রথমতঃ (১) আল্লাহ্‌কে ভয় করতে হবে ভালবেসে। (২) আল্লাহ্‌ যা অপছন্দ করেন তা থেকে দূরে থাকতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র আইন না ভাঙ্গা, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে না যাওয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আল্লাহ্‌ বারে বারে বলেছেন-মিথ্যা কথা না বলতে, সত্যি কথা বলতে, অন্যকে না ঠকাতে, ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে ইত্যাদি মেনে চলাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র আইন মেনে চলা।

আল্লাহ্‌কে ভালবেসে, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের আশায়, আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের আশায় আমাদের জিহবা (অর্থাৎ কথা বা ভাষা), হাত (অর্থাৎ কাজ, সমাজ ও সংসারের প্রতি),মন ও মেধাকে সংযত করতে হবে। অর্থাৎ নিজেকে কথায়, কাজে, সমস্ত অন্যায় ও অসত্য থেকে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্টি করার জন্য সংযত রাখতে হবে।

(৩) অন্যায়, অসত্য ইত্যাদি থেকে নিজেকে সর্বদা বিরত রাখার ফলে ব্যক্তির চরিত্রে সৎগুণের জন্মলাভ করে, এই গুণাবলীই হচ্ছে ধর্মপরায়ণতার ভিত্তি। এরূপ ব্যক্তি সর্বান্তকরণে অসৎ ও অন্যায় পথ পরিহার করবে এবং নিজের জীবনে ন্যায়, সত্য ও কর্তব্যনিষ্ঠা, ধৈর্য্য প্রভৃতি গুণের প্রতিফলন ঘটাবে। এর জন্য প্রয়োজন সর্বশক্তি দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ-Cause of God is the cause of justice and cause of oppressed। [দেখুন টিকা ৭৪০, আয়াত ৪৭ : ১৭]

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৩)

সূরা বাকারা
সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি ।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৪)

এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।

And who believe in (the Qur’ân and the Sunnah) which has been sent down (revealed) to you (Muhammad Peace be upon him ) and in [the Taurât (Torah) and the Injeel (Gospel), etc.] which were sent down before you and they believe with certainty in the Hereafter. (Resurrection, recompense of their good and bad deeds, Paradise and Hell, etc.).

والَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
Waallatheena yu/minoona bima onzila ilayka wama onzila min qablika wabial-akhirati hum yooqinoona

YUSUFALI: And who believe in the Revelation sent to thee, and sent before thy time, and (in their hearts) have the assurance of the Hereafter.
PICKTHAL: And who believe in that which is revealed unto thee (Muhammad) and that which was revealed before thee, and are certain of the Hereafter.
SHAKIR: And who believe in that which has been revealed to you and that which was revealed before you and they are sure of the hereafter.
KHALIFA: And they believe in what was revealed to you, and in what was revealed before you, and with regard to the Hereafter, they are absolutely certain.

০৪। এবং তোমার নিকট যে প্রত্যাদেশ প্রেরিত হয়েছে তাতে এবং তোমার পূর্বে যা প্রেরিত হয়েছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং [যাদের হৃদয়ে] পরকালের জীবন সম্বন্ধে রয়েছে নিশ্চিত বিশ্বাস ২৮।

২৮। ঈমান বা আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস শুধুমাত্র একটি মৌখিক স্বীকারোক্তি মাত্র নয়। এটি এমন এক বিশ্বাস যা উৎসারিত হয় গভীর বোধ, অবিচল আস্থা, সেই আস্থা ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা থেকে-যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র আদেশ-নির্দেশের প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনের বাস্তব চর্চা এবং নিঃস্বার্থ মানবসেবার মাধ্যমে।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৫)

তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।
They are on (true) guidance from their Lord, and they are the successful.

أُوْلَـئِكَ عَلَى هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
Ola-ika AAala hudan min rabbihim waola-ika humu almuflihoona

YUSUFALI: They are on (true) guidance, from their Lord, and it is these who will prosper.
PICKTHAL: These depend on guidance from their Lord. These are the successful.
SHAKIR: These are on a right course from their Lord and these it is that shall be successful.
KHALIFA: These are guided by their Lord; these are the winners.

০৫। এরাই তাদের প্রভুর নির্দেশিত [সত্য] পথে রয়েছে এবং এরাই সাফল্য লাভ করবে ২৯।

২৯। ‘সফলকাম’ হবে বা ‘উন্নতি’ লাভ করবে অর্থাৎ আল্লাহ্‌র নেয়ামতের অধিকারী হবে। এগুলি সেইসব দুর্লভ চারিত্রিক গুণাবলী যার উল্লেখ পূর্বে করা হয়েছে। অর্থাৎ বান্দা যদি আল্লাহ্‌র হুকুম বা আল্লাহ্‌র আইন মেনে চলে (যথা-সত্য কথা বলে, ন্যায়ের জন্য জিহাদ করে, মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে ইত্যাদি) তবে তার চরিত্রে দুর্লভ গুণাবলীর জন্ম নেবে। বোঝানোর জন্য একটি ছোট উদাহরণ দেয়া গেলো। সত্য কথা বলার অভ্যাস করা আল্লাহ্‌র হুকুম। আমাদের রাসূল (সাঃ) জীবনে কোনওদিন এমনকি নবুয়তের পূর্বেও একটিও মিথ্যা কথা বলেন নাই।

এটাই হচ্ছে আমাদের সর্বপ্রথম এবং প্রধান সুন্নত এবং ফরজ। সত্যবাদীতা এক ধরণের অভ্যাস। এর থেকে যে চারিত্রিক গুণাবলীর জন্ম নেয় তা হচ্ছে সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি। আবার মিথ্যা বলাও একধরণের অভ্যাস। এর থেকে চরিত্রে যে সব দোষের সৃষ্টি হয়-তা হচ্ছে দূর্নীতিপরায়ণতা, অবিশ্বস্ততা, স্বার্থপরতা, অন্যকে ঠকানোর প্রবণতা ইত্যাদি। আত্মার উন্নতি লাভই হচ্ছে আধ্যাত্মিক সফলতার মূল কথা। সুতরাং যারা আল্লাহ্‌র কেতাবে বিশ্বাসী এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করেন আল্লাহ্‌ তাদের আত্মিক উন্নতি দান করেন।

এর ফলে যে সমাজ আল্লাহ্‌র আইন মেনে চলে সে সমাজ শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে। কারণ একটি পাপ অপর একটি পাপকে আকর্ষণ করে, অনুরূপভাবে একটি নেকীর (অর্থাৎ চারিত্রিক গুণাবলীর) বদলায় অপর নেকী বা (চারিত্রিক গুণাবলী) সৃষ্ট হয়।

‘নেকী” একটি বিমূর্ত অর্থজ্ঞাপক শব্দ। কিন্তু আমাদের সমাজে নেকী শব্দটিকে বস্তুগতভাবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন-কোন কোন মৌলভী সাহেবেরা বলে থাকেন-অমুক কাজটি করলে আল্লাহ্‌ ৭০টি নেকী দান করবেন। নেকীকে এরকম বস্তুগতভাবে উপস্থাপন করা যায় না। নেকী হচ্ছে আল্লাহ্‌র সেই বিশেষ নেয়ামত যা আত্মাকে সমৃদ্ধ করে, ফলে আত্মা দুঃখ-কষ্ট ভরা পৃথিবীতে থেকেও দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পায়; আত্মা অপার শান্তির পরশ অনুভব করে।

সেই হিসেবে নেকী হচ্ছে চারিত্রিক গুণাবলী কারণ একমাত্র শুদ্ধ চারিত্রিক গুণাবলীই মানব সন্তানকে লোভ-লালসা ভরা পৃথিবীর উর্ধ্বে স্থাপন করতে পারে। আর ব্যক্তি যখন লোভ-লালসা ভরা পৃথিবীতে থেকেও তার উর্ধ্বে অবস্থান করতে পারে, শুধু তখনই সে বেহেশতি শান্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ, ঈর্ষা-নীচতা আত্মার ভিতরে যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। এই আয়াতে যে তিন শ্রেণীর লোকের কথা বলা হয়েছে, এরা হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৬)

নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না।
Verily, those who disbelieve, it is the same to them whether you (O Muhammad Peace be upon him ) warn them or do not warn them, they will not believe.

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
Inna allatheena kafaroo sawaon AAalayhim aanthartahum am lam tunthirhum la yu/minoona

YUSUFALI: As to those who reject Faith, it is the same to them whether thou warn them or do not warn them; they will not believe.
PICKTHAL: As for the Disbelievers, Whether thou warn them or thou warn them not it is all one for them; they believe not.
SHAKIR: Surely those who disbelieve, it being alike to them whether you warn them, or do not warn them, will not believe.
KHALIFA: As for those who disbelieve, it is the same for them; whether you warn them, or not warn them, they cannot believe.

০৬। যারা ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করে ৩০, তুমি তাদের সতর্ক কর বা না কর, তাদের জন্য উভয়ই সমান, তারা কখনও ঈমান আনবে না।

৩০। এই আয়াতে দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। কাফের শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ্‌র আইন অমান্য করে তাদের। আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য বা হেদায়েত পেতে হলে প্রয়োজন ঐকান্তিক বিশ্বাস ও আন্তরিকতা। আন্তরিকভাবে আল্লাহ্‌র কাছে হেদায়েতের জন্য আকুতি জানাতে হবে। যে আল্লাহ্‌র কাছে আন্তরিকভাবে হেদায়েত বা সত্যপথে চলার নিশানা অনুসন্ধান করে, আল্লাহ্‌র অসীম রহমত তাকে বিধৌত করে।

সত্য পথে চলার নিশানা তাদের নিকট হয় স্পষ্ট প্রতীয়মান। কিন্তু যদি কেউ অহংকারে স্ফীত হয়ে আল্লাহ্‌র আইন (God’s Law) লঙ্ঘন করে, তাকে আল্লাহ্‌ হেদায়েত করেন না। কারণ মানুষই একমাত্র প্রাণী যাকে আল্লাহ্‌ সীমিত আকারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (Limited free will) দান করেছেন। সত্য পথ ও ভুল পথ এর যে কোন একটা পথকে বেছে নেবার স্বাধীনতা একমাত্র মানুষেরই আছে। কারণ মানুষ হচ্ছে ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব’। মানুষের শারীরিক যে চাহিদা তার সাথে প্রাণীকূলের শারীরিক চাহিদারও কোনও পার্থক্য নাই।

আরাম-আয়েশ, ভাল খাদ্য, প্রজনন ইত্যাদি জৈবিক ব্যাপারে মানুষ ও প্রাণীকূলের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নাই। পার্থক্য হচ্ছে মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। নিজের সুখ ও সাচ্ছন্দ্য নিজে সৃষ্টি করে নিতে পারে। নিজের ভাল নিজে বুঝতে পারে।

ইচ্ছা করলে সে চরিত্রের মাধুর্যে ফেরেশতার সমকক্ষ হতে পারে আবার ইন্দ্রিয়ের দাসে পরিণত হয়ে পশুর থেকে নিম্নস্তরে শয়তানে পরিণত হতে পারে। মানুষকে আল্লাহ্‌ খুব ‘সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ ( Limited free will ) দান করেছেন। যা সৃষ্টির অন্য কোন প্রাণীকে দান করা হয় নাই।

এই ‘সীমিত স্বাধীনতা’ সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ) কে দেয়া হয় এবং এই সীমিত স্বাধীনতা প্রয়োগের ক্ষমতাও তাকে দেয়া হয়। নির্দেশ দান করা হয় যে নির্দিষ্ট গাছের নিকটবর্তী যেন তিনি না হন। কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষ হযরত আদম (আঃ) আল্লাহ্‌ কর্তৃক দেয়া সীমিত স্বাধীনতার অপব্যবহার করেন ও প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পনণ করেছিলেন ফলে আল্লাহ্‌র হুকুম অমান্য করেছিলেন। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থাৎ আল্লাহ্‌ প্রদত্ত সীমিত স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, আল্লাহ্‌র দেখানো পথকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্‌র আইন লঙ্ঘন করে, আল্লাহ্‌ তাদের হেদায়েত করেন না।

ফলস্বরূপ তাদের আধ্যাত্মিক জগত ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। শারীরিকভাবে তাদের আল্লাহ্‌ প্রদত্ত অন্যসব দক্ষতা ও মানসিক শক্তি (Faculty of mind) অটুট থাকে। কর্মময় পৃথিবীতে হয়তো বা তারা হয় অত্যন্ত সফল কিন্তু তাদের আধ্যাত্মিক জগৎ বা বিবেক (Spiritual Faculty) হয় অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং মৃত। ফলে তাদের সত্যকে দেখার ক্ষমতা, অনুধাবন করার ক্ষমতা, বুঝতে পারার ক্ষমতা হয় বিলুপ্ত। ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য করার ক্ষমতা হয় দূরীভূত। আরও দেখুন টীকা ৯৩ [২:৮৮]

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৭)

আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
Allâh has set a seal on their hearts and on their hearings, (i.e. they are closed from accepting Allâh’s Guidance), and on their eyes there is a covering. Theirs will be a great torment.

خَتَمَ اللّهُ عَلَى قُلُوبِهمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ عظِيمٌ
Khatama Allahu AAala quloobihim waAAala samAAihim waAAala absarihim ghishawatun walahum AAathabun AAatheemun

YUSUFALI: Allah hath set a seal on their hearts and on their hearing, and on their eyes is a veil; great is the penalty they (incur).
PICKTHAL: Allah hath sealed their hearing and their hearts, and on their eyes there is a covering. Theirs will be an awful doom.
SHAKIR: Allah has set a seal upon their hearts and upon their hearing and there is a covering over their eyes, and there is a great punishment for them.
KHALIFA: GOD seals their minds and their hearing, and their eyes are veiled. They have incurred severe retribution.

০৭। আল্লাহ্‌ তাদের হৃদয় এবং শ্রবণশক্তির উপরে মোহর করে দিয়েছেন ৩১ এবং তাদের চক্ষুর উপরে রয়েছে আবরণ; তারা ভোগ করবে মহাশাস্তি ৩২।

৩১। সমস্ত সত্য ও সুন্দরের উৎস আল্লাহ্‌। যদি আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে অস্বীকার করি, অন্যায় করি, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করি, আল্লাহ্‌র আইন অমান্য করি, তবে আল্লাহ্‌ আমাদের হৃদয়কে যে পবিত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন-অন্তরের সেই পবিত্রতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আমরা আল্লাহ্‌র অসীম রহমত থেকে বঞ্চিত হতে থাকবো। এর ফলে আমাদের অন্তরে সত্যিকারের ধর্মবোধ জন্মাবে না। আমাদের বিবেক ধীরে ধীরে অন্ধকার নিমজ্জিত হবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের বিবেক (Spiritual Faculty) হয়ে যাবে মৃত।

এর ফলে আমাদের অন্তরে সত্যকে ধারণ করার ক্ষমতা লোপ পাবে। সত্যকে অসত্য থেকে, ন্যায়কে অন্যায় থেকে পার্থক্য করার ক্ষমতা রহিত হবে। আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় হবে সত্য বিমুখ, সত্যের আলো এবং ভালোর আলো সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শাস্তি। চক্ষুষ্মান ব্যক্তি হয়েও অন্তর্দৃষ্টি বিহীন হবে। শ্রবণশক্তি থাকা সত্ত্বেও সত্য ও ন্যায়ের আহবান তার শ্রবণে পৌঁছাবে না। একেই বলা হয়েছে চক্ষু ও কর্ণে সীল মোহর দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া। [দেখুন টিকা ৬৩১]

৩২। পৃথিবীতে আদম সন্তানের অবস্থান হচ্ছে স্বল্পকালীন। এই স্বল্পকালীন সময় হচ্ছে নিজেকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করার শিক্ষানবীশকাল (Probationary Period) আত্মার উন্নতি লাভ করাই হচ্ছে এই পৃথিবীতে অবস্থানের একমাত্র লক্ষ্য। আত্মার উন্নতিকে এখানে সমৃদ্ধি এবং আত্মার অধঃপতনকে এখানে শাস্তিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। পাপের পথ পিচ্ছিল ও নিম্নগামী। এই পিচ্ছিল পথে যাত্রা শুরু করলে গতি হয় ক্রমাগত দ্রুত ও ত্বরাণ্বিত। শেষ পর্যন্ত এ পথ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভবপর হয় না। কারণ একটি পাপ বহু পাপের জন্ম দেয়, যেমন-একটি পূণ্য আরও পূণ্যকে আকর্ষণ করে।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৮)

আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
And of mankind, there are some (hypocrites) who say: ”We believe in Allâh and the Last Day” while in fact they believe not.

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللّهِ وَبِالْيَوْمِ الآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
Wamina alnnasi man yaqoolu amanna biAllahi wabialyawmi al-akhiri wama hum bimu/mineena

YUSUFALI: Of the people there are some who say: “We believe in Allah and the Last Day;” but they do not (really) believe.
PICKTHAL: And of mankind are some who say: We believe in Allah and the Last Day, when they believe not.
SHAKIR: And there are some people who say: We believe in Allah and the last day; and they are not at all believers.
KHALIFA: Then there are those who say, “We believe in GOD and the Last Day,” while they are not believers.

রুকু – ২

০৮। মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা বলে ৩৩ ‘আমরা আল্লাহ্‌ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করি’। কিন্তু তারা [প্রকৃতপক্ষে] বিশ্বাস করে না।

৩৩। এবারে আল্লাহ্‌ তৃতীয় শ্রেণীর লোকদের সম্বন্ধে বলেছেন। এরা হচ্ছে মিথ্যুক অর্থাৎ মুনাফিক। এরা নিজেদের কাছে নিজেরা বিশ্বস্ত নয়। এরা মুখে বলে এক কথা কিন্তু এদের অন্তর বলে অন্য কথা। ফলে এদের অন্তরে জন্ম নেয় দুরারোগ্য ব্যাধি (২ : ১০)। সংসারে ভালো অপেক্ষা মন্দের প্রভাব বা বিস্তার ঘটে অত্যন্ত দ্রুত। মুনাফিকদের অন্তরের ব্যাধি সেইরূপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অবিশ্বস্ততা, স্বার্থপরতা, হিংসা-দ্বেষ প্রভৃতি বিভিন্ন রিপু মুনাফিকের অন্তর ছেয়ে ফেলে। এই সকলই মুনাফিকের অন্তরের ব্যাধি।

যদি সময়মত সাবধানতা অবলম্বন করা যায় অন্তরের এই অবস্থা (State of mind) থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন যারা মিথ্যার আশ্রয়ে আত্মাকে কলুষিত করে তাদের আত্মার উপরে কঠিন আবরণ পড়ে। অন্তর হয়ে যায় পাথরের ন্যায় শক্ত। সে শক্ত পর্দা ভেদ করে সত্যের আলো তাদের অন্তরে পৌঁছাতে পারে না।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ০৯)

তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না।
They (think to) deceive Allâh and those who believe, while they only deceive themselves, and perceive (it) not!

يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُم وَمَا يَشْعُرُونَ
YukhadiAAoona Allaha waallatheena amanoo wama yakhdaAAoona illa anfusahum wama yashAAuroona

YUSUFALI: Fain would they deceive Allah and those who believe, but they only deceive themselves, and realise (it) not!
PICKTHAL: They think to beguile Allah and those who believe, and they beguile none save themselves; but they perceive not.
SHAKIR: They desire to deceive Allah and those who believe, and they deceive only themselves and they do not perceive.
KHALIFA: In trying to deceive GOD and those who believe, they only deceive themselves without perceiving.

০৯। আল্লাহ্‌ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না।১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্‌ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ৩৪; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।

৩৪। মিথ্যুক বা মুনাফিকেরা সব সময়েই হয় অবিশ্বস্ত (Insincere) এবং নীতিজ্ঞানশূন্য। একজন নীতি জ্ঞানশূন্য লোক হয় লোভী এবং সুবিধাবাদী। সুবিধাবাদীরা সর্বদা মন্দের সাথে ভালোর এবং সত্য ও ন্যায়ের সাথে অন্যায়, অসত্য ও দুর্নীতির সমঝোতা করতে ব্যস্ত থাকে। কপটতাই তাদের ব্যাধি।

কারণ এই সমঝোতার ফলে সে তার অবস্থানকে সুবিধাজনক স্থানে নিতে সক্ষম হয়। নিজের অবস্থান ভালো করাই মুনাফিকের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুবিধা ভোগ করাই তাদের একমাত্র ধ্যান ধারণা। কোনও ন্যায়-নীতি তাদের চিন্তায় স্থান পায় না।

কিন্তু সংসারে কখনও ভাল ও মন্দের, ন্যায় ও অন্যায়ের, সত্য ও মিথ্যার সন্ধি হতে পারে না। যারা তা করতে চায় তার অন্তরে ব্যাধিগ্রস্থ। কারণ তারা তাদের নিজেদের অন্তরের কাছে বিশ্বস্ত নয়। এর ফলে তাদের অন্তর কোন ভাল গ্রহণ করতে পারে না। যদি কোন ভালও তাদের কাছে আসে, তবে তারা তা মন্দে রূপান্তরিত করে ফেলে। এরকম উদাহরণ আমরা অহরহ আমাদের চারপাশে দেখি। এখানে আল্লাহ্‌ উদাহরণ দিচ্ছেন যে, বৃষ্টি আল্লাহ্‌র নেয়ামত স্বরূপ। যে বৃষ্টিধারা ধরনীকে ফুল-ফল ও ফসলে ভরিয়ে দেয়।

ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য্যে ধরণীকে করে আমোদিত।সেই বৃষ্টির ফলে আগাছার বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়। কাঁটাগাছের কাঁটার বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হয়। শুধু যে ত্বরাণ্বিত হয় তাই-ই নয় কাঁটাকে করে শক্তিশালী। সেইরূপ মুনাফেকের অন্তরের সংস্পর্শে ‘ভালো’ মন্দরূপ ধারণ করে। মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে। ঐ কাঁটা গাছের মত, আল্লাহ্‌র রহমত এদের জন্য সুফল বয়ে না এনে অন্তরের ব্যাধির ব্যাপ্তি ঘটায়।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১০)

তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।
In their hearts is a disease (of doubt and hypocrisy) and Allâh has increased their disease. A painful torment is theirs because they used to tell lies.

فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللّهُ مَرَضاً وَلَهُم عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ
Fee quloobihim maradun fazadahumu Allahu maradan walahum AAathabun aleemun bima kanoo yakthiboona

YUSUFALI: In their hearts is a disease; and Allah has increased their disease: And grievous is the penalty they (incur), because they are false (to themselves).
PICKTHAL: In their hearts is a disease, and Allah increaseth their disease. A painful doom is theirs because they lie.
SHAKIR: There is a disease in their hearts, so Allah added to their disease and they shall have a painful chastisement because they
KHALIFA: In their minds there is a disease. Consequently, GOD augments their disease. They have incurred a painful retribution for their lying.

০৯। আল্লাহ্‌ ও বিশ্বাসীদের তারা প্রতারিত করতে চায়, কিন্তু [এর দ্বারা] তার শুধুমাত্র নিজেদের প্রতারিত করে অথচ তারা [তা] বুঝতে পারে না।১০। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি; এবং আল্লাহ্‌ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ৩৪; তারা [ভোগ করবে] নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী।

৩৪। মিথ্যুক বা মুনাফিকেরা সব সময়েই হয় অবিশ্বস্ত (Insincere) এবং নীতিজ্ঞানশূন্য। একজন নীতি জ্ঞানশূন্য লোক হয় লোভী এবং সুবিধাবাদী। সুবিধাবাদীরা সর্বদা মন্দের সাথে ভালোর এবং সত্য ও ন্যায়ের সাথে অন্যায়, অসত্য ও দুর্নীতির সমঝোতা করতে ব্যস্ত থাকে। কপটতাই তাদের ব্যাধি। কারণ এই সমঝোতার ফলে সে তার অবস্থানকে সুবিধাজনক স্থানে নিতে সক্ষম হয়। নিজের অবস্থান ভালো করাই মুনাফিকের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুবিধা ভোগ করাই তাদের একমাত্র ধ্যান ধারণা। কোনও ন্যায়-নীতি তাদের চিন্তায় স্থান পায় না।

কিন্তু সংসারে কখনও ভাল ও মন্দের, ন্যায় ও অন্যায়ের, সত্য ও মিথ্যার সন্ধি হতে পারে না। যারা তা করতে চায় তার অন্তরে ব্যাধিগ্রস্থ। কারণ তারা তাদের নিজেদের অন্তরের কাছে বিশ্বস্ত নয়। এর ফলে তাদের অন্তর কোন ভাল গ্রহণ করতে পারে না। যদি কোন ভালও তাদের কাছে আসে, তবে তারা তা মন্দে রূপান্তরিত করে ফেলে। এরকম উদাহরণ আমরা অহরহ আমাদের চারপাশে দেখি। এখানে আল্লাহ্‌ উদাহরণ দিচ্ছেন যে, বৃষ্টি আল্লাহ্‌র নেয়ামত স্বরূপ। যে বৃষ্টিধারা ধরনীকে ফুল-ফল ও ফসলে ভরিয়ে দেয়। ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য্যে ধরণীকে করে আমোদিত।

সেই বৃষ্টির ফলে আগাছার বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়। কাঁটাগাছের কাঁটার বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত হয়। শুধু যে ত্বরাণ্বিত হয় তাই-ই নয় কাঁটাকে করে শক্তিশালী। সেইরূপ মুনাফেকের অন্তরের সংস্পর্শে ‘ভালো’ মন্দরূপ ধারণ করে। মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে। ঐ কাঁটা গাছের মত, আল্লাহ্‌র রহমত এদের জন্য সুফল বয়ে না এনে অন্তরের ব্যাধির ব্যাপ্তি ঘটায়।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১১)

আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।
And when it is said to them: ”Make not mischief on the earth,” they say: ”We are only peacemakers.”

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ تُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ قَالُواْ إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ
Wa-itha qeela lahum la tufsidoo fee al-ardi qaloo innama nahnu muslihoona

YUSUFALI: When it is said to them: “Make not mischief on the earth,” they say: “Why, we only Want to make peace!”
PICKTHAL: And when it is said unto them: Make not mischief in the earth, they say: We are peacemakers only.
SHAKIR: And when it is said to them, Do not make mischief in the land, they say: We are but peace-makers.
KHALIFA: When they are told, “Do not commit evil,” they say, “But we are righteous!”

১১। যখন তাদের বলা হয়, ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না,’ তারা বলে, ‘কেন, আমরা তো কেবলমাত্র শান্তি স্থাপন করতে চাচ্ছি।’১২। নিশ্চয়ই এরাই তারা যারা অশান্তি সৃষ্টি করে, কিন্তু তারা [তা] বুঝতে পারে না ৩৫।

৩৫। যেহেতু মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে, তাদের ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা হবে তিরোহিত, ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার অন্তর্দৃষ্টির হবে অভাব। ফলে এ রকম লোক যখন দেশের শাসন ব্যবস্থায় আসে অথবা কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করে এমন কি সমাজ-জীবনের যে কোন ক্ষু্দ্রতম কাজেও তারা অংশগ্রহণ করে; তখন সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা হয় বিঘ্নিত। তারা সমাজ-জীবনকে কলুষিত করে, অশান্তির সৃষ্টি করে। কারণ, আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টি ব্যতীত সমাজ ও সংসারে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়।

আর আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুনাফিকের অন্তরে অনুপস্থিত। কিন্তু মুনাফিকেরা মনে করে তারা শান্তির জন্যই কাজ করছে-কারণ তাদের দূরদৃষ্টির অভাবে প্রকৃত শান্তি ও শৃঙ্খলার রূপ অনুধাবন করতে তারা হয় অপারগ।

সূরা বাকারা
সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি ।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১২)

মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।
Verily! They are the ones who make mischief, but they perceive not.

أَلا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـكِن لاَّ يَشْعُرُونَ
Wa-itha qeela lahum aminoo kama amana alnnasu qaloo anu/minu kama amana alssufahao ala innahum humu alssufahao walakin la yaAAlamoona

YUSUFALI: Of a surety, they are the ones who make mischief, but they realise (it) not.
PICKTHAL: Are not they indeed the mischief-makers? But they perceive not.
SHAKIR: Now surely they themselves are the mischief makers, but they do not perceive.
KHALIFA: In fact, they are evildoers, but they do not perceive.

১১। যখন তাদের বলা হয়, ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না,’ তারা বলে, ‘কেন, আমরা তো কেবলমাত্র শান্তি স্থাপন করতে চাচ্ছি।’১২। নিশ্চয়ই এরাই তারা যারা অশান্তি সৃষ্টি করে, কিন্তু তারা [তা] বুঝতে পারে না ৩৫।

৩৫। যেহেতু মুনাফেকের ব্যাধি তার অন্তরে, তাদের ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা হবে তিরোহিত, ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার অন্তর্দৃষ্টির হবে অভাব। ফলে এ রকম লোক যখন দেশের শাসন ব্যবস্থায় আসে অথবা কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করে এমন কি সমাজ-জীবনের যে কোন ক্ষু্দ্রতম কাজেও তারা অংশগ্রহণ করে; তখন সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা হয় বিঘ্নিত। তারা সমাজ-জীবনকে কলুষিত করে, অশান্তির সৃষ্টি করে। কারণ, আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টি ব্যতীত সমাজ ও সংসারে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়।

আর আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মুনাফিকের অন্তরে অনুপস্থিত। কিন্তু মুনাফিকেরা মনে করে তারা শান্তির জন্যই কাজ করছে-কারণ তাদের দূরদৃষ্টির অভাবে প্রকৃত শান্তি ও শৃঙ্খলার রূপ অনুধাবন করতে তারা হয় অপারগ।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৩)

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না।
And when it is said to them (hypocrites): ”Believe as the people (followers of Muhammad Peace be upon him , Al-Ansâr and Al-Muhajirûn) have believed,” they say: ”Shall we believe as the fools have believed?” Verily, they are the fools, but they know not.

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ
Wa-itha qeela lahum aminoo kama amana alnnasu qaloo anu/minu kama amana alssufahao ala innahum humu alssufahao walakin la yaAAlamoona

YUSUFALI: When it is said to them: “Believe as the others believe:” They say: “Shall we believe as the fools believe?” Nay, of a surety they are the fools, but they do not know.
PICKTHAL: And when it is said unto them: believe as the people believe, they say: shall we believe as the foolish believe? are not they indeed the foolish? But they know not.
SHAKIR: And when it is said to them: Believe as the people believe they say:

Shall we believe as the fools believe? Now surely they themselves are the fools, but they do not know.
KHALIFA: When they are told, “Believe like the people who believed,” they say, “Shall we believe like the fools who believed?” In fact, it is they who are fools, but they do not know.

১৩। যখন তাদের বলা হয়, ‘অন্যরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও সেরূপ ঈমান আন।’ তারা বলে, ‘নির্বোধরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনবো?’ বস্তুতঃ নিশ্চিতভাবে ওরাই নির্বোধ, কিন্তু তারা [তা] জানে না ৩৬।

৩৬। মুনাফেকের চরিত্রের আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা নিন্দুক হয়ে থাকে। এদের চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আত্মম্ভরিতা ও অহংকার। নিজেকে সর্বদা সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তা করা। যারা বিশ্বাসী ও ধার্মিক, তারা অবশ্যই আল্লাহ্‌র আইন মেনে চলবে । তারা হবে সত্য ও ন্যায়ের পূজারী। এটা মুনাফেকের চোখে বোকামীর সামিল কিন্তু তারা জানে না যে আল্লাহ্‌র চোখে মুনাফেকেরা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও বোকা।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৪)

আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা।
And when they meet those who believe, they say: ”We believe,” but when they are alone with their Shayâtin (devils – polytheists, hypocrites, etc.), they say: ”Truly, we are with you; verily, we were but mocking.”

وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِؤُونَ
Wa-itha laqoo allatheena amanoo qaloo amanna wa-itha khalaw ila shayateenihim qaloo inna maAAakum innama nahnu mustahzi-oona

YUSUFALI: When they meet those who believe, they say: “We believe;” but when they are alone with their evil ones, they say: “We are really with you: We (were) only jesting.”
PICKTHAL: And when they fall in with those who believe, they say: We believe; but when they go apart to their devils they declare: Lo!we are with you; verily we did but mock.

SHAKIR: And when they meet those who believe, they say: We believe; and when they are alone with their Shaitans, they say: Surely we are with you, we were only mocking.
KHALIFA: When they meet the believers, they say, “We believe,” but when alone with their devils, they say, “We are with you; we were only mocking.”

১৪। যখন তারা বিশ্বাসীদের সাথে মিলিত হয়, তারা বলে, ৩৭ ‘আমরা ঈমান এনেছি।’ কিন্তু যখন তারা নিভৃতে শয়তান [লোকদের] সাথে মিলিত হয়, তারা বলে; ‘আমরা প্রকৃতই তোমাদের সাথে, আমরা কেবলমাত্র ঠাট্টা-তামাশা করেছিলাম।

৩৭। মুনাফেকী যখন অন্তরের অন্তঃস্থলে গভীরভাবে তার শিকড় বিস্তার করে, তখন তারা হয়ে উঠে অত্যন্ত কপট ও ভণ্ড। মুখে মধু ঢেলে তারা ধার্মিক লোকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে যেনো তাদের প্রকৃতরূপ বিশ্ববাসীরা অনুধাবন করতে না পারে। কিন্তু যখন তারা স্বগোত্রে প্রত্যাবর্তন করে তখন নিজমূর্তি ধারণ করে। কিন্তু কপটতা, ভণ্ডামীর পরিণতি কখনও ভালো হয় না। একে আল্লাহ্‌ তুলনা করেছেন সেই লোকের সাথে যে তার বাণিজ্যে মুনাফা লাভের পরিবর্তে লোকসান দিয়েছে। কারণ এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান খুবই ক্ষণস্থায়ী।

এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে আমরা এসেছি বেহেশ্‌ত লাভের বাণিজ্যে। আত্মা তার মূলধন। এই মূলধনকে যে উন্নত করতে পারবে তারই আছে মুনাফা। অন্যথায় যে আত্মাকে লোভ-লালসা, অন্যায়, অসত্যের কাছে বিক্রি করে সে ঐ ব্যক্তির মত যে বাণিজ্যে লোকসান দেয়।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৫)

বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।
Allâh mocks at them and gives them increase in their wrong-doings to wander blindly.

اللّهُ يَسْتَهْزِىءُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
Allahu yastahzi-o bihim wayamudduhum fee tughyanihim yaAAmahoona

YUSUFALI: Allah will throw back their mockery on them, and give them rope in their trespasses; so they will wander like blind ones (To and fro).
PICKTHAL: Allah (Himself) doth mock them, leaving them to wander blindly on in their contumacy.
SHAKIR: Allah shall pay them back their mockery, and He leaves them alone in their inordinacy, blindly wandering on.
KHALIFA: GOD mocks them, and leads them on in their transgressions, blundering.

১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্‌ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।

১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্‌ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।

১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।

৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়।

এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না। ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত। মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না। কখনই ভালো হয় না।

ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল। সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্‌র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৬)

তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি।
These are they who have purchased error for guidance, so their commerce was profitless. And they were not guided.

أُوْلَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرُوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُواْ مُهْتَدِينَ
Mathaluhum kamathali allathee istawqada naran falamma adaat ma hawlahu thahaba Allahu binoorihim watarakahum fee thulumatin la yubsiroona

YUSUFALI: These are they who have bartered Guidance for error: But their traffic is profitless, and they have lost true direction,
PICKTHAL: These are they who purchase error at the price of guidance, so their commerce doth not prosper, neither are they guided.
SHAKIR: These are they who buy error for the right direction, so their bargain shall bring no gain, nor are they the followers of the right direction.
KHALIFA: It is they who bought the straying, at the expense of guidance. Such trade never prospers, nor do they receive any guidance.

১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্‌ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।

১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্‌ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।

১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।

৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো।

কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়। এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না।

ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত।

মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না। কখনই ভালো হয় না। ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল।

সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে।

তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্‌র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৭)

 

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৮)

তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।
They are deaf, dumb, and blind, so they return not (to the Right Path).

صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لاَ يَرْجِعُونَ (18
Summun bukmun AAumyun fahum la yarjiAAoona

YUSUFALI: Deaf, dumb, and blind, they will not return (to the path).
PICKTHAL: Deaf, dumb and blind; and they return not.
SHAKIR: Deaf, dumb (and) blind, so they will not turn back.
KHALIFA: Deaf, dumb, and blind; they fail to return.

১৫। তাদের ঠাট্টা-তামাশা আল্লাহ্‌ তাদের উপরে ছুড়ে দেবেন এবং তাদের সীমালংঘনের জন্য [অবাধ্যতার] রশিকে লম্বা করে দেবেন, যেনো তারা অন্ধের ন্যায় [সামনে পিছনে] পথভ্রষ্ট ভাবে ঘুরে বেড়ায়।১৬। এরাই তারা যারা হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রান্তি কিনে নিয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাভজনক নয়, এবং তারা সত্য পথের নির্দেশ হারিয়ে ফেলেছে।

১৭। তাদের উপমা সেই ব্যক্তির ন্যায় ৩৮, যে আগুন জ্বালালো। যখন তা তার চতুর্দিক আলোকিত করলো, আল্লাহ্‌ তাদের আলো সরিয়ে নিলেন এবং তাদের ঘোর অন্ধকারে পরিত্যাগ করলেন, যেনো তারা দেখতে না পায়।

১৮। তারা বধির, মূক এবং অন্ধ, তারা [সঠিক পথে] ফিরবে না।

৩৮। মুনাফিকের আত্মা ভণ্ডামী, জুয়াচুরি, অসত্য, অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এগুলির সাহায্যে সে খুব সহজেই কোনও কাজে জয়লাভ করে এবং প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়, সেই লোকটির মত যে ক্ষণস্থায়ী আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়ে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হয়েছিলো এবং সকলের প্রশংসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু তার জ্বালানো আগুন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক সময় তা নিভে যায়। ফলে চারিদিক আবার গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির পরে এ গাঢ়তা পূর্বের গাঢ়তার থেকে আরও বেশি প্রতীয়মান হয়।

এই উপমার সাহায্যে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যেসব কাজের ভিত্তি অন্যায়, অসত্য, অবিশ্বাস, ভণ্ডামীর উপর প্রতিষ্ঠিত, তার ফল কখনও স্থায়ী হয় না। ঐ কাজের সাফল্য অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী, আগুণের ক্ষণস্থায়ী আলোর মত। যে আলো অন্ধকারকে চিরতরে দূর করতে অপারগ। মুনাফিকেরা ভণ্ডামীর সাহায্যে জয়ী হতে চায়। ফলে তার কাজের নিয়তে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, সত্যের প্রতি বিশ্বস্ততা, প্রতিপালকের রহমতের আশা সবই থাকে অনুপস্থিত। মুনাফিকের কাজের নিয়ত কখনই মহৎ হয় না।

কখনই ভালো হয় না। ফলে সময়ের বৃহত্তর পরিসরে মুনাফিকের কাজের নিয়ত বা অন্তরের উদ্দেশ্য সকলের নিকট পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। সত্য প্রকাশিত হয়। ফলে কাজের সব পরিণতি হয় বিফল। সত্যের উদ্ভাসিত আলোতে মুনাফিকের অন্তর ভয়ে ত্রাসে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। অন্তরের ভয় ত্রাস, মুনাফিকদের সুস্থ চিন্তাধারাকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তারা সত্যকে জানতে, সত্যকে অনুধাবন করতে, শুনতে বা দেখতে অক্ষম হয়। মুনাফিকের আত্মার চারিদিক প্রাচীর বেষ্টিত হয়ে যায়। প্রাচীর বেষ্টিত স্থান যেমন সূর্যের ঝলমলে আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

ঠিক সেইরূপ মুনাফিকের অন্তরের মিথ্যার আবরণ সত্যের আলোর প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাদের আত্মা সত্যের আলো বা আল্লাহ্‌র হেদায়েতের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে, কিন্তু মিথ্যার আবরণ তাদের আত্মায় সত্যের আলো প্রবেশে বাঁধা দেয়। ফলে তারা অন্ধকারে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়ায়। তাদের আত্মা চায় মুক্তির আলো, মুক্তির বাতাস। কিন্তু তারা তা পায় না। তারা মিথ্যার অন্ধকারে অন্ধ ও বধির। সত্যকে খুঁজে নেবার ক্ষমতাও তাদের নাই। সুতরাং তারা আর ফিরবে না। অর্থাৎ তাদের অনুভূতিতে সত্য ও ন্যায় বোঝার মত যোগ্যতা রইল না। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈমানকে প্রতিহত করছে।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ১৯)

আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত।
Or like a rainstorm from the sky, wherein is darkness, thunder, and lightning. They thrust their fingers in their ears to keep out the stunning thunderclap for fear of death. But Allâh ever encompasses the disbelievers (i.e. Allâh will gather them all together).

أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاء فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصْابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ واللّهُ مُحِيطٌ بِالْكافِرِينَ
Aw kasayyibin mina alssama-i feehi thulumatun waraAAdun wabarqun yajAAaloona asabiAAahum fee athanihim mina alssawaAAiqi hathara almawti waAllahu muheetun bialkafireena

YUSUFALI: Or (another similitude) is that of a rain-laden cloud from the sky: In it are zones of darkness, and thunder and lightning: They press their fingers in their ears to keep out the stunning thunder-clap, the while they are in terror of death. But Allah is ever round the rejecters of Faith!
PICKTHAL: Or like a rainstorm from the sky, wherein is darkness, thunder and the flash of lightning.

They thrust their fingers in their ears by reason of the thunder-claps, for fear of death, Allah encompasseth the disbelievers (in His guidance, His omniscience and His omnipotence).
SHAKIR: Or like abundant rain from the cloud in which is utter darkness and thunder and lightning; they put their fingers into their ears because of the thunder peal, for fear of death, and Allah encompasses the unbelievers.
KHALIFA: Another example: a rainstorm from the sky in which there is darkness, thunder, and lightning. They put their fingers in their ears, to evade death. GOD is fully aware of the disbelievers.

১৯। অথবা [অন্য উপমা হচ্ছে] ৩৯, আকাশের বৃষ্টি ভারাক্রান্ত মেঘ; এতে রয়েছে ঘোর অন্ধকার, বজ্র এবং বিদ্যুৎ। হতবুদ্ধি করা বজ্রের উচ্চ শব্দকে দূরে রাখার জন্য মৃত্যুভয়ে তারা কর্ণে আঙ্গুলি চেপে ধরে। কিন্তু ঈমানকে প্রত্যাখানকারীদের আল্লাহ্‌ সর্বদিক থেকে ঘিরে থাকেন।২০। বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি শক্তিকে প্রায় কেড়ে নেয়। প্রতিবার [বিদ্যুতের] আলো যখন তাদের [সাহায্য] করে, তারা [তার সাহায্যে] পথ চলতে থাকে। এবং যখন তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসে, তারা থমকে দাঁড়ায়। আল্লাহ্‌ যদি ইচ্ছা করতেন তবে, তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সর্ব বিষয়ের উপরে সর্বশক্তিমান।

৩৯। মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা অত্যন্ত সুবিধাবাদী। এদের একদল ইসলামের বিজয় দেখে তার প্রতি ধাবিত হয় আবার যখনই স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই মত পরিবর্তন করে। এই আয়াতে উপমার সাহায্যে তাদেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সাধারণতঃ এরা তাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে সুসময়ে আত্মতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট কিন্তু যখনই কোনও বিপদ আপতিত হয় তখন তাদের যে অবস্থা হয় সেই অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। বিদ্যুতের আলো তাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়। বজ্র তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেয়, শ্রবণশক্তি হরণ করে।

মৃত্যুভয় তাদের শঙ্কিত করে তোলে। তারা আল্লাহ্‌র উপর নির্ভরশীলতা হারিয়ে ফেলে। অথচ আল্লাহ্‌ সবার উপরে শক্তিমান, কাফেররাও তারই ক্ষমতার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ্‌ তাদের সময় দেন। ফলে চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ ও কানে তালা লাগানো বজ্রের গর্জনের ফাঁকে যখন একটু আলোকিত হয়, তখন তারা পথ চলার চেষ্টা করে।

আবার যখন অন্ধকার বিরাজ করে তখন দাঁড়িয়ে থাকে। অর্থাৎ উপমার সাহায্যে বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, মুনাফিকদের অন্ধকারাচ্ছন্ন আত্মায় মাঝে মাঝে সত্যের আলোর, হেদায়েতের আলোর চমক খেলে যায়। অর্থাৎ মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ন্যায় ও সত্য ও বিবেক জাগ্রত হয়-তবে তা হয় অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী।

সে সময়ে তারা পথ চলতে চেষ্টা করে কিন্তু আবার তারা মিথ্যার অন্ধকারে ডুবে যায়, সম্ভবতঃ ক্ষণস্থায়ী পথ চলার শক্তিতে তারা উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের বুদ্ধিমত্তাতে অহংকারে স্ফীত হয়। কিন্তু তা না করে তারা যদি বিনয়ের সাথে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ কামনা করতো আল্লাহ্‌র আশ্রয় কামনা করতো তবে অবশ্যই তারা আল্লাহ্‌র নিরাপদ আশ্রয়ে তাঁর রহমতে ধন্য হত।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ২০)

 

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । সূরা বাকারা (আয়াত ২১)

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে।
O mankind! Worship your Lord (Allâh), Who created you and those who were before you so that you may become Al-Muttaqûn (the pious – see V.2:2).

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (21
Ya ayyuha alnnasu oAAbudoo rabbakumu allathee khalaqakum waallatheena min qablikum laAAallakum tattaqoona

YUSUFALI: O ye people! Adore your Guardian-Lord, who created you and those who came before you, that ye may have the chance to learn righteousness;
PICKTHAL: O mankind! worship your Lord, Who hath created you and those before you, so that ye may ward off (evil).
SHAKIR: O men! serve your Lord Who created you and those before you so that you may guard (against evil).
KHALIFA: O people, worship only your Lord – the One who created you and those before you – that you may be saved.

রুকু – ৩

২১। হে মানব সম্প্রদায়! তোমার অভিভাবক আল্লাহ্‌র এবাদত কর যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্বে যারা [পৃথিবীতে] এসেছিলো সকলকে সৃষ্টি করেছেন, যেনো তোমরা পূণ্যাত্মা হওয়ার সুযোগ লাভ কর ৪০।

৪০। ‘তাকওয়া’ এর জন্য দেখুন [২:২ টিকা ২৬]। এবাদত কথাটির অর্থ অনেক ব্যাপক। শুধুমাত্র যান্ত্রিকভাবে নামাজ পড়া, রোযা রাখা, যাকাত দেয়া এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যে এবাদতের সাথে আত্মার যোগাযোগ নাই তা এবাদতই নয়। এবাদতের পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য মনের ঐকান্তিক ইচ্ছা। বিনয়ের সাথে, ভক্তির সাথে, স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত প্রতিটি কাজই হচ্ছে এবাদত। সে কাজ যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, যদি তা নিবেদিত হয় আল্লাহ্‌র জন্য, আল্লাহ্‌কে খুশী করার জন্য, তবেই তাই-ই হচ্ছে আসল এবাদত।

যখন বান্দার মনের অবস্থা এই পর্যায়ে উন্নীত হয় যে তার সমস্ত ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা সবই স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত তখনই বান্দার চরিত্রে মুত্তাকী (Righteousness) হওয়ার মত গুণাবলীর সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসাতে, বিনয়ে নিবেদিত আত্মাই হচ্ছে মুত্তাকী। আল্লাহ্‌ আমাদের তাঁর কাছে আত্মসমর্পনের এই সুযোগ দিয়েছেন। বান্দাকে ‘সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ (Limited Free Will) এর মাধ্যমে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। বান্দা যেনো স্ব-ইচ্ছায়, মহান সত্তার কাছে আত্মনিবেদন করে। যদি আমরা তা করতে পারি তবে আমাদের ভিতরে যে পরিবর্তন আসবে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। আমাদের সর্বসত্ত্বা আল্লাহ্‌র রহমতে বিধৌত হয়ে তা সৌন্দর্য মণ্ডিত হয়ে উঠবে। আমরা হব এক সুস্থ শৃঙ্খলায় পরিবর্তিত মানুষ।

সূরা বাকারা
সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি ।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ২২)

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ২৩)

এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।

And if you (Arab pagans, Jews, and Christians) are in doubt concerning that which We have sent down (i.e. the Qur’ân) to Our slave (Muhammad Peace be upon him ), then produce a Sûrah (chapter) of the like thereof and call your witnesses (supporters and helpers) besides Allâh, if you are truthful.

وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُواْ بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُواْ شُهَدَاءكُم مِّن دُونِ اللّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
Wa-in kuntum fee raybin mimma nazzalna AAala AAabdina fa/too bisooratin min mithlihi waodAAoo shuhadaakum min dooni Allahi in kuntum sadiqeena

YUSUFALI: And if ye are in doubt as to what We have revealed from time to time to Our servant, then produce a Sura like thereunto; and call your witnesses or helpers (If there are any) besides Allah, if your (doubts) are true.
PICKTHAL: And if ye are in doubt concerning that which We reveal unto Our slave (Muhammad), then produce a surah of the like thereof, and call your witness beside Allah if ye are truthful.

SHAKIR: And if you are in doubt as to that which We have revealed to Our servant, then produce a chapter like it and call on your witnesses besides Allah if you are truthful.
KHALIFA: If you have any doubt regarding what we revealed to our servant, then produce one sura like these, and call upon your own witnesses against GOD, if you are truthful.

২৩। আমি আমার বান্দার প্রতি সময়ে সময়ে যা অবতীর্ণ করেছি সে সম্বন্ধে যদি তোমাদের সন্দেহ থাকে, তবে উহার অনুরূপ একটি সূরা রচনা কর। [এ ব্যাপারে] আল্লাহ্‌ ব্যতীত তোমাদের সকল সাক্ষী এবং সাহায্যকারীদের আহবান কর, যদি তোমাদের [সন্দেহ] সত্য হয় ৪২।

৪২। কুরআনের আয়াত যে আল্লাহ্‌র বাণী, তার প্রমাণ কি? আল্লাহ্‌ এখানে উপযুক্ত প্রমাণের উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্‌ আমাদের নবীর মাধ্যমে অনেক সূরা নাজিল করেছেন। আল্লাহ্‌ এখানে বলেছেন, ‘তোমরা কি অনুরূপ একটা সূরাও রচনা করতে পারবে?’ আল্লাহ্‌র বাণীর মানুষের সুপ্ত আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগরিত করার যে ক্ষমতা সে ক্ষমতা মানুষের তৈরি বাণীতে নাই।

থাকা সম্ভবও নয়। মানুষ নিজের কূপমণ্ডুকতা, হঠকারীতা, বিবেকহীনতা, অজ্ঞনতার ফলে এসব কথা বলে যে, আল্লাহ্‌র বাণী মানুষের সৃষ্টি। কুরআন এক ঐশী গ্রন্থ। কুরআন যে আলোর ভূবন ও আধ্যাত্মিক জগতের সন্ধান দেয়, তার স্থায়িত্ব, অস্তিত্ব ও প্রভাব, যুগ, কাল অতিক্রান্ত।

সূরা বাকারা পর্ব ১ । সূচি । (আয়াত ২৪)

আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
But if you do it not, and you can never do it, then fear the Fire (Hell) whose fuel is men and stones, prepared for the disbelievers.

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُواْ وَلَن تَفْعَلُواْ فَاتَّقُواْ النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ (24
Fa-in lam tafAAaloo walan tafAAaloo faittaqoo alnnara allatee waqooduha alnnasu waalhijaratu oAAiddat lilkafireena

YUSUFALI: But if ye cannot- and of a surety ye cannot- then fear the Fire whose fuel is men and stones,- which is prepared for those who reject Faith.
PICKTHAL: And if ye do it not – and ye can never do it – then guard yourselves against the Fire prepared for disbelievers, whose fuel is of men and stones.
SHAKIR: But if you do (it) not and never shall you do (it), then be on your guard against the fire of which men and stones are the fuel; it is prepared for the unbelievers.
KHALIFA: If you cannot do this – and you can never do this – then beware of the Hellfire, whose fuel is people and rocks; it awaits the disbelievers.

২৪। কিন্তু যদি তোমরা তা না পার এবং এটা নিশ্চিত যে তোমরা তা পারবে না, তবে সেই আগুনকে ভয় কর, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে যারা ঈমানকে প্রত্যাখান করে তাদের জন্য ৪৩।

৪৩। কুরআনের বাণীর সৌন্দর্য্য, ভাষা, গাম্ভীর্য, নিগূঢ় অর্থ, সর্বোপরি আধ্যাত্মিক জগত ও মনোজগতের উপরে এর যা প্রভাব, তার সমকক্ষ কিছু রচনা করা কোনও মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবুও কেউ যদি একগুয়ে অবাধ্যভাবে সত্যকে অস্বীকার করে, আল্লাহ্‌র বাণীকে ঐশী বাণী হিসেবে গ্রহণে অস্বীকার করে, তবে অবশ্যই অস্বীকারকারীর অন্তরে যন্ত্রণার উদ্ভব হয়। সেই যন্ত্রণার আগুনে তার আজীবন লালিত মিথ্যা উপাস্যগুলিই [এটা হতে পারে আত্মগর্ব, আত্মপ্রচার, আত্ম-প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতা ও অর্থের প্রতিপত্তি, বিজ্ঞান ইত্যাদি] শুধু শেষ হয়ে যায় না, তার অন্তরের অন্তঃস্থলে সেই আগুন তার লেলিহান শিখা বিস্তার লাভ করে। এরপরেও কি তাদের জ্ঞান ফিরবে না? আত্মার এই যন্ত্রণা তার সমস্ত অনুভূতি, সমস্ত সত্তাকে অন্তরের অন্তঃস্থলকে তীব্রভাবে দহন করে। এ যন্ত্রণা শারীরিক নয়।

এক ভয়াবহ শূন্যতা, ভয়ানক যন্ত্রণা তার আত্মাকে দহন করবে। সংসারের কোন সুখ, অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি কিছুই তাকে সেই জ্বালা ভুলাতে সাহায্য করবে না। অনেকে হয়তো বা মনে করতে পারে যে সে সব যন্ত্রণার উর্ধ্বে, নির্বিকার। কিন্তু আত্মার এ আগুন সেই লৌহ কঠিন আত্মাকেও দহন করবে। এ কথাটাকে কুরআন শরীফে এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে দোযখের জ্বালানী হবে পাপিষ্ঠ আত্মা। পাথরের ন্যায় শক্ত আত্মার জন্য দেখুন। [২:২৪, ৭৪, ২৬৪ আয়াত]

আরও দেখুনঃ 

সূরা বাকারা পর্ব ২ । সূচি । [ গাভী কুরবানী ] সূরা নং ২ । পবিত্র কুরআন ।

নাপাকি এবং নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জনের উপায়

Leave a Comment