নামাজের রাকাতের এবং আজানের বিধানের পরিবর্তন | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নামাজের রাকাতের এবং আজানের বিধানের পরিবর্তন | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ, ঠিক কবে থেকে নামাজের রাকাতের সংখ্যার পরিবর্তন হয়েছে তা আমরা জানি না। ইসরা ও মিরাজের সময় আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পাঁচবার নামাজের বিধান দেওয়া হয়েছিল। সে সময় প্রতিটি নামাজ ছিল দুই রাকাতের। সহিহ বুখারির বর্ণনা অনুসারে, আয়েশা (রা) বলেছেন, “আমরা মদিনায় আসার পর নামাজের রাকাতের সংখ্যা এখন যেমন আছে ঠিক তেমনই ছিল। দুই রাকাতের বিধান ছিল কেবল মুসাফিরদের জন্য।”

নামাজের রাকাতের এবং আজানের বিধানের পরিবর্তন | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নামাজের রাকাতের এবং আজানের বিধানের পরিবর্তন | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

এ থেকে ধারণা করা যায়, হিজরতের কিছু সময় আগে সাহাবিরা যখন নামাজ পড়তে শুরু করেন তখন নামাজের রাকাতের সংখ্যা ছিল এখন আমরা যেমন পড়ে থাকি তেমন। অর্থাৎ ফজর : ২, জোহর: ৪, আসর: ৪, মাগরিব: ৩, এশা: ৪। তবে এর আগ পর্যন্ত প্রতিবারের নামাজ ছিল মাত্র দুই রাকাত। সুন্নত ও নফল নামাজ আরও পরে যুক্ত হয়।

নবিজি (সা) সাহাবিদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “মুসল্লিদের আমরা কীভাবে নামাজের জন্য আহ্বান করতে পারি?” একজন সাহাবি বললেন, “আমরা খ্রিষ্টানদের মতো একটি ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারি।” তবে এই প্রস্তাবটি কেউ সমর্থন করলেন না। আরেকজন বললেন, “আসুন আমরা একটি ‘শোফার” ব্যবহার করি।” এই প্রস্তাবটিও নাকচ হয়ে গেল। আরও কিছু প্রস্তাব এল, তবে কোনোটিই গ্রহণ করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সেদিনের সভা শেষ হলো।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সেই রাতে দুজন সাহাবি, উমর ইবনুল খাত্তাব ও আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ, দুটি স্বপ্ন দেখলেন। মজার বিষয়, দুজনে ঠিক একই স্বপ্ন দেখলেন। আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ তাঁর স্বপ্নে এক লোককে কিছু জিনিস বিক্রি করতে দেখলেন (শিং, ঘন্টা বা এই জাতীয় আরও কিছু)।

আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ: আমরা কি এই জিনিসগুলো কিনতে পারি?

লোকটি: কেন?

আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ: কারণ নবিজি (সা) লোকদেরকে নামাজে আহ্বান: করার জন্য কিছু ব্যবহার করতে চান। আমার মনে হয় এগুলোর মধ্য কোনো একটি দিয়ে কাজটি হবে। লোকটি: আমি কি এর চেয়ে ভালো কিছুর কথা বলতে পারি?

আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ: অবশ্যই।

লোকটি: আপনি লোকদেরকে নামাজের জন্য ডাকতে চাইলে বলুন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ’… (একদম শেষ পর্যন্ত, আমাদের এখনকার আজানের কথাগুলো যেমন, ঠিক তেমনই)।

 

নামাজের রাকাতের এবং আজানের বিধানের পরিবর্তন | ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

স্বপ্নের এ পর্যায়ে আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ জেগে উঠলেন। স্বপ্নটি তাঁর মনে এতটাই জাজ্বল্যমান ছিল যে তিনি তৎক্ষণাৎ নবিজির (সা) কাছে ছুটে গিয়ে ঘটনাটি খুলে বললেন। নবিজি (সা) শুনে বললেন, “এটি একটি সত্য স্বপ্ন।” তিনি বেলালকে ডেকে বললেন, “হে বেলাল! উঠে দাঁড়াও, কারণ তোমারই রয়েছে সবচেয়ে জোরালো কন্ঠস্বর।” তিনি আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদকে বেলালের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বপ্নে দেখা কথাগুলো বলতে বললেন। নবিজির (সা) কথামতো আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ প্রতিটি বাক্য বলে গেলেন, এবং বেলাল উচ্চস্বরে তা পুনরাবৃত্তি করলেন। সুতরাং টেকনিক্যালি বলতে গেলে, আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদই ছিলেন ইসলামে প্রথম আজান দানকারী ব্যক্তি।

বেলাল যখন আজান দিচ্ছিলেন সে সময়ে উমর (রা) অনেকটা দৌড়ে মসজিদে ছুটে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল! আমিও এই কথাগুলো আমার স্বপ্নে দেখেছি।” আমরা দেখতে পাচ্ছি, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল আজানের কথাগুলো একাধিক সাহাবির কাছে প্রকাশ করেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে গেলে, শরিয়ার এই একটি বিষয়ই সাহাবিদের স্বপ্নের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে। তবে এখানে আইনি বিধানের বিষয়টি স্বপ্ন থেকে আসেনি। তা এসেছে নবিজির (স) সমর্থনসূচক বক্তব্য (‘এটি একটি সত্য “স্বপ্ন”) থেকে। মধিজি (সা) যদি সাহাবিদের স্বপ্নকে ‘সত্য’ বলে সমর্থন না দিতেন, তাহলে আমরা এটিকে শরিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম না।

আজানের বিধানটি কেন এইভাবে সাহাবিদের মাধ্যমে এসেছিল তা আল্লাহই ভালো জানেন। আমরা এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা বা মন্তব্য পাইনি। আমি (ইয়াসির কাদি) আবদুল্লাহ ইবনে জায়েল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। তাঁর সম্পর্কে শুধু ইবনে হাজারের কাছ থেকে একটি ছোট বাক্য জানা গেছে; আর তা হলো, “এই সেই সাহাবি যিনি তাঁর স্বপ্নের কাহিনির জন্য বিখ্যাত।” এর বাইরে আর কিছুই জানা যায়নি। আল্লাহ কেন তাঁকে স্বপ্নের জন্য বেছে নিয়েছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment