বিখ্যাত সাহাবি উসমান ইবনে মাজউনের সঙ্গে ওয়ালিদ ইবনুল মুগিরার বন্ধুত্ব ছিল। ওয়ালিদ ছিলেন সেই সময়ে মজার একজন অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি।। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন, “আমি উসমান ইবনে মাজউনকে আমার সুরক্ষা দিয়েছি।” সুরা মুদাসসিরে আল্লাহ এই ব্যক্তির কথাই বলেছেন। এই সুরক্ষার কারণে উসমান সম্পূর্ণ নিরাপদে ছিলেন, কেউ তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।
উসমান ইবনে মাজউন | আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় অভিবাসন (হিজরত) | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন, আশেপাশের অন্য মুসলিমদের নির্যাতিত হতে দেখে উসমানের মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধ জেগে উঠেছিল। তাঁর মনে ‘তারা কত কষ্ট ভোগ করছে, অথচ আমি নিরাপদে আছি।’ অতএব তিনি ওয়ালিদকে বললেন, “আমি স্বাধীনভাবে থাকছি আর আমার ভাইয়েরা অবর্ণনীয় কষ্ট করছে, এ আমি সহ্য করতে পারছি না। দয়া করে আপনি আমার প্রতি আপনার সুরক্ষা ফিরিয়ে নিন।” যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনভাবে থাকার বিষয়ে কোনো অসুবিধা নেই, তবু তিনি বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছায় তাঁর সুরক্ষা ফিরিয়ে দিলেন। তারপর ওয়ালিদ ইবনুল মুগিরা সবাইকে জানিয়ে দিলেন, “উসমান তাঁর প্রতি আমার সুরক্ষা ফিরিয়ে নিতে বলেছেন।”
একদিন লাবিদ নামের মক্কার বাইরের এক বিখ্যাত কবি এক সমাবেশে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। উসমান তখন সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। লাবিদ কবিতার ছন্দে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুই নিরর্থক।” শুনে উসমান মন্তব্য করলেন, “’সাদাতা’– আপনি সত্য বলেছেন।” [প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, নবিজি (সা) পরবর্তীকালে লাবিদের এই পংক্তিটি সম্পর্কে বলেন, কোনো কবির মুখ দিয়ে এটিই সবচেয়ে সত্য কখন। তারপর লাবিদ আবৃত্তি করলেন, “নিঃসন্দেহে প্রতিটি বরকত এক সময় অদৃশ্য হয়ে যাবে।” এবার উসমান মন্তব্য করলেন, “’কাজাবৃতা’ – আপনি এবার মিথ্যা বলেছেন। জান্নাত কখনোই অদৃশ্য হবার নয়। জান্নাতের আনন্দ কখনো শেষ হবে না।”
এই বিষয়টি ভালো করে লক্ষ করুন: এক সম্মানিত অতিথি কবি কবিতা আবৃত্তি করছেন, সব কুরাইশ তাঁর চারপাশে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করছে, আর উসমান তাঁকে আবৃত্তিতে বাধা দিচ্ছেন। লাবিদ বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করলেন, “আপনি কি আপনার অতিথির সঙ্গে এই রকম আচরণ করেন? এ তো চরম অভদ্রতা।” লাবিদ তো আর মক্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি (মুশরিক আর মুসিলমদের মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্কের) জানেন না।
সুতরাং তাঁর কাছে মনে হলো, উসমান অযথাই প্রশ্ন করে তাকে বিরক্ত করছেন। সেই সময় কেউ একজন এসে উসমানকে সজোরে আঘাত করে। আঘাতের চোটে তাঁর বাম চোখ ফুলে যায়। ওয়ালিদ পরে এই ঘটনা শুনে উসমানকে বলেন, “তুমি কেন আমার সুরক্ষা ফিরিয়ে দিয়েছ? ফিরে এসো। আমি তোমাকে আবার সুরক্ষা দেব।” জবাবে উসমান বলেন, “না, আমার বাম চোখের মতো ডান চোখেরও বরকতের প্রয়োজন আছে।” উল্লেখ্য, লাবিদ পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
আরো পড়ূনঃ