কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ, নবি করিমের (সা) বয়স যখন আনুমানিক ৩৫ বছর, অর্থাৎ খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ের ১০ বছর পরে, কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। তার আগে সেটি একবার অগ্নিকাণ্ডে এবং আরেকবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জানা যায়, এক নারী কাবাঘরের কাছাকাছি এক জায়গায় রান্না করছিল। সেই সময়ে বাড়িগুলো কাবাঘর থেকে পাঁচ-দশ ফুট দূরে অবস্থিত ছিল।

 

কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, এখন বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা কাবাঘর থেকে কয়েকশ ফুট দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সে সময় তো এখনকার মতো হাজার হাজার মানুষ তাওয়াফ করতে আসত না। এমনকি ১৯৭০ দশকেও সাফা ও মারওয়ার ঠিক বাইরেই বাড়িঘর ছিল। তখনও কাবাঘর এতই ছোট ছিল যে সাফা ও মারওয়াতে যাওয়ার জন্য কাবা থেকে বের হয়ে কিছু দূর হেঁটে যেতে হতো।] যা-ই হোক, রান্না করার সময় হঠাৎ করে চুলা থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে কাবার কাপড়ে গিয়ে পড়ে আগুন ধরে যায়।

এতে কাবাঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। পরবর্তী সময়ে মক্কায় এক বিশাল বন্যা হয়। সেই বন্যায় কাবাঘরের ছাদ ও দেয়ালগুলোর বেশ কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রথমে আগুন ও পরে বন্যায় কাবাঘরের মূল কাঠামোর বড় রকমের ক্ষতি হওয়ার ফলে সম্পূর্ণ কাবাঘরটি আবার নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মক্কা শহরটি পাহাড়ের অববাহিকায় অবস্থিত, ফলে সেখানে গড়ে প্রতি দশ বছরে একবার বন্যার ঝুঁকি থাকে। ১৯৪৭/১৯৪৮ সালে এমন বন্যা হয়েছিল যে হাজিদের সাঁতার কেটে তাওয়াফ করতে হয়েছিল। এখন অবশ্য বন্ধ পানি নিষ্কাশনের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাবাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সময়ে জুদ্দা (পরবর্তীকালে জেদ্দা নামে পরিচিত) শহরে নির্মাণসামগ্রীর এক বিশাল বিক্রয়মেলা চলছিল। হঠাৎ সেখানে নির্মাণসামগ্রীর বিক্রয়মেলা হওয়ার কারণ কী ছিল? এর কিছুদিন আগে ইয়েমেনের একটি শহর পার্সিয়ানদের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তখন শহরের গির্জাটি পুনর্নির্মাণের জন্য রোমের সিজার কাঠ, মার্বেল পাথর ইত্যাদি নির্মাণসামগ্রী আর কিছু কারিগর জাহাজে করে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল অন্যরকম। সিরাহর বইগুলোর তথ্য অনুসারে, জাহাজটি সেই সময়ে জুদ্দা উপকূলে এক ঝড়ের মুখে পড়ে। তাতে জাহাজটির বিস্তর ক্ষতি হলেও সেটা জুদ্দায় পৌঁছুতে সক্ষম হয়। ফলে কী হলো— গির্জা নির্মাণের জন্য পাঠানো সব ব্যয়বহুল মার্বেল, কাঠ, কারিগর ইত্যাদি রয়ে গেল। জুন্দায়! সুবহানআল্লাহ! বিষয়টি সত্যিই অবাক করার মতো। লক্ষ করুন, আরব অঞ্চলে সেই সময় এ ধরনের নির্মাণসামগ্রী ও কারিগর থাকার কোনো কারণই ছিল না।

জাহাজের লোকদের রোমে ফিরে যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা প্রয়োজন। তাই তারা তাদের পণ্যগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কুরাইশরা এই খবর শুনতে পেয়ে তাদের গচ্ছিত সমস্ত সম্পন্ন একত্রিত করে জুদ্দায় গিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য কিনে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসে। সেই সঙ্গে সেখানকার প্রশিক্ষিত কারিগরদেরও মক্কায় নিয়ে আসে।

কাবা পুনর্নির্মাণের সামগ্রী না হয় হাতে এল। এখন কুরাইশদের মধ্যে আরেক ভাবনার উদয় হলো: ‘আমরা কি আল্লাহর ঘরটি একেবারে ধ্বংস করে ফেলব?’ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুসারে, সেই সময় জমজম কূপ থেকে একটি বিশাল সাপ বেরিয়ে এসেছিল। কেউ কাবার কাছে পৌঁছুতে চাইলেই সাপটি তার দিকে ফিরে চেয়ে হিস্ হিস্ শব্দ করত। এ নিয়ে কী করা যায় তা নিয়ে যখন কুরাইশরা ভাবছিল, তখন আল্লাহ সাপটিকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে একটি বিশাল পাখি পাঠালেন। কুরাইশরা এটাকে কাবাঘরের কাছে যাওয়ার অনুকূলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ইশারা বলে ধরে নিল। তারপরও তারা যথেষ্টই ভয় পাচ্ছিল।

অবশেষে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ওয়ালিদ ইবনুল মুগিরা, যে ছিল সেই সময়ে মক্কার একজন উচ্চবংশজাত সম্মানিত ব্যক্তি। [উল্লেখ্য যে, ওয়ালিদ পরবর্তীকালে ইসলামের সঙ্গে ঘোরতর শত্রুতা করেছিল।] ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা এসে একটি কুঠার দিয়ে একদিকের দেয়াল ভেঙে ফেলল। তখন কেউ তাঁকে একটুও সাহায্য করতে যায়নি। আসলে মক্কাবাসী ওয়ালিদকে ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।

তারা ভেবেছিল, সে যদি ওই রাতে বেঁচে থাকে, তাহলে পরের দিন তারা তার সঙ্গে যোগ দেবে। তাই পরের দিন সকালে ওয়ালিদ ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগ পর্যন্ত কেউই তাঁর সঙ্গে যোগ দেয়নি। ইবনে ইসহাকের বর্ণনা অনুসারে, ওয়ালিদ তাঁর কুড়াল তুলে বলেছিলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের ওপর রাগ কোরো না। আমরা কাবাঘর পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করছি মাত্র।” পরের দিন সবাই ওয়ালিদ ইবনুল মুগিরার সঙ্গে যোগ দিয়ে কাবাঘর ভেঙে নতুন করে নির্মাণের কাজে নেমে পড়ে।

কুরাইশরা তাদের সব গোত্রকে চারটি দলে ভাগ করেছিল। প্রতিটি দল। একটি দেয়াল নির্মাণ করবে। কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোত্র বনু আবদ মানাফ (যার মধ্যে বনু হাশিমও রয়েছে) পেয়েছিল সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দেয়াল নির্মাণের দায়িত্ব। সেই সময়ে কুরাইশদের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব আবদুল মুত্তালিবও ছিলেন এই গোত্রের। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গোত্র বনু মাখজুম পেয়েছিল দ্বিতীয় সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ প্রাচীর নির্মাণের দায়িত্ব। আবু জেহেল ছিল এই গোত্রের।

আমরা কাবার এক দেয়ালকোণে ‘কালো পাথর’ আছে বলে জানি। বনু আবদ মানাফ ও বনু মাখজুম গোত্রদ্বয় যে দুটি দেয়াল নির্মাণ করছিল তাদের মিলিত কোণেই ছিল সেই ‘কালো পাথর’। সমস্যা দেখা দিল যখন নির্মাণকাজ ওই কোণ পর্যন্ত পৌঁছুল। পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গোত্রই পাথরটিকে তাদের অংশের বলে দাবি করে বসল। তখন অন্য গোত্রগুলোও এই বলে বাদ সাধল যে, শুধু ওই দুটি গোত্রই কেন সুযোগ পাবে? বিষয়টি নিয়ে বিবাদ এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কাবা নির্মাণের কাজ পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

বনু মাখজুম গোপনে আরও কিছু গোত্রের সঙ্গে এই চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল যে, পাথর স্থাপন করার জন্য তারা প্রয়োজনে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। চুক্তি স্বাক্ষর বা প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তারা সেখানকার রীতি অনুযায়ী সবাই একসঙ্গে উটের রক্তে হাত ডুবিয়েছিল। জাহেলি যুগের রীতি দেখুন: আপনি নিজেকে শেষ করে ফেলবেন, আপনার স্ত্রী বিধবা হবে এবং সন্তানেরা এতিম হবে শুধু একটি পাথর স্থাপনের মধ্য দিয়ে নিজের বংশের গর্ব ও সম্মান সমুন্নত রাখার জন্য! গিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত মক্কার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি আবু উমাইয়া ইবনুল এভাবেই তারা নিজেদের মধ্যে এক বড় রকমের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মক্কার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি আবু উমাইয়া ইবনুল মুগিরা এগিয়ে এসে ঘোষণা দিলেন, “এখানে আর কোনো রক্তপাত হবে না। আমরা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আর লড়াই করব না। এসো, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাকেই দেব যে এরপরে সর্বপ্রথম কাবার প্রধান দরজা’ দিয়ে প্রবেশ করবে।” এটা ছিল অনেকটা ভাগ্যগণনার মতোই। যে ব্যক্তি প্রথম প্রবেশ করবে, সে নিশ্চিতভাবেই তার নিজের গোত্রকে বেছে নেবে। তার অর্থ হলো, প্রথম প্রবেশকারী ব্যক্তির গোত্রই মূলত জয়ী হবে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইতিহাস থেকে আমরা সবাই জানি, কাবার প্রধান দরজা দিয়ে সর্বপ্রথম যিনি ঢুকেছিলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা)। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, নবিজি (সা) যখন কাবায় প্রবেশ করছিলেন, তখন তাঁকে দেখে সব গোত্রই খুশি হয়েছিল। কারণ প্রতিটি গোত্র ভেবেছিল, “মুহাম্মদ (সা) যেহেতু আমাদের এত পছন্দ করে, তাই সে নিশ্চয়ই আমাদের গোত্রকেই বেছে নেবে।” এমনকি বনু মাখলুম ও বনু আবদ আল-দারও নবি করিমকে (সা) দেখে খুশি হয়েছিল।

[ এই ঘটনা থেকে আরও ৫০ বছর পরে, এক হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, আমর ইবনুল আস বলেছেন, নবিজি (সা) আমার প্রতি এতটাই সদয় ও সুন্দর ব্যবহার করতেন যে আমি ভাবতাম তিনি আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাই একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন?’ নবিজির (সা) তাৎক্ষণিক জবাব: ‘আয়েশাকে (রা)।

আমর: ‘তার পরে? আমর বললেন, ‘না, না! আমি পুরুষদের মধ্যে বোঝাতে চাইছি।’ নবিজি (সা) বললেন, ‘তাঁর বাবাকে।’ নবিজি (সা): ‘উমরকে। এভাবে আমর জিজ্ঞেস করে যেতেই থাকেন, কিন্তু তাঁর নাম শেষ পর্যন্ত আসেনি। এ থেকে বোঝা যায়, নবিজি (সা) সব মানুষের সঙ্গেই এমন ভালো আচরণ করতেন যে প্রত্যেকেই মনে করত তিনি তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

নবি করিম (সা) কুরাইশদের বললেন, “আপনারা আমার কাছে একটি চাদর নিয়ে আসুন এবং প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করুন। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কালো পাথরটি যথাস্থানে স্থাপন করব।” এরপর সব গোত্রের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে মিলে পাথরটি তুলল। ফলে বনু মাখদুম গোত্রকেও তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হয়নি। আমরা সবাই জানি, নবি করিম (সা) নিজেই পাথরটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখেছিলেন।

 

কাবাঘরের পুনর্নির্মাণ | খাদিজার (রা) সঙ্গে বিয়ে এবং কাবা পুনর্নির্মাণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

মক্কাবাসী কাবাঘরের কাঠামোতেও পরিবর্তন এনেছি  আল্লাহর ইশ্ছায় এই পরিবর্তিত কাঠামোই পরবর্তীকালে স্থায়ী হয়ে যায়। 

১) ইব্রাহিমের (আ) তৈরি কাবার মূল আয়তাকার কাঠামোটি পুনর্নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঠ অথবা মার্বেল পাথর (ঠিক কোনটি তা আমরা জানি না) কুরাইশদের কাছে ছিল না। তাই তারা কাবাঘর বর্গাকার কাঠামোতে পুনর্নির্মাণ করে। ফলে নতুম কাঠামোতে কিছু এলাকা বাদ পড়ে যায়। আয়তাকার কাঠামোর দুটি বাদ পড়া কোণকে চিহ্নিত করতে তারা দুটি স্তম্ভ ব্যবহার করেছিল, যদিও এটিকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার পরিকল্পনার তাদের ছিল না।

২) পুনর্নির্মাণের সময় কাবাঘর আগের চেয়ে আরও উঁচু করা হয়েছিল। এখন অবশ্য এর উচ্চতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, পুনর্নির্মাণের আগে কাবার উচ্চতা ছিল মাত্র ১০ ফুট, পরে তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। কাবার উচ্চতা বাড়ানোর ধারণাটি তখন থেকেই শুরু হয়েছিল।

৩) বনু আবদ মানাফ কাবাঘরের দরজা দেয়ালের মাঝখানে এবং মেঝের স্তর থেকে ওপরে তৈরি করেছিল। কারণ তাদের মনে হয়েছিল, এটি আভিজাত্যের প্রকাশ। তা ছাড়া কে কাবাঘরের ভেতর প্রবেশ করবে, কে করবে না, তা-ও তারা, নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। বনু আবদ মানাফের কাছেই ছিল কাবাঘরের চাবি এবং নরজা পর্যন্ত ওঠার সিঁড়ির দায়িত্ব। আজ পর্যন্ত দরজাটি উঁচুতে ও মাঝখানে রয়েছে। 

৪) তারা পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি নালা বা খাল তৈরি করেছিল, যা আজ অবধি আছে।

[এই ঘটনার আরও প্রায় ২৫ বছর পরে মক্কা জয়ের পর নবিজি (সা) একদিন আয়েশাকে (রা) বলেছিলেন, “আমার অনুসারীরা যদি নবমুসলিম না হতো, তাহলে আমি কাবা ইব্রাহিম (আ) যেভাবে তৈরি করেছিলেন সেই মূল কাঠামোতে পুনর্নির্মাণ করতাম এবং সবার জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম।” তিনি অনুমান করতে পেরেছিলেন, এটা করলে নতুন মুসলিমদের জন্য তা সমস্যার কারণ হতে পারে।

উমাইয়া রাজবংশের প্রথম দিকে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের (রা) নেতৃত্বে একটি দল উমাইয়া সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মক্কায় একটি ছোট ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেটা ছিল মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে অত্যাচারী শাসক হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের সময়ের ঘটনা। এই হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের (রা) কাছে পৌঁছলে তিনি কাবাঘর ভেঙে আবার আগের মতো আয়তাকার কাঠামোয় তৈরি করেন, দরজাটি নামিয়ে ভূমির সমান্তরালে আনেন।

পরবর্তীকালে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আবার মক্কার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং কাবাঘর ধ্বংস করে একদম আগের মতো বর্গাকার কাঠামোর পুনর্নির্মাণ করে দরজা উঁচুতে নিয়ে যায়। তারপর হাজ্জাজ আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরকে (রা) পবিত্র কাবাঘরের সামনে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। দেখুন, কতটা নিষ্ঠুর ছিল এই হাজ্জাজ। আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা) যে শুধু একজন বিশিষ্ট সাহাবির ছিলেন না, তিনি ছিলেন অন্য এক সাহাবির পুত্র এবং আরেক সাহাবির ভাই।

পরবর্তী সময়ে এক খলিফা ইমাম মালিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ইব্রাহিমের (আ) সময়ে কাবাঘরের কাঠামো যেমন ছিল আমরা কি তেমন করে এটি পুনর্নির্মাণ করব?” উত্তরে ইমাম মালিক তাকে বলেন, না। আমি চাই না কাবা একটি খেলনা হয়ে উঠুক যে রাজা-বাদশারা এসে একে নিয়ে যা ইচ্ছা তা- ই করবে।” অতএব হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের সময় থেকে প্রাক-ইসলামি যুগে কুরাইশদের দ্বারা নির্মিত কাবার কাঠামোটিই এখনো রয়ে গেছে।

দেখুন, কীভাবে আল্লাহ তায়ালা সমস্ত কিছুর পরিকল্পনা করেন। আরবরা মরুভূমিতে থাকে। তাদের কাছে ভালো কাঠ বা মার্বেল পাথর নেই। তবু আল্লাহ তাদের রোমের সিজারের প্রাসাদ থেকে সেরা নির্মাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিলেন। এ যেন সিজার গির্জা তৈরি করতে গিয়ে কাবা তৈরিতে অর্থায়ন করলেন। সুবহানআল্লাহ! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী

আরো পড়ুনঃ

 

Leave a Comment