হজে আগতদের সঙ্গে যোগাযোগ | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ, আগের কয়েকটি পর্বে আমরা আলোচনা করেছি, আবু তালিবের মৃত্যুর পর মক্কার নতুন নেতা আবু লাহাব প্রথমে নবিজিকে (সা) সুরক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সে তা উঠিয়ে নিলে নবিজি (সা) মক্কায় মুতিম ইবনে আদির সুরক্ষায় ছিলেন। কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিল অনিশ্চিত, কিছুটা বিদঘুটেও বটে। কারণ, একদিকে নবিজির (সা) নিজের গোত্র তাঁকে পরিত্যাগ করেছে, অন্যদিকে মুতিম তাঁকে সুরক্ষা দেওয়ায় কুরাইশরা খুশি নয়। তা ছাড়া মুতিমের তখন অনেক বয়স।
ফলে মক্কায় নবিজির (সা) নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নবিজি (সা) বুঝতে পারছিলেন, এখন তাঁকে মক্কা ত্যাগ করতে হবে। তিনি প্রথমে মক্কার সবচেয়ে কাছের শহর তায়েফে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। তায়েফবাসী তাঁকে আশ্রয় দেয়নি। তাহলে এখন তিনি কীভাবে নিজের ও ইসলাম গ্রহণকারীদের নিরাপত্তা করবেন?
হজে আগতদের সঙ্গে যোগাযোগ | ইয়াসরিবের জন্য বীজ রোপণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আমরা জানি, আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন উপজাতির মানুষ মক্কায় হজ করতে আসত। আগেই উল্লেখ করেছি, ইব্রাহিমের (আ) সময় থেকেই হজের প্রচলন ছিল, নবিজির (সা) সময়েও তা অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন উপজাতির লোকেরা মক্কায় এসে মিনার’ বিভিন্ন অংশে তাঁবু ফেলত। হজের সময় নবিজি (সা) বিভিন্ন উপজাতির লোকদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করলেন; তিনি তাদের মূর্তিপুজা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় চাইতে লাগলেন। তিনি বিভিন্ন লোককে বলতে লাগলেন যে তিনি তাদের উপজাতির আনুগত্য মেনে নেবেন, তার বিনিময়ে তাঁকে ও তাঁর অনুগত মানুষদের নিরাপত্তা-সুরক্ষা দিতে হবে।
এভাবে আনুগত্য পরিবর্তনের বিষয়টি সেই সময়ের আরবে তেমন প্রচলিত ছিল না। তবু নবিজি (সা) এভাবে নিরাপদ আশ্রয়ের অন্বেষণ করতে লাগলেন আমরা স্মরণ করতে পারি, তিনি তাঁর চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর আগেও হজের সময় আগত মানুষের কাছে গিয়েছিলেন, তবে তখন তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। ইসলামের বাণী প্রচার করা সকলকে ইসলামের পথে আহ্বান জানানো। কিন্তু এবার তিনি হলে আগত লোকদের কাছে গিয়ে তাদের কাছে ‘রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেন। তিনি যাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন, তাদের এবং অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনাই সিরাহগ্রস্থগুলোতে স্থান পেয়েছে।

এ বিষয়ে রবিয়া ইবনে আব্বাদের বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি বহু বছর পরে বলেছিলেন: “আমার মনে আছে, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন এক যুবক আমার পিতার কাছে এসে প্রতিমাপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর উপাসনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। “যুবকটি আমার পিতাকে অনুরোধ করলেন, তাঁকে যেন আমাদের উপজাতির একজন হিসেবে তাঁকে গ্রহণ করা হয়। সেই সময় আনি দেখলাম, ইয়েমেনি আলখাল্লা পরা এক বয়স্ক লোক যুবকটির পেছনে পাঁড়িয়ে আছে। যুবকের কথা শেষ হওয়ার পরপরই বয়স্ক লোকটি বলল, ‘হে লোকেরা। তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের পথ ছেড়ে দিয়ো না।’ আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই দুই ব্যক্তি কারা?’ তিনি আমাকে বললেন, ‘প্রথমজন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি নিজেকে একজন নবি হিসেবে দাবি করছেন, আর বয়স্ক ব্যক্তিটি তাঁর (যুবকটির) চাচা আবদুল উজ্জা (আবু লাহাব)।”
বিভিন্ন সিরাহগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আরেকটি বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) হজে আগতদের কাছে গিয়ে বলেন, “আপনাদের মধ্যে কে আমাকে গ্রহণ করবেন যাতে আমি আল্লাহর বাণী প্রচার করতে পারি? কারণ কুরাইশরা আমাকে এ কাজ করতে বাধা দিচ্ছে।” জানা যায়, তিনি অনেক উপজাতির কাছে এই আহ্বান জানিয়েছিলেন। যেমন, কিনদা, বনু কালব, বনু হানিফা, বনু আমির ইবনে সাসাআ ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ
- জাহান্নাম পরিদর্শন | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- মক্কায় প্রত্যাবর্তন | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- আল-সিদ্দিক | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- পবিত্র কোরানে ইসরা ও মিরাজ | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- ইসরা ও মিরাজ থেকে জ্ঞাতব্য | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন