কেবলা পরিবর্তনের পেছনে প্রজ্ঞা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

কেবলা পরিবর্তনের পেছনে প্রজ্ঞা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ, কেবলা পরিবর্তনের বিধান সম্বলিত উপরোক্ত আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিল হিজরতের ১৫-১৬ মাস পরে। এ নিয়ে সেই সময়ে মুসলিম, ইহুদি, মুশরিক নির্বিশেষে সবার মনে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, যা আল্লাহ কোরানে উল্লেখ করেছেন, “(কেবলা বদলের পর) কিছু নির্বোধ লোক অচিরেই বলতে শুরু করবে, “তারা এতদিন পর্যন্ত যে কেবলা অনুসরণ করে আসছিল, তার থেকে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল?” [সুরা বাকারা, 2:1421 ] একজন ইহুদি বলল, “এই ব্যক্তি যদি নবিই হন, তাহলে তিনি কেন একদিন উত্তর দিকে আর অন্য দিন দক্ষিণ দিকে ফিরে নামাজ পড়ছেন?” আর একজন বলল, “তিনি কেন আমাদের কেবলা মেনে নিতে পারছেন না?

 

কেবলা পরিবর্তনের পেছনে প্রজ্ঞা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

কেবলা পরিবর্তনের পেছনে প্রজ্ঞা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

[আনুষঙ্গিক বিষয়: সুরা বাকারা ছিল মদিনায় নাজিল হওয়া প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সুরা। হিজরতের পরের প্রথম দেড় বছরের অনেক ঘটনাই এই সুরায় স্থান পেয়েছে। এখানে বদরের যুদ্ধ, কেবলা পরিবর্তন ও ইহুদিদের সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। এই সুরায় মুসা (আ) ও বনি ইসরায়েলের অনেক কাহিনি। বর্ণিত হয়েছে। একবার ভাবুন তো, এই সুরাতেই কেন ইহুদিদের নিয়ে এতো কথা রয়েছে? কারণ, ঠিক সেই সময়টিতেই মুসলিমদের এসব তথ্য জানা প্রয়োজন ছিল।

সুরা বাকারাতেই আল্লাহ তায়ালা প্রথম নাসথের ধারণা দিয়েছেন: “আমি কোনো আয়াত রহিত (নাসখ) করলে বা ভুলে যেতে দিলে তার চেয়ে আরও ভালো অথবা (অন্তত) তার সমতুল্য কোনো আয়াত দ্বারা তা প্রতিস্থাপন করি।” [২:১০৬] এই বিশেষ নাসথের অর্থাৎ কেবলা পরিবর্তনের পেছনে মহান আল্লাহর দিক থেকে কারণ ছিল যা তিনি কোরানের আয়াতের মাধ্যমেই আমাদের জানিয়েছেন: “তুমি এ পর্যন্ত যে কেবলা অনুসরণ করেছ তা এইজন্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে আমি জানতে পারি কে রসুলকে অনুসরণ করে আর কে তাঁর অনুসরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” [সুরা বাকারা, ২:১৪৩] সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা প্রতিটি আদেশই একটি করে পরীক্ষা।

 ১) মুসলিমরা এই নতুন বিধান কার্যকর করে কি না তা দেখা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা।

২) ইহুদিদের জন্যও এখানে একটি স্পষ্ট বার্তা ছিল। ‘তোমাদের নবিদের ধারাবাহিকতায়ই এই নবি এসেছেন। সে কারণেই তিনি তোমাদের কেবলা অনুসরণ করছিলেন। প্রকৃতপক্ষেই মদিনার প্রথম দেড় বছর নবিজি (সা) বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েন।। তবে তিনি এখন কেবলাকে তার মূল অবস্থানে ফিরিয়ে নেবেন।

অর্থাৎ এখানে ইহুদিদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপার ছিল যে, এই নবি তাদের ধর্মের ধারাবাহিকতায় এলেও তিনি এখন কেবল ইহুদিদের নবি নন; তিনি তার চেয়েও বড় কিছু (অর্থাৎ তিনি সমগ্র মানবজাতির নবি) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন । ইহুদিরা মনে করত, আল্লাহ তাদের বিশেষভাবে বেছে নিয়েছিলেন। আমরা মুসলিমরাও বিশ্বাস করি, আল্লাহ তাদের বেছে নিয়েছিলেন এবং অনুগ্রহ করেছিলেন যা পবিত্র কোরানেও উল্লেখ আছে। তবে আল্লাহ এখানে বোঝাতে চেয়েছেন, তাদের সেই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান কেবলা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইহুদিরা তখন বলতে শুরু করল, ‘কেউ যদি বায়তুল মাকদিস ব্যতীত অন্য কোনো দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাঁর প্রতি কখনও সন্তুষ্ট হবেন না এবং তিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রার্থনা গ্রহণ করবেন না। তারা আরও বলল, ‘জেরুসালেমের মুখোমুখি হয়ে প্রার্থনা করা ধার্মিকতার অঙ্গ। তাদের এ কথার জবাবে আল্লাহ তায়ালা কোরানে আয়াত নাজিল করেন: “পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোতে কোনো পুণা / ধার্মিকতা নেই।

কিন্তু পুণ্য/ধার্মিকতা আছে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, সব কিতাব ও নবিদের ওপর বিশ্বাস করলে।” [সুরা বাকারা, ২:১৭৭] ইহুদিদের এই দলগুলো রীতি-নীতি পালন করার ওপর অনেক জোর দিলেও আধ্যাত্মিক বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে ভুল পথে চালিত হয়েছিল। আইনি রীতি-নীতি পালনের পাশাপাশি অন্তরের বিশ্বাসের ওপরও জোর দিতে হবে। আল্লাহ আরও বলেছেন: “যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে তুমি যদি তাদের কাছে সব প্রমাণ পেশ করো, তবুও তারা তোমার কেবলার অনুসরণ করবে না, আর তুমিও তাদের কেবলার অনুসারী নও, এবং তারাও পরস্পরের কেবলার অনুসারী নয়।” [সুরা বাকারা, ২:১৪৫] সুতরাং এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রসুলকে (সা) সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

 

কেবলা পরিবর্তনের পেছনে প্রজ্ঞা | কেবলা পরিবর্তন ও কোরানের আয়াত রহিতকরণ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

৩) এখানে মুশরিকদের (পৌত্তলিকদের) জন্যও একটি বার্তা রয়েছে। তারা কাবার রক্ষক হওয়ার যোগ্য নয়; বরং মুহাম্মদই (সা) এই কাজের জন্য অধিকতর যোগ্য; তিনিই কাবার উত্তরাধিকারী হবেন এবং ইব্রাহিমের (আ) সময়ে কাবা যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল তা পুনরুদ্ধার করবেন। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, কেবলা পরিবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে একাধিক বার্তা দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment