আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) | দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) | দ্বিতীয়বারের ওহি, সাহাবিদের মধ্যে ধর্মান্তরিত হন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)। প্রথম দিকের ধর্মান্তরিতদের মতো তিনি অভিজাত কুরাইশ ছিলেন না, তবে ক্রীতদাসও ছিলেন না। তিনি ইয়েমেনি এক উপজাতির একজন ভৃত্য শ্রেণির মানুষ ছিলেন। তাঁকে মক্কায় উকবা ইবনে আবু মুআতের জন্য রাখাল হিসেবে আনা হয়েছিল।

 

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) | দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) | দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ইবনে মাসউদ (রা) নিজের কাহিনিটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, “একদিন আমি পশু চরানোর সময় দুজন লোককে মুহাম্মদ (সা) এবং আবু বকর (রা) নূর থেকে আসতে প্রথমে তাঁদের আমি চিনতে পারিনি। তাঁরা আমাকে বললেন, “হে যুবক! আমরা খুবই তৃষ্ণার্ত। তুমি কি আমাদের কিছু দুধ খাওয়াতে পার?” ইবনে মাসউদ জবাবে বললেন, “আমার মনে হয় আমি তা করতে পারব না, কারণ আমি এগুলোর মালিক নই।” লক্ষ করুন, এতে তাঁর সততার প্রকাশ পায়। উত্তর শুনে নবি করিম (সা) বললেন, “ঠিক আছে।

তাহলে তুমি আমাদের এমন একটা বয়স্ক ছাগল দেখাও, যা দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।” ইবনে মাসউদ তাঁদের একটা ছাগল দেখালেন যার দুধ দেওয়ার বয়স পেরিয়ে গেছে। অতঃপর নবিজি (সা) দোয়া করলেন এবং ছাগলের বাঁটে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দিলেন। ইবনে মাসউদের চোখের সামনে বাট দুধে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন তাঁরা দুধ দোয়ানো শেষ করে সেই দুধ পান করলেন। এটা অলৌকিক বিষয় যা নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এবার ইবনে মাসউদ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কারা?” তখন তাঁকে বলা হলো, “ইনি আবু বকর। আর ইনি নবি। ইবনে মাসউদ তৎক্ষণাৎ সেখানেই ধর্মান্তরিত হলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) সম্পর্কে নবি করিম (সা) বলেছেন, “তোমরা যদি কেউ কোরান তেলাওয়াত শিখতে চাও, তবে ইবনে মাসউদ যেভাবে তেলাওয়াত করে সেভাবে করো।” ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন, “আমি নবিজির (সা) মুখ থেকে সরাসরি ৭০টিরও বেশি সুরা শিখেছি।” ইসলাম গ্রহণকারীদের পরবর্তী ব্যাচের অনেকেই ছিলেন ক্রীতদাস, তাঁদের স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার ছিল না। দাস শ্রেণির ধর্মান্তরিতদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বেলাল ইবনে রাবাহ, খাব্বাব ইবনুল আরাত, ইয়াসির ও তাঁর স্ত্রী সুমাইয়া এবং তাঁদের পুত্র আম্মার। আলোচনার এ পর্যায়ে ধর্মান্তরের অন্য একটি কাহিনি বলব।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কাহিনিটি সেই সময়ে মক্কায় নবিজির (সা) কাছে ইয়েমেন থেকে আসা আমর ইবনে আবাসা নামের এক ব্যক্তির। তিনি নিজেই কাহিনিটি বর্ণনা করেছেন: “জাহেলি যুগে আমি যখন লোকদের প্রতিমাপূজা করতে দেখতাম তখন আমার মনে হতো, তারা নিশ্চয়ই পথভ্রষ্ট, তাদের এসব কাজ সম্পূর্ণ অসার। হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম, মক্কায় এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, তিনি এমন কিছু প্রচার করছেন যা আমার ধারণার (প্রতিমাপূজা যে ভুল) সঙ্গে মিলে যায়। তখন আমি মক্কার উদ্দেশে (ইয়েমেন থেকে) যাত্রা করলাম। মক্কায় পৌঁছে জানতে পেলাম, তিনি গোপনে ইসলাম প্রচার করছেন আর তাঁর সম্প্রদায় তাঁর প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।

আমি চুপিচুপি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তিনি মক্কার যে স্থানে ছিলেন সেখানে পৌঁছে তাঁকে সালাম জানালাম। তাঁর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কে? (অর্থাৎ আপনার পরিচয় জানতে পারি কি?)’

তিনি: আমি আল্লাহর নবি।

আমি: আল্লাহর নবি মানে কী?

তিনি: আল্লাহর বার্তাবাহক। আমি: কে আপনাকে পাঠিয়েছেন?

তিনি: আল্লাহ ।

আমি: সত্যিই কি আপনাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন? তিনি: হ্যাঁ।

আমি: আল্লাহ আপনাকে কী বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি: আত্মীয়তা রক্ষা করা, মূর্তি পূজা ও সকল বাতিল ধর্ম বিলুপ্ত করা, রক্তপাত-হানাহানি বন্ধ করা, মানুষের জানমাল ও চলার পথের নিরাপত্তা বিধান করা, আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা।

 

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) | দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

একথা শুনে আমি বললাম: আপনার রব কত সুন্দর সুন্দর বিষয় নিয়ে আপনাকে পাঠিয়েছেন! আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি, আমি আপনার ওপর ইমান আনলাম এবং আপনাকে সত্য নবি বলে বিশ্বাস করলাম। আর কে কে আপনার এই দ্বীন গ্রহণ করেছে? তিনি। একজন মুক্ত ব্যক্তি (অর্থাৎ আবু বকর) ও একজন ক্রীতদাস (অর্থাৎ বেলাল)।

আমি: আল্লাহর রসুল! আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই, আপনাকে অনুসরণ করতে চাই। তিনি এখন তা সম্ভব নয়। এখানে পরিস্থিতি যথেষ্ট প্রতিকূল। আমি গোপনে দাওয়াত দিচ্ছি আর আমার সম্প্রদায় তার চরম বিরোধিতা করছে। তুমি এখন তোমার পরিবারের কাছে ফিরে যাও। যখন শুনবে আমার বিজয় হয়েছে, তখন আমার কাছে চলে এসো। এ কথা শুনে আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে এলাম ।

এরপর এক সময় আল্লাহর রসুল মদিনায় হিজরত করেন। তখনও আমি স্বদেশেই (ইয়েমেনে) অবস্থান করছিলাম ও সব খবরাখবর রাখছিলাম। ইতিমধ্যে একদিন মদিনা থেকে একটি কাফেলা এল। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘মক্কা থেকে যিনি মদিনায় গিয়েছেন তাঁর খবর কী?’ কাফেলার লোকেরা বলল, ‘মানুষ খুব দ্রুত তাঁর ধর্ম গ্রহণ করছে। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।’ তখন আমি মদিনায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, “আল্লাহর রসুল! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, “হ্যাঁ। তুমিই সেই ব্যক্তি যে ইয়েমেন থেকে মক্কায় এসে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল।” [সহিহ মুসলিম, ৮৩২]

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment