আন্সারদের সম্পকে | মদিনায় প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরত, দ্বিতীয় অঙ্গীকারের ঘটনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আনসারদের ইমান দানা বাঁধছিল এবং বিকশিত হচ্ছিল। লক্ষ করুন, তাঁরা বলছেন, ‘আমরা আর কতকাল মৰিজিকে (সা) নিজের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন উপজাতির দ্বারে যারে ঘুরতে দেব? কেন আমরা তাঁকে এখনই আমাদের মধ্যে গ্রহণ করব না?” এ থেকেই বোঝা, তাঁরা নবিজির (সা) নিরাপত্তা নিয়ে কত উৎকণ্ঠিত ছিলেন।
আন্সারদের সম্পকে | মদিনায় প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
তাঁরা স্বপ্রণোদিতভাবে এ কথাও বলছেন, ‘আমরা কেন তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাব না?’ তাই হিজরতের তিন বছরের মাথায় বদরের যুদ্ধ (যা ছিল একটি আক্রমণাত্মক যুদ্ধ, রক্ষণাত্মক নয়) বাধলে তাঁরা সবাই স্বেচ্ছায় তাতে যোগ দেন। আকাবার দ্বিতীয় অঙ্গীকারে শুধু প্রতিরক্ষার কথা বলা থাকলেও যুদ্ধের সময় এলে তাঁদের কেউই পেছনে পড়ে থাকেননি।
মক্কা বিজয়ের পরে নবিজি (সা) কুরাইশ ও সাকিফের অনেক নেতাকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ প্রদান করেন। অর্থের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে তা দিয়ে একেকজন ভেড়ার পাল ভর্তি একেকটি পুরো উপত্যকা কিনে নিতে পারত। মক্কা ও আশেপাশের মুসলিমদের এত বেশি অর্থ পেতে দেখে আনসারদের মনে হলো, “যুদ্ধ করলাম আমরা, সব কষ্ট করলাম আমরা, আর যুদ্ধলব্ধ সম্পদের বেশিরভাগ পেয়ে গেল তাঁরা!” নবিজি (সা) তাঁদের এই মনোভাব বুঝতে পেরে শুধু আনসারদের নিয়ে একটি সভা ডাকলেন। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, অসন্তুষ্টির এই প্রকাশ শুধু আনসারদের মধ্যেই ঘটেছিল, মুহাজিরদের মধ্যে নয়।
সভার শুরুতেই নবিজি (সা) নিশ্চিত করলেন যে তাঁবুতে কোনো মুহাজির নেই। সভায় তিনি আনসারদের উদ্দেশে একটি সুন্দর বক্তব্য রাখলেন। তিনি বললেন: “হিজরতের বিষয়টি না থাকলে আমি আনসারদের একজন হতে পারতাম। আনসাররা যদি একদিকে যেত আর সমস্ত মানবজাতি অন্যদিকে যেত, তাহলে আমি আনসারদের দিকেই যেতাম। হে আনসারগণ, তোমরা কি এই ভেবে খুশি না যে, এই লোকগুলো ভেড়া, দিরহাম ও দিনার নিয়ে ফিরে যাচ্ছে, আর তোমরা তোমাদের সঙ্গে নিয়ে ফিরে যাবে আল্লাহর রসুলকে?” নবিজির (সা) বক্তব্যের এ পর্যায়ে আনসাররা আবেগের আতিশয্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তাঁদের মনের সব কষ্ট নিমেষেই দূর হয়ে যায়। [প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায়, আনসাররাও যুদ্ধলব্ধ সম্পদের কিছু অংশ পেয়েছিলেন। কিন্তু বাকি সম্পদের একটা বড় অংশ কুরাইশ ও সাকিফ নেতাদের দেওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? আমরা জানি, এই লোকদের ইমান তখনও মজবুত হয়নি। তাই তাদের আস্থা বাড়ানোর জন্যও নবিজি (সা) এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে মনে হয়।
কোনো এক গোত্রের নেতা তো সম্পদের বড় অংশ পেয়ে তাঁর লোকদেরকে বলেছিল, “হে আমার সম্প্রদায়। ইসলাম গ্রহণ করো। আল্লাহর কসম, এই ব্যক্তি (মুহাম্মদ) দারিদ্র্যকে ভয় করেন না, তিনি সম্পদের জন্য লালায়িত নন।” অর্থাৎ “তিনি নিশ্চয়ই নবি ছাড়া আর কিছু নন। আনসারদের সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণিত আছে। সেগুলোর মধ্যে
কয়েকটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
- “আনসারদের ভালোবাসা ইমানেরই একটি অংশ।”
- “আনসারদের ঘৃণা করা কপটতার লক্ষণ।”
- “হে আল্লাহ! আনসার ও তাদের সন্তানদের ক্ষমা করুন।”