প্রাক-ইসলামি আরব: আরবদের প্রথম বংশধর | সিরাহ অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাক-ইসলামি আরব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

প্রাক-ইসলামি আরব: আরবদের প্রথম বংশধর | সিরাহ অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাক-ইসলামি আরব, ইসলাম-পূর্ব আরব সম্পর্কে আলোচনা শুরু করব। আরব বলতে আমরা কাদেরকে বুঝব? যে আরবদের মাঝে নবিজি (সা) জন্ম নিয়েছিলেন তাদের বংশ বৃত্তান্ত আর জাতিসত্তাই বা কী ইতিহাসবিদেরা আরবজাতিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করেছেন: ১) বিলুপ্ত আরবজাতি (‘আল-আরব আল-বায়না”);

বিলুপ্ত আরবজাতি হলো আদি সভ্যতা, যা ইসলাম আসারও কয়েক হাজার বছর আগে আরব ভূখণ্ডে বাস করত। পবিত্র কোরানে তাদের কয়েকটির উল্লেখ আছে; যেমন আদ ও সামুদ। পরবর্তী আরবদের সঙ্গে তাদের কোনো জাতিগত যোগসূত্র নেই। তাদেরকে আরব বলা হয়, এই কারণে যে, তারা যে ভূখণ্ডে বাস করত তা পরবর্তীকালে আরব নামে অভিহিত হয়েছে।

 

প্রাক-ইসলামি আরব: আরবদের প্রথম বংশধর | সিরাহ অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাক-ইসলামি আরব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

প্রাক-ইসলামি আরব: আরবদের প্রথম বংশধর | সিরাহ অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাক-ইসলামি আরব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

যতদূর জানা যায়, সামুদ জাতি খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ৩,০০০ বছর আগে (এখন থেকে আনুমানিক ৫,০০০ বছর আগে) আরব উপদ্বীপে বসতি স্থাপন করেছিল। সামুদদের পরে সালেহর (আ) সম্প্রদায়ের সময়ে সেখানে সভ্যতার আবির্ভাব ঘটে। সেই সময় আদ জাতিরও বসতি ছিল ওই অঞ্চলে। ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের মত অনুসারে, ওই জাতিগুলো প্রাচীন বাবেল (ব্যবিলন) শহর থেকে পালিয়ে এসে আরব অঞ্চলে বসতি গড়েছিল। তাদের প্রত্যেকেরই একটি করে নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন; আর বাকিদের কেউ গৃহযুদ্ধ, কেউ বন্যা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

২) অবশিষ্ট আরবজাতি (‘আল-আরব আল বাকিয়া’)। এর দুটি ভাগ:

(ক) কাহতান:

কাহতানকে আরবজাতির জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাহতানের ছেলের নাম ছিল ইয়ারাব। আর সেখান থেকেই ‘আরব’ শব্দটি এসেছে। কাহতানের পুত্র ইয়ারাবই সর্বপ্রথম আরবি ভাষায় কথা বলতেন। কাহতান কোথা থেকে এসেছিল? অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে সে ছিল নুহের (আ) পুত্র স্যামের বংশধর। জনশ্রুতি আছে, নুহের (আ) তিন পুত্র ছিল। স্যাম তাদের মধ্যে একজন। ইব্রাহিম (আ), ইহুদি জাতি এবং আরামিক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী স্যামের বংশধর।

তার এক ভাই ইয়াফিফ থেকে রোমান জাতির (ককেশীয় এবং সানা জনগোষ্ঠী) উদ্ভব ঘটেছে। আর আরেক ভাই হ্যাম থেকে আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। বাইবেলেও এর উল্লেখ রয়েছে। এ নিয়ে একটি হাদিসও আছে। যদিও হাদিসটি ‘দরিফ’। অতএব দেখা যাচ্ছে, কাহতান ও ইব্রাহিম (আ) দুজনই স্যামের বংশধর, যদিও তাঁদের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই। এ বিষয়ে আরেকটি মত হলো, কাহতান ছিল ইব্রাহিমের (আ) বংশধর। আর তৃতীয় মতটি হলো, কাহতান

হুদের (আ) বংশধর (তবে এটি অতটা নির্ভরযোগ্য মত নয়)। আল্লাহ এ ব্যাপারে ভালো জানেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইতিহাসবিদদের মত অনুসারে, কাহতান ইব্রাহিমের (আ) সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন না, তবে তাঁরা উভয়ই স্যামের বংশধর ছিলেন। কাহতানের সময়কাল কখন তা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। তবে এটা ঠিক যে তিনি বাকি আরবদের (দ্বিতীয় ভাগ, ‘আদনান’) থেকে অনেক আগে পৃথিবীতে এসেছিলেন। কাহতানিরা আরবের দক্ষিণাঞ্চলে বাস করত। তবে আরব অঞ্চলে তাদের বেশ কয়েকটি বংশের কথা জানা যায়। মদিনার আউস ও খাজরাজও ছিল কাহতানি। তাদেরকে আদি আরব (আল-আরব আল-আরিবা) বলা হয় এই কারণে যে তারা প্রথম আরবিতে কথা বলা শুরু করেছিল।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

(খ) আদনান:

এই আদনানই মহানবি মুহাম্মদের (সা) পূর্বপুরুষ। সেই হিসেবে নবিজি (সা) একজন আদনানি। কীভাবে? আদনান ছিল ইসমাইলের (আ) একজন উত্তরসূরি। আমরা জানি, ইব্রাহিম (আ) ইরাক থেকে মিশরে গিয়েছিলেন। সুতরাং জাতিগতভাবে বলতে গেলে ইসমাইল (আ) ইরাক থেকে এসেছেন। ইব্রাহিম (আ) পুত্র ইসমাইলকে (আ) তাঁর মা হাজেরার সঙ্গে মক্কার এমন একটি স্থানে রেখে এসেছিলেন, যেখানে কাহতানিরা সাধারণত বসবাস করত না। একদা কাহতানের জুরহুম নামের একটি উপজাতি সেখান দিয়ে অতিক্রম করেছিল। সেই সময় ইসমাইল (আ) ওই উপজাতির একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। তখন থেকেই তিনি কাহতানিদের ভাষা আরবি বলতে শুরু করেন। স্বাভাবিকভাবে ইসমাইলের (আ) সন্তানেরা ইব্রাহিম (আ) এবং কাহতানিদের মিশ্রণ।

 

প্রাক-ইসলামি আরব: আরবদের প্রথম বংশধর | সিরাহ অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাক-ইসলামি আরব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জীবন

 

আরও সাত থেকে দশ প্রজন্ম পরে ইসমাইলের (আ) বংশে আদনান নামের এক কৃতী সন্তানের জন্ম হয়। আর এই আপনান থেকেই বিভিন্ন আরব উপজাতির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ঘটে। আদনানি উপজাতিদের মধ্যে একটির নাম কুরাইশ। অর্থাৎ কুরাইশসহ মুহাম্মদের (সা) সময়ের অন্যান্য উপজাতির পূর্বপুরুষেরা আদনানি। আরবদের ইতিহাস থেকে নিশ্চিতভাবে জানা যায়, মুহাম্মদ (সা) আদনানের বংশের ২০তম উত্তরসূরি।

আদনানিদের বলা হয় ‘আল-আরব আল-মুস্তারিবা’ (অর্থাৎ, যে আরবেরা আরবি ভাষা শিখেছে)। কারণ আরবি তাদের ভাষা ছিল না। তারা আদি আরবদের কাছ থেকে আরবি শিখেছিল। আদনানিরা মূল আরবদের চেয়ে ভালো আরবি বলতে পারত। তারা আরব উপদ্বীপের মধ্য অংশে বসতি স্থাপন করার ফলে অন্যান্য উপজাতির সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক ও নানা কারণে যোগাযোগ হতো। ফলে তারা আরব সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে সেরাটা গ্রহণ করতে শুরু করে। এভাবে তারা মূল আরবদের চেয়ে আরও মর্যাদাপূর্ণ আরব হয়ে ওঠে।

আরো পড়ুনঃ

 

Leave a Comment