জিনের রাত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

জিনের রাত | তায়েফের ঘটনা, মক্কায় ফেরার পথে নবিজি (সা) নাখলা উপত্যকায় তাঁবু ফেললেন। রাতে তিনি অভ্যাস মোতাবেক তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে দাঁড়ালেন। লক্ষ করুন, নবিজি (সা) তখন শারীরিকভাবে ক্লান্ত, মানসিকভাবেও অবসাদগ্রস্ত। পাথরের আঘাতের ক্ষতগুলো রয়ে গেছে। শীতল মরুভূমিতে তাঁবুতে রাত কাটাচ্ছেন। এর মধ্যেও তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ বাদ দেননি।

 

জিনের রাত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

জিনের রাত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তায়েফ থেকে ফেরার পথে এর পরের ঘটনাগুলো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছেন। সেই রাতে এমন এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল যা কোনো মানুষের পক্ষে নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, “আর আমি যখন একদল জিনকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করলাম, ওরা কোরানের তেলাওয়াত শুনে কাছে এসে একে অপরকে বলতে লাগল, ‘চুপ করে শোন। যখন কোরানের তেলাওয়াত শেষ হলো, ওরা ওদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারীরূপে।”

[সুরা আহকাফ, ৪৬:২৯] এখানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, নবিজি (সা) যখন (নামাজের মধ্যে) কোরান তেলাওয়াত করছিলেন, তখন তিনি (আল্লাহ) একদল জিনকে সেখানে যেতে আকৃষ্ট করেন। জিনেরা নবিজির (সা) কাছে অকারণে যায়নি। এটা ছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনারই একটা অংশ। আল্লাহ তায়ালা জিনদের চলাফেরা এমনভাবে পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন যাতে তারা সেই রাতে নবিজির (সা) পাশে ঘোরাফেরা করে।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পুরো তাহাজ্জুদের নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিনেরা নবিজির (সা) তেলাওয়াতে কোরানের বাণী আগ্রহভরে শুনল। তারপর তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ককারীরূপে ফিরে গিয়ে বলল:

“হে আমাদের জাতি। আমরা এমন এক কিতাবের তেলাওয়াত শুনেছি যা মুসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে। এ এর আগের কিতাবকে সমর্থন করে, আর সত্য ও সরল পথের দিকে নির্দেশনা দেয়। হে আমাদের জাতি! আল্লাহর দিকে যে ডাকে তার ডাকে সাড়া দাও ও তার ওপর ইমান আনো, আল্লাহ তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন ও নিদারুণ শান্তি থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবেন।” [সুরা আহকাফ, 86:00-03 ] আমরা এই ঘটনা থেকে দেখতে পাচ্ছি, তারা ছিল ইহুদি জিন, তারা মুসা (আ) ও তাওরাতে বিশ্বাসী ছিল। জিনেরা মানুষের ধর্মসমূহ অনুসরণ করে থাকে। তাদের মধ্যে ইহুদি, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মবিশ্বাসী রয়েছে। এই ইহুদি জিনেরা যখন কোরান থেকে তেলাওয়াত শুনেছিল, তখন অনুধাবন করতে পেরেছিল যে কোরানও সেই একই উৎস থেকে এসেছে যেখান থেকে তাওরাত অবতীর্ণ হয়েছে। তাই তারা সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছিল।

 

জিনের রাত | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

ইবনে মাসউদ তাঁকে কাছের অন্য মেঘখণ্ডের দিকে দেখিয়ে দিলে তিনি তাদের কিছু হাড়গোড় ও প্রাণীর মল/গোবর খেতে দিলেন। হাড়গোড় জিনেদের খাদ্য এবং প্রাণীর গোবর ছিল তাদের (জিনেদের) প্রাণীদের খাদ্য। হাদিসের এই বিশেষ অংশটি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত আছে। মুসলিম জিনেরা নবিজিকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিল, “আমরা আমাদের খাবার কোথা থেকে পাব?” নবিজি (সা) জবাব দিয়েছিলেন, “আমার উম্মাহ আল্লাহর নামে যেসব প্রাণী জবাই করবে, সেগুলোর হাড়গোড়ই তোমাদের খাবার হবে। ” | তাদের এটা জিজ্ঞেস করার কারণ, যেগুলোতে আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়নি তা শয়তানদের খাদ্য; অর্থাৎ ‘হারাম মাংস’। এখন তারা যেহেতু ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাই তাদের খাবার কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে তাদের মনে ভাবনার উদ্রেক হয়েছিল।

আরো পরূনঃ

Leave a Comment