আকাবার প্রথম অঙ্গীকার (নারীদের চুক্তি) | আকাবার প্রথম অঙ্গীকার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আকাবার প্রথম অঙ্গীকার (নারীদের চুক্তি) | আকাবার প্রথম অঙ্গীকার, আগের পর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, খাজরাজ গোত্রের ছয় ব্যক্তি ইয়াসরিবে ফিরে গিয়ে নিজেদের লোকদের মধ্যে ইসলামের বাণী প্রচার করতে শুরু করেন। তাঁদের চেষ্টায় কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। আরো অনেকেই এই নতুন ধর্ম গ্রহণের কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে শুরু করেন। ওই ছয়জন নবিজির (সা) সঙ্গে আলোচনার সময় বেশ খোলামনে বলেছিলেন, ‘আমরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করব, পরের বছর আবার আসব।’ তবে তাঁরা সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, নাকি তা ঘটেছিল তাঁরা ইয়াসরিবে ফেরার পর, এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।

 

আকাবার প্রথম অঙ্গীকার (নারীদের চুক্তি) | আকাবার প্রথম অঙ্গীকার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আকাবার প্রথম অঙ্গীকার (নারীদের চুক্তি) | আকাবার প্রথম অঙ্গীকার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আকাবার প্রথম অঙ্গীকার (নারীদের চুক্তি)

পরের বছর ওই ছয় ব্যক্তি ইয়াসরিব থেকে নবিজিকে (সা) বার্তা পাঠালেন, “আমরা ১২ জনকে ধর্মান্তরিত করেছি। তাঁদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ বছর হজের জন্য আসছি।” দাওয়াত শুরুর পর থেকে মক্কার ও কুরাইশদের বাইরে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা। পরিকল্পনা অনুসারে দাওয়াতের ১১তম বছরে খাজরাজ থেকে ১০ জন ও আউস থেকে ২ জন নবিজির (সা) সঙ্গে আকাবার ময়দানে সাক্ষাৎ করেন। হজে আগত এই ১২ জনের সঙ্গে নবিজির (সা) কথোপকথনে কোনো গোপনীয়তা ছিল না। আমরা দেখব, পরের বছরই এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

একটি বিষয় লক্ষণীয়, আউস ও খাজরাজ উপজাতির লোকেরা এই প্রথমবারের মতো শত্রুতা ও যুদ্ধবিগ্রহ ভুলে ইসলামের স্বার্থে একত্রিত হলো। ইসলাম যে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন সৃষ্টি করে এক সময় তাদের একত্রিত করবে, এই প্রথমবারের মতো তার লক্ষণ দেখা গেল। এই দ্বিতীয়বারের সাক্ষাতেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, খাজরাজদের সংখ্যা আউসদের চেয়ে অনেক বেশি। বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে পুরোপুরি মিল হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

নবিজির (সা) সঙ্গে দ্বিতীয়বারের সাক্ষাতেই তাঁরা শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাদের এই শপথগ্রহণকে অভিহিত করা হয় ‘বাইয়াতুল আকাবা আল-উলা’ বা ‘আকাবার প্রথম অঙ্গীকার’ হিসেবে। এর আগের বছর যা ঘটেছিল তাকে ‘বাইয়াত’ বা অঙ্গীকার বলা যাবে। না। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, ওই সময়ে কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলে নবি করিমের (সা) হাতে হাত রেখে শপথবাক্য পাঠ করার মাধ্যমে তা করতেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এই ‘প্রথম অঙ্গীকারপত্র’ যাঁরা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, উবাদা ইবনুল সামিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সহিহ বুখারি অনুসারে, উবাদা বলেন, “আমি তাঁদের মধ্যে ছিলাম যারা আকাবার প্রথম অঙ্গীকারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেটা ছিল ‘বাইয়াতুল নিসা’ বা ‘নারীদের বাইয়াত’। এই অঙ্গীকারে কোনো রাজনৈতিক বিষয় ছিল না, তা ছিল শুধু ধর্ম ও নৈতিকতার শপথ। আমরা দেখব, পরের বছরের দ্বিতীয় অঙ্গীকারে ধর্ম ও নৈতিকতা ছাড়াও সুরক্ষা, মৈত্রী ও রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে।

এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রথম অঙ্গীকারকে কেন ‘নারীদের অঙ্গীকার’ বলা হয়? কারণ, পরবর্তীকালে নারীরা ধর্মান্তরিত হওয়ার সময় নবিজি (সা) তাদের শুধু এক আল্লাহর উপাসনা ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করতে বলেছিলেন। অর্থাৎ নারীদের শুধু ধর্মতত্ত্ব ও নৈতিকতার বিষয়গুলোই পালন করতে বলা হয়েছিল। যেহেতু প্রথম অঙ্গীকারে কোনো রাজনৈতিক বিষয় ছিল না, তাই অংশগ্রহণকারীদের সবাই পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও এই অঙ্গীকারকে নারীদের অঙ্গীকার বলা হয়।

উবাদা আরও বলেন, “আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম যে, আমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করব, ব্যভিচার করব না, চুরি করব না, এবং নিজ সন্ত নিদেরকে হত্যা করব না। আমরা অনৈতিক ও অন্যায় জীবনযাপন করব না। এবং আমরা সব ভালো কাজেই নবিজির (সা) আনুগত্য করব।” লক্ষ করুন, তখনও ইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে কালেমা ও নামাজ ছাড়া আর কিছু প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জাকাত, রোজা ও হজ তখন পর্যন্ত মুসলিমদের জন্য ফরজ হয়নি। এমনকি মদও তখন নিষিদ্ধ করা হয়নি। সুতরাং এই সময়ে মুসলিমদের কাজ ছিল একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা এবং সৎভাবে জীবনযাপন করা। নবিজি (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি এই অঙ্গীকার পূরণ করবে, আল্লাহ তাকে প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি এগুলো পুরোপুরি পালন করতে পারবে না এবং অনুতপ্ত হবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। “

 

আকাবার প্রথম অঙ্গীকার (নারীদের চুক্তি) | আকাবার প্রথম অঙ্গীকার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তারপর নবিজি (সা) ওই ১২ জনকে কোরান ও নামাজ শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুসআব ইবনে উমায়ের নামের এক কুরাইশ ব্যক্তিকে ইয়াসরিবে পাঠান। বর্ণিত আছে, মুসআব ইয়াসরিবে পৌঁছার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানকার ৪০ জন মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার পরপরই নবিজি (সা) তাঁদের প্রতি শুক্রবারে হুমার নামাজ আদায় করার নির্দেশ পাঠান। এভাবে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজের খুতবা দিয়েছিলেন মুসআব ইবনে উমায়ের, নবিজি (সা) নন।

প্রথম জুমার নামাজটি পড়া হয়েছিল আসাদ ইবনে জুরারার বাড়িতে, যিনি ইয়াসরিবে মুসআবকে আতিথ্য দিয়েছিলেন। আনুষঙ্গিক বিষয়। জুমার নামাজ পড়ার জন্য ন্যূনতম কতজন মুসল্লির প্রয়োজন হয়? হুমার নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মুসল্লির সংখ্যা কত? এ বিষয়ে ফিকহ শাস্ত্রবিদদের একাধিক মত রয়েছে। মুসআব ও আসাদের বর্ণনার ভিত্তিতে হানবালি মাজহাবের মত হচ্ছে, সংখ্যাটি ৪০। তাঁদের বক্তব্য অনুসারে, জুমার নামাজ ইয়াসরিবের মুসলিমদের ওপর ফরজ হওয়ার কারণ, তাঁরা সংখ্যায় তখন ৪০ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সত্যিই কি তাঁদের সংখ্যা ৪০-এ পৌঁছেছিল বলে তাঁদের ওপর জুমার নামাজ ফরজ হয়েছিল? নাকি নবিজির (সা) চিঠি তাঁদের কাছে পৌঁছার সময় তাঁরা কাকতালীয়ভাবে ৪০ জন ছিলেন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ইয়াসরিবে সেই সময় পর্যন্ত কতজন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, নবিজি (সা) তা জানতেন না। তিনি তাঁদের জুমার নামাজ পড়ার

নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন, এবং সেই সময় তাদের সংখ্যা ৪০ ছিল। সুতরাং ন্যূনতম মুসল্লির সংখ্যা ৪০ হতে হবে, এই মতের একাডেমিক মেরিট খুব শক্ত নয় ।অন্যান্য মাজহাবে জুমার নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার উল্লেখ নেই। অতএব শরিয়তে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা আছে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে আমাদের জোহরের নামাজ জামাতে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাটি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত। বেশিরভাগ পণ্ডিতের মত অনুসারে, ন্যূনতম সংখ্যাটি তিন, তাঁদের একজন ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন। এই মত অনুসারে, তিনজন নামাজি থাকলেই জুমার নামাজ পড়তে হবে। অন্য একটি মত অনুসারে, যদি ইমামসহ দুইজন নামাজিও থাকেন, তাহলেও জুমা পড়া উচিত।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment