বংশপরম্পরা: আদনান থেকে মুহাম্মদ (সা) | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

বংশপরম্পরা: আদনান থেকে মুহাম্মদ (সা) | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর, মহানবি মুহাম্মদের (সা) বংশের দিকে। আমাদের নবির (সা) নাম বংশানুক্রম অনুসারে: মুহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদ মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুরাহ ইবনে কাব ইবনে লুয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফিহর ইবনে মালিক ইবনে আন-নাধার ইবনে কিনানা ইবনে খুজায়মাহ ইবনে মুদ্রিকা ইবনে ইলিয়াস ইবনে মুধোর ইবনে নিজার ইবনে মাদ ইবনে আদনান।

এই ২০টি প্রজন্মের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ সিরাহ লেখকদের সবাই একমত। তবে এই প্রজন্মগুলো সম্পর্কে খুব বেশি জানা না থাকলেও নবিজি (সা) তাঁর কোনো কোনো পূর্বসূরির কথা বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছেন। সহিহ মুসলিমে আছে, নবিজি (সা) বলেছেন, “আল্লাহ ইসমাইলের (আ) সমস্ত বংশধরের মধ্য থেকে কিনানাকে বেছে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি কিনানা থেকে কুরাইশকে, কুরাইশ থেকে বনু হাশিমকে, এবং বনু হাশিম থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন।”

নবি করিমের (সা) বংশ ছিল সেই সময়ে ওই অঞ্চলের সেরা এবং অভিজাতদের মধ্যে অন্যতম। বংশের এই ব্যাপারটি বিশেষত তাঁর সময়ের আরবদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আরবদের সবকিছুই (সামাজিক মর্যাদা, আভিজাত্য ইত্যাদি) বংশের উপর নির্ভরশীল ছিল। তাই জাফর ইবনে আবি তালিব (রা) আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজাশির সঙ্গে নবিজি (সা) সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “আল্লাহ আমাদের কাছে একজন রসুল প্রেরণ করেছেন যাঁর বংশ সম্পর্কে আমরা খুব ভালোভাবেই অবগত আছি।”

আর আল-মুগিরা ইবনে তয়াবা পারস্যের শেষ সম্রাট ইয়াজনেগার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আল্লাহ আমাদের কাছে একজনকে প্রেরণ করেছেন, যাঁর বংশ এবং তিনি কোথা থেকে এসেছেন সে সম্পর্কে আমরা ভালো করেই জানি। তাঁর জন্মের স্থান সর্বোত্তম স্থান, তাঁর বংশ সব বংশের মধ্যে সেরা, তাঁর ঘর সর্বোত্তম ঘর, তাঁর গোত্রটি সেরা গোত্র এবং তিনি নিজে আমাদের মধ্যে সেরা।”

 

 

বংশপরম্পরা: আদনান থেকে মুহাম্মদ (সা) | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

বংশপরম্পরা: আদনান থেকে মুহাম্মদ (সা) | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

বংশের আভিজাত্যের ধারণা

বংশের আভিজাত্য সম্পর্কে আমাদের মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর। এটি পরিষ্কার যে পিতামাতা বা বংশপরিচয়ের ভিত্তিতে আল্লাহ আমাদের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারন করবেন না। বিচারের দিন আল্লাহর কাছে আমাদের বংশপরিচয় একদমই অপ্রাসঙ্গিক, যদিও বিষয়টি জাগতিক বিচারে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বংশখ্যাতি বিশ্বে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত একটি বিষয় যা মানুষকে পৃথিবীতে সম্মানিত করে। এমনকি খোদ আমেরিকাতেও যদি আপনার নামের শেষে থাকে কেনেডি কিংবা রকফেলার, তাহলে আপনার জন্য অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে, এটাই বাস্ত বতা। যা-ই হোক, বংশের আভিজাত্যের বিষয়টি যতক্ষণ না বর্ণবাদে রূপ নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এতে তেমন কোনো অসুবিধা নেই।

মুধোর

আবারও আমরা মহানবি মুহাম্মদের (সা) বংশের আলোচনায় ফিরে যাব। মুধোর ছিলেন মুহাম্মদের (সা) অন্যতম পূর্বপুরুষ। কথিত আছে, তিনি প্রথম মরুভূমিতে কাফেলার সঙ্গে পরিভ্রমণের জন্য উটকে প্রশিক্ষিত করেছিলেন। উট নিয়ে রচিত তাঁর কবিতা ব্যবহার করে উটের হাঁটার গতি বাড়ানো বা কমানো হতো ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কিনানা

কিনানা তাঁর আসল নাম নয়। কিনানা শব্দের অর্থ হলো “তিরের থলে’। তিনি সাহসিকতার জন্য পরিচিত ছিলেন বলে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল কিনানা। তিনি সমাজে জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইতিহাসে উল্লেখ আছে, সেই সময় লোকেরা কিনানার সঙ্গে দেখা করার জন্য হজে মক্কায় যেত। এখানে উল্লেখ্য, ইসমাইলের (আ) সময় থেকেই ধর্মীয় রীতিনীতির অংশ হিসেবে হজ প্রচলিত ছিল। কিনানার সঙ্গে দেখা করা ছিল একটি সম্মানের ব্যাপার। তিনি অনেক দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং আরব অঞ্চলে একজন কিংবদন্তি ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।

কুরাইশ

এবার আসা যাক কুরাইশদের প্রসঙ্গে। নবিজির (সা) কথায়, আল্লাহ কিনানা থেকে কুরাইশকে বেছে নিয়েছিলেন। ‘কুরাইশ’ নামে কিন্তু কোনো লোক ছিল না। তাহলে কুরাইশ কে? এ বিষয়ে বেশ কিছু মত রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে তিন জন ব্যক্তি আছেন যাঁদেরকে কুরাইশ বলা যেতে পারে। নাধারকে বলা হয় বড় কুরাইশ, ফিহরকে মধ্যম কুরাইশ এবং কুসাইকে ছোট কুরাইশ। তাঁদের মধ্যে দুই জন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: ফিহর ও আন-নাধার।

 

বংশপরম্পরা: আদনান থেকে মুহাম্মদ (সা) | বংশানুক্রম এবং হাতির বছর | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

বংশক্রমের আলোচনা

“মুহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদ মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুরাহ ইবনে কাব ইবনে লুয়াই ইবনে গালিব ইবনে ফিহর ইবনে মালিক ইবনে আন-নাধার’। এখানে আমরা ফিহর পর্যন্ত ১২ জন, এবং আন-নাধার পর্যন্ত ১৪ জনকে পাচ্ছি। যদিও কুরাইশ উপজাতির গঠন প্রক্রিয়ায় আন-নাধার, ফিহর ও কুসাই, এই তিনজনেরই অবদান রয়েছে, তবু এক্ষেত্রে সবচেয়ে জোরালো মতটি ফিহরের পক্ষেই যায়।

ফিহরই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি কুরাইশ উপজাতির সব গোত্রকে একত্রিত করেছিলেন। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, আশারা মুবাশারা’দের (যে দশজন মুসলিমকে জান্নাতের সুসংবাদ/প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে) প্রত্যেকের পূর্বপুরুষরা ফিহর থেকেই এসেছে। তাছাড়া কুরাইশদের ১২-১৩টি গোত্রের (যেমন: বনু হাশিম, বনু জুহরা, বনু মাথজুম, বনু উমাইয়া, বনু আব্দ শামস ইত্যাদি) সবারই পূর্বপুরুষের খোঁজ করলে ওই ফিহর পর্যন্তই যেতে হয়। সুতরাং এটি প্রতীয়মান হয় যে, ফিহরই কুরাইশ।

কুরাইশ একটি উপাধি, কোনো নাম নয়। তাহলে কুরাইশ কথাটির অর্থ কী? এ বিষয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। একটি মত অনুসারে, কুরাইশ কথাটি ‘বাণিজ্য করা শব্দ থেকে এসেছে। কারণ কুরাইশরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিল। আরেকটি মত অনুসারে, কুরাইশ কথাটি একত্রিত হওয়া থেকে এসেছে। কারণ কুরাইশরা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, এবং তাদের পূর্বপুরুষদের একজন তাদেরকে মক্কায় এনে একত্রিত করেছিল। তৃতীয় মতটি হলো, কুরাইশ কথাটি এসেছে ‘বিজয়ী’ থেকে। প্রচলিত ধারণা ছিল যে কুরাইশরা মূলত একটি বিজয়ী জাতি, যারা অন্যান্য জাতিকে জয় করবে। অর্থ যা-ই হোক না কেন, বেশির ভাগ ইতিহাসবিদের মত অনুসারে ফিহরের (যিনি ছিলেন মুহাম্মদের (সা) দ্বাদশ পূর্বপুরুষ) বংশধরদের কুরাইশ বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment