উম্মে মাধাদের কাহিনি | মদিনায় হিজরত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, উম্মে মাবাদ ছিলেন একজন বয়স্কা বেদুইন নারী। তিনি মদিনার বাইরে কাদিস (বা কুদাইদ) নামক স্থানে মরুভূমির মধ্যে একটি তাঁবুতে বাস করতেন। দিনের বেলায় খাবার ও পানির অন্বেষণ করা ছিল তাঁর অন্যতম প্রধান কাজ। একদিন তিনি তাঁর স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন, তখন তাঁবুর বাইরে কিছু লোকের কথাবার্তার আওয়াজ শুনতে পেলেন। লোকগুলো ভেতরে আসার অনুমতি চাইছিল। একজন দরিদ্র বয়স্ক নারী হিসেবে তাঁর তো হারানোর মতো কিছু নেই। তাই কিছু না ভেবেই তিনি তাঁদের ভেতরে আসতে দিলেন।
উম্মে মাধাদের কাহিনি | মদিনায় হিজরত থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
অনুমতি পেয়ে যে লোকগুলো তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, তাঁরা আর কেউ নন, স্বয়ং নবি করিম (সা) ও আবু বকর (রা)। উম্মে মাবাদের তাঁদের চিনতে পারার কথা নয়। এই বর্ণনাটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ উম্মে মাবাদ ছিলেন সেইসব গুটিকতক সাহাবির একজন যাঁরা নবিজির (সা) শারীরিক অবয়ব ও চেহারার বর্ণনা নিয়েছেন। তাঁর কথায়, নবিজি (সা) ছিলেন সুদর্শন, মাঝারি উচ্চতার; লম্বাও নন বা খাটোও নন, চুলগুলো ছিল কিছুটা লম্বা, ইত্যাদি, যা আমরা দ্বিতীয় পর্বে। উল্লেখ করেছি।
নবিজি (সা) ও আবু বকর (সা) তাঁবুতে প্রবেশ করে বললেন, “আমরা কি আপনার কাছ থেকে কিছু খাবার কিনতে পারি?” লক্ষ করুন, তাঁরা বিনামূল্যে কিছু না। তবু কত আদব-কায়দার সঙ্গে কথাটি জিজ্ঞেস করলেন। উম্মে মাধান ক্ষমা চেয়ে বললেন, দেওয়ার মতো কিছুই তাঁর কাছে নেই। আসলে তাঁর স্বামী তখন খাবারের সন্ধানে বাইরে বেরিয়েছিলেন।
নবিজি (সা) তাঁবুর এক কোণে একটি বুড়ো ছাগল দেখতে পেলেন। দেখে বোঝা যাচ্ছিল ছাগলটির বাচ্চা জন্ম দেওয়ার বয়স পেরিয়ে গেছে, ফলে তার ওলানে কোনো দুধ ছিল না। নবিজি (সা) ছাগলটি দোয়ানোর জন্য উম্মে মাবাদের অনুমতি চাইলেন। উম্মে মাবাদ বললেন, “সেই দিন (অর্থাৎ ছাগলটির দুধ দেওয়ার বয়স) তো অনেক আগেই চলে গিয়েছে।” নবিজি (সা) আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তবুও কি আপনি আমাকে অনুমতি দেবেন?” উম্মে মাবাদ জানতেন যে তা অসম্ভব। তবু নবিজির (সা) বারবার অনুরোধে তিনি বললেন, “আপনি যদি চান, তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।”
অনুমতি পেয়ে নবিজি (সা) আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে ছাগলটির ওলানে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দুধে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। তারপর আবু বকর (রা) ছাগলটি দোয়ানো শুরু করলেন। সেই দুধ তাঁরা তিনজন পেট পুরে পান করার পরও বেশ খানিকটা রয়ে গেল। উম্মে মাবাদ তা স্বামীর জন্য রেখে দিলেন।
উম্মে মাবাদ এই ঘটনায় ভীষণ অবাক হলেন; স্বামী ফিরে এলে তাঁকে সব খুলে বললেন। শুনে তাঁর স্বামীও অবাক হলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে উম্মে মাবাদ স্বামীকে নবিজির (সা) চেহারা ও শারীরিক গঠনের বিবরণ দিলেন। সব শুনে স্বামী বললেন, “এ দুজন নিশ্চয়ই তাঁরা যাঁদের কুরাইশরা হন্যে হয়ে খুঁজছে।” তিনি আরও বললেন, “তুমি কি শোনোনি যে কুরাইশদের একজন নিজেকে নবি বলে দাবি করেছে?” এবার উম্মে মাবাদের মনে হলো, তিনি নিশ্চয়ই একজন নবি! তাঁরা দুজনেই ইসলাম গ্রহণ করলেন।
বর্ণিত আছে, নবিজি (সা) মদিনায় যাওয়ার পথে আরও দুই ব্যক্তিকে ধর্মান্তরিত করেছিলেন। তবে আমরা তাঁদের নাম-পরিচয় জানি না। এখানে লক্ষণীয়, তিনি যখন নিজের জীবন রক্ষার্থে বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিচ্ছেন, তখনও মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়ে চলেছেন। যখনই ভালো কিছু করার সুযোগ আসছে, তিনি তার সদ্ব্যবহার করছেন।
আরও পড়ূনঃ