ইসরা ও মিরাজ থেকে জ্ঞাতব্য | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

ইসরা ও মিরাজ থেকে জ্ঞাতব্য | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩, ইসরা ও মিরাজের ঘটনা পবিত্র কোরানে এবং ৪০টিরও বেশি ‘মুতাওয়াতির” হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এটা অস্বীকার করা কোরান ও সহিহ হাদিস অস্বীকার করারই শামিল। কোনো মুসলিম তা করতে পারেন না।

ইসরা ও মিরাজ থেকে জ্ঞাতব্য | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইসরা ও মিরাজ থেকে জ্ঞাতব্য | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

১) প্রাথমিকভাবে ইসরা ও মিরাজের উদ্দেশ্য দুটি: প্রথমত, নবি করিমকে (সা) তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত করা; দ্বিতীয়ত, তিনি যে দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করছিলেন সে বিষয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়া। সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে মুসার (আ) সাক্ষাতের ঘটনা ছিল ইসরা ও মিরাজের একটি ছোটখাটো উদাহরণ। সেখানে আল্লাহ মুসার (আ) সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাঁকে কিছু মিরাকল দান করার বিষয়টি জানিয়েছিলেন (যেমন: তাঁর লাঠি ফেলে দিলে তা সাপ হয়ে যাবে, তাঁর পকেটে হাত রেখে আবার বের করলে তা সাদা হয়ে যাবে, ইত্যাদি)।

কেন তাকে মিরাকল দান করা হয়েছিল? আসলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসাকে (আ) তা দিয়েছিলেন তাঁর বিশ্বাস আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে। দেখা যাচ্ছে, এমনকি নবিদেরও ইমান জোরদার করার প্রয়োজন হতে পারে। ইব্রাহিমও (আ) বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখান আপনি কীভাবে মৃতকে জীবিত করেন। নিশ্চয়ই আমি তা (আপনি যা করতে পারেন) বিশ্বাস করি, তবে এ শুধু আমার মনকে বুঝ দেওয়ার জন্য।”

[সুরা বাকারা, ২:২৬০] নবি করিমকে (সা) আল্লাহ কী মিরাকল দেখিয়েছিলেন যা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারে? নবিজির (সা) জন্য মিরাকলটি ছিল ইসরা ও মিরাজ, যেখানে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দেখিয়েছিলেন তিনি যা প্রচার করছেন তা কোনো কল্পনার বিষয় নয়। জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, নবি ইত্যাদি সবকিছুই সত্য। নবিজি (সা) ছাড়া অন্য কেউ এসব দেখেনি।

২) একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, পুরো ইসরা ও মিরাজের ঘটনাটি ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রসুলের (সা) জন্য একটি বিশেষ ব্যক্তিগত উপহার। সাধারণভাবে, নবিদের মিরাকল দেওয়া হয় অবিশ্বাসীদের কাছে তাঁদের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য। তবে কখনও কখনও আল্লাহ তায়ালা শুধু নবিদের জন্যই, অর্থাৎ তাঁদের সন্তুষ্ট করার জন্যই কিছু মিরাকল দেন। ইসরা ও মিরাজ তেমনি একটি উপহার।

৩) এই উপহার এমন এক সময়ে দেওয়া হয়েছিল যখন নবিজি (সা) অত্যন্ত দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছিলেন। সেই সময় তিনি তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী ও স্নেহশীল চাচাকে হারিয়েছিলেন; এবং তায়েফের লোকেরা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে পাথর ছুড়ে মেরেছিল। সুতরাং বলা যায়, সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবেই তাঁর কাছে উপহারটি এসেছিল। এ থেকেই আমরা এর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারি। এ থেকে আমরা আরও দেখতে পাই, প্রতিটি কষ্টের পরেই স্বস্তি রয়েছে। (৯৪:৫] যত বেশি কষ্ট, তত বেশি স্বস্তি: যদি আমরা ধৈর্যশীল হই ও অবিচল থাকি।

 

৪) ইবনে কাসির বলেছেন, নবি করিম (সা) ইসরা ও মিরাজে যা দেখেছিলেন তার একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি মানুষের মধ্যে কেউ দেখতে পেত, তাহলে সে পাগল হয়ে যেত। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, নবিজি (সা) সব দেখে ফিরে এসে কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়েও নিয়েছিলেন। এ থেকে আমরা তাঁর ইমান, সাহস ও দৃঢ় মনোবলের পরিচয় পাই, যা স্বয়ং আল্লাহ কোরানে উল্লেখ করেছেন, (11) “তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি বা দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি।” [৫৩:১৭] এখানে আল্লাহ নবিজির (সা) সাহসের প্রশংসা করছেন।

একটি হাদিসে আছে, নবিজি (সা) আছে, বলেছেন, “আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমরা এতটা হাসতে পারতে না; বরং অনেক কান্নাকাটি করতে।” অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেছেন, “আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের রেখে মাঠে ময়দানে কিংবা মরুভূমিতে বেরিয়ে পড়তে (অর্থাৎ পাগল হয়ে যেতে)।

৫) এই ঘটনা থেকে নবি করিমের (সা) মানবিক রূপের (আনন্দ, দুঃখ, ভয়, উত্থান-পতন ইত্যাদি) বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই। ফিরে আসার পর তিনি অত্যন্ত নার্ভাস ছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে লোকেরা এই ঘটনা অস্বীকার করবে, তাঁকে নিয়ে উপহাস করবে। তবু তিনি আবু জেহেলকে সত্য ঘটনা নির্দ্বিধায় বলে নিয়েছিলেন, যা তাঁর সাহসের পরিচয় বহন করে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৬) কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের কখনোই ইসলামের বাণী পরিবর্তন বা তাতে প্রীতিকর রং লাগানো উচিত নয়। আমাদের কাজ হলো ‘প্রোডাক্ট’ বিক্রি করা (এক্ষেত্রে ইসলামের বাণী প্রচার করা)। আমরা এখানে ‘বিক্রয়কর্মী’), আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তন করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আল্লাহ কোরানে বলেছেন, “তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা, আর হিসাবনিকাশ তো আমার কাজ।” [সুরা রাদ, ১৩:৪০ ) এই আয়াতটি রসুলের (সা) উদ্দেশে নাজিল হয়েছে। সন্দেহ নেই, আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসুলকে (সা) যা করতে বলেছেন, তিনি তা সঠিকভাবেই পালন করেছেন।

৭) ইসলামের সত্যতা প্রদর্শনের জন্য প্রমাণ উপস্থাপন করার অনুমতি রয়েছে। যখন কুরাইশরা নবিজিকে (সা) জেরুসালেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল, তখন তিনি কিন্তু তাদের বলেননি “আমাকে বিশ্বাস করো।” বরং বায়তুল মাকদিসের অবয়ব তাঁর যতটা মনে ছিল, ততটারই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন, যাতে কুরাইশরা তাঁর বর্ণনার সঙ্গে বায়তুল মাকদিসের প্রকৃত অবয়বের মিল- অমিল যাচাই করে তাঁর বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারে।

৮) এখানে আমরা ইব্রাহিমের (আ) দুই পুত্রের (হজরত ইসমাইল (আ) ও হজরত ইসহাক (আ)) মধ্যে একটি চমৎকার যোগসূত্র দেখতে পাই। ইসরা ও মিরাজ মক্কায় শুরু হয়ে জেরুসালেম পর্যন্ত গিয়ে, তারপর আবার জেরুসালেম হয়ে মক্কায় এসে শেষ হয়। এই দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্রটি খুবই স্পষ্ট। তবে এখানে মক্কাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যেহেতু যাত্রার শুরু এবং শেষ সেখানেই।

এখান থেকে আমরা মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আকসা এই দুটি মসজিদের গুরুত্ব সম্পর্কেও জানতে পারি। শেষ সময়ে এই বায়তুল মাকদিসেই ইসা (আ) ও দাজ্জালের মধ্যে চূড়ান্ত লড়াই সংঘটিত হবে। খেয়াল করুন, খ্রিষ্টানরা সুলায়মানের (আ) টেম্পলের পবিত্রতা পদদলিত করে সেটাকে ভগ্নস্তূপে পরিণত করেছিল। উমর (রা) জেরুসালেম বিজয়ের পর সেখানকার জঞ্জাল পরিষ্কার করে ঠিক সেই একই জায়গাতেই মসজিদটি নির্মাণ করেন, কারণ তিনি বায়তুল মাকদিসের মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। কিছু পণ্ডিতের ব্যাখ্যা অনুসারে, এই ঘটনার মধ্যে কেবলা বায়তুল মাকদিস থেকে কাবার দিকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ইসরা ও মিরাজের ঘটনার দুই বছরের মধ্যেই কেবলা পরিবর্তন হয়েছিল।

৯) বোরাকের অস্তিত্ব, মিরাজ যাত্রা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে আমরা দেখতে পাই, আমাদের চেনা পৃথিবীর বাইরে আরও পৃথিবী রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের চারপাশের সৃষ্টির বাইরে আরও সৃষ্টি রয়েছে। আমাদের কখনোই ভাবলে চলবে না। যে, মানুষই আল্লাহ তায়ালার একমাত্র সৃষ্টি। আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলেছেন, “আর তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও।” [সুরা নাহল, ১৬:৮]

১০) বোরাকের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের কার্য-কারণ সম্পর্ক বোঝাচ্ছেন। কোনো কিছুই এমনিতে হয় না, চেষ্টা থাকতে হয়। অন্য কথায়, শুধু ‘আল্লাহ ভরসা’ বলে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। বরং লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে। এমনকি আল্লাহ আপনাকে আশীর্বাদস্বরূপ কোনো মিরাকল দিলেও তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, নবিজিকে (সা) বায়তুল মাকদিসে পৌঁছানোর জন্য বোরাকে আরোহণ করতে হয়েছিল, এবং সেখানে পৌঁছার পর বোরাকটিকে সেখানে বেঁধে রাখতে হয়েছিল।

পবিত্র কোরানে আছে: যখন মরিয়মকে (আ) আশীর্বাদ হিসেবে আকাশ থেকে ফল পাঠানো হয়েছিল, তখন ফলটি ছিল একটি গাছে এবং ফলটি পাড়ার জন্য গাছটিকে ঝাঁকাতে হয়েছিল। [১৯:২৫] যেখানে মিরাকলের জন্যও চেষ্টা করতে হয় (অন্য কথায়, একটা উপলক্ষ্যের প্রয়োজন হয়), সেখানে দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে চেষ্টার প্রয়োজন অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

আল্লাহ এমনিতেই কিছু দিয়ে দেন না। কিছু পাওয়ার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের অর্থ চাই? আমরা রোগ থেকে আরোগ্য পেতে চাই? আমরা যা চাই, আল্লাহ তা পাওয়ার পথ তৈরি করে রেখেছেন। তবে তা পেতে আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে। এমনকি লোহিত সাগরকে বিভক্ত করার জন্য মুসাকে (আ) আল্লাহ বলেছিলেন, “তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করো।” [২৬:৬৩) অর্থাৎ ঘটনাটি আপনাআপনি ঘটেনি, মুসার (আ) লাঠির আঘাতের প্রয়োজন হয়েছে। অতএব আমরা যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই, তার জন্য আল্লাহ কাজ ও কারণ ঠিক করে দিয়েছেন।

১১) দুধ ও মদের কাহিনির মধ্য দিয়ে আমরা নবি করিমের (সা) মনের পবিত্রতার পরিচয় পাই। এই ঘটনার সময় মদ হারাম ছিল না। তবু তিনি মন্দের বিপরীতে ভালোকে বেছে নিয়েছিলেন, কলুষতার ওপরে শুদ্ধতাকে স্থান দিয়েছিলেন। জিব্রাইল (আ) বলেছেন, “আপনি ভালোকে বেছে নিয়েছেন। আপনি যদি মদ বেছে নিতেন, তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হতো।” আমরা ইতিমধ্যে মদের চেয়ে দুধের অনেক বেশি উপকারিতার কথা আলোচনা করেছি। এখানে একটি প্রতীকী বিষয় হলো, নবিজির (সা) সামনে দুটি পথ ছিল: ইসলাম (সঠিক পথ) বনাম অন্য (ভ্রান্ত) পথ। তিনি ভ্রান্ত পথের ওপরে স্থান দিয়েছিলেন ইসলামকে, অর্থাৎ সঠিক পথকে।

(১২) ইসরা ও মিরাজে নবিজি (সা) ইমানের বেশিরভাগ স্তম্ভ বাস্তবিকভাবেই দেখতে পেয়েছিলেন: (ক) তিনি আল্লাহর পর্দা দেখেছেন এবং আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। (খ) তিনি জিব্রাইলকে (আ) আসল রূপে দেখেছেন, অন্য অসংখ্য ফেরেশতাদেরও দেখতে পেয়েছেন। (গ) তিনি প্রধান সব নবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন; (ঘ) তিনি তাঁদের সঙ্গে কেয়ামতের দিন ও এর লক্ষণ সম্পর্কে আলাপ করেছেন। (ঙ) তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেছেন; (৫) এমনকি তিনি আদমের (আ) ডান ও বাম দিকে লোকদের দেখে এবং সপ্তম আকাশের ওপরে কলমের লেখার শব্দ শুনে কদরের বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন।

১৩) এখানে আমরা সব নবির মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় দেখতে পাই। নবিজিকে (সা) নামাজের নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করার বিষয়ে আল্লাহর আদেশ সব নবিই মেনে নিয়েছিলেন। এমনকি মুসা (আ) নিজের উম্মতের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলেও মহানবি মুহাম্মদের (সা) প্রতি কোনো বিরূপ মনোভাব, ক্রোধ কিংবা হিংসা প্রকাশ করেননি।

১৪) আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে মহানবি মুহাম্মদকে (সা) সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তিনি আদম সন্তানদের ‘সাইয়িদ’ বা নেতা, তিনি নবিদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পার হয়ে আরও এগিয়ে গিয়েছেন, আল্লাহর পর্দা দেখেছেন এবং কলমের লেখার শব্দ শুনেছেন। অন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষে এরকম মর্যাদার স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

১৫) ইসরা ও মিরাজের মধ্য দিয়ে আমরা নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদার পরিচয় পাই। ইসলামে অন্য কোনো বিধান এরকম বিশেষ পদ্ধতিতে নাজিল করা হয়নি। সন্দেহ নেই, নামাজই আমাদের ধর্মের মূল।

১৬) মুসার (আ) উম্মাহর ওপর আমাদের উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্ব। প্রতিদিন পাঁচবার নামাজের বিষয়ে মুসা (আ) বলেছেন, “আমার উম্মাহ তা করতে পারত না।” তবে আল্লাহ জানতেন যে, আমরা তা পারব এবং নবিজি (সা) তা গ্রহণ করেছিলেন। সব যুগেই আমাদের উম্মাহর একটি বড় অংশ নিয়মিতভাবে দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে।

 

ইসরা ও মিরাজ থেকে জ্ঞাতব্য | রাতের ভ্রমণ এবং ঊর্ধ্বলোকে আরোহণ-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইসরা ও মিরাজের ধর্মতাত্ত্বিক আতব্য ও গুরুত্ব

১) আল্লাহ যে আমাদের ওপরে অবস্থান করছেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্ম নবি করিমের (সা) উর্ধ্বলোকে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, ‘আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান’। এই ধারণা যে ভুল তা মিরাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।

২) জান্নাত ও জাহান্নাম আছে এবং আমাদের বর্তমান সময়েও বিরাজ করছে।

৩) দুধ যেমন বিশুদ্ধতার প্রতীক, মানুষের ফিতরাও তেমনি স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ। ইসলাম ধর্ম একই রকম বিশুদ্ধ যা আমাদের সত্তার সঙ্গে খাপ খায়, এটি আমাদের কলুষিত করে না।

ইসরা ও মিরাজের ফিকহ-বিষয়ক জ্ঞাতব্য ও গুরুত্ব

১) কারও দরজা দিয়ে প্রবেশের আগে অনুমতি চাইতে হবে। জিব্রাইল (আ) প্রতিটি আকাশে প্রবেশের সময় অনুমতি চেয়েছিলেন। দরজায় কড়া নাড়ার পর ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাইলে শুধু ‘এটা আমি’ বললে হবে না, আমাদের নাম বলতে হবে, যেমনটি জিব্রাইল (আ) বলেছিলেন, “আমি জিব্রাইল।” এ সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিসও আছে, যেখানে একজন সাহাবি নিজের নাম উল্লেখ না করে ‘এটা আমি’ বললে নবিজি (সা) বিরক্ত হয়েছিলেন।

২) যখন একজন আরেকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কোথাও যান, তখন যিনি যান তিনি সেখানে আগে থেকে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে প্রথমে সালাম জানাবেন। আমরা জানি, ইসরা ও মিরাজে অন্য নবিগণ মহানবি মুহাম্মদের (সা) অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু নবিজি (সা) তাঁদেরকে আগে সালাম জানিয়েছিলেন।

৩) কাউকে সুসংবাদ দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। অন্য নবিগণ মুহাম্মদকে (সা) সুসংবাদ দিয়েছিলেন।

৪) অন্যের মঙ্গল হতে পারে এমন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া অনুমোদিত হয়েছে এবং উৎসাহিত করা হয়েছে। নবি করিম (সা) না চাইলেও মুসা (আ) তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কাউকে সাহায্য করা আমাদের দ্বীনেরই অংশ।

৫) কাবার দিকে পিঠ দিয়ে (অর্থাৎ কাবার উল্টোদিকে মুখ করে) বসে থাকা বৈধ। ইব্রাহিম (আ) বায়তুল মামুরের দিকে পিঠ দিয়ে বসেছিলেন। আমাদের কোনো কোনো সংস্কৃতিতে এমন ধারণা আছে যে, কাবার দিকে পিঠ দিয়ে থাকার অনুমতি নেই। কিন্তু এটা সঠিক নয় বলেই এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়।

৬) আমরা পরোক্ষভাবে (সরাসরি নয়) দেখতে পাই, দিনের বেলা ভ্রমণের চেয়ে রাতের বেলা ভ্রমণ শ্রেয়। এ সম্পর্কে একটি হাদিসও রয়েছে। নবিজি (সা) বলেছেন, “তোমরা যখন ভ্রমণ করো, তা রাতে করো; কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দূরত্ব অতিক্রম করা তখন আরও সহজ করে দেন।” তাই বলে দিনে ভ্রমণে কোনো অসুবিধা নেই, তবে দুটোর মধ্যে বেছে নিতে হলে রাতের ভ্রমণই উত্তম।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment