জেহাদের চারটি পর্যায় | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

জেহাদের চারটি পর্যায় | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি, নবি করিমের (সা) সিরাহতে জেহাদের পর্যায়গুলো চারটি প্রাথমিক পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে:

জেহাদের চারটি পর্যায় | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

প্রথম পর্যায়:

এই পর্যায়ে সামরিক জেহাদ নিষিদ্ধ ছিল। মক্কার জেহাদ ছিল ‘নফস’ এবং আত্মার জেহাদ। এই পর্যায়ের জেহাদের ধারণা হলো: ধৈর্য ধরো এবং চিন্তা কোরো না-তোমাকে যারা বিদ্রুপ করে তাদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট [১৫-৯৫)। অথবা তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা, আর হিসাবনিকাশ তো আল্লাহর কাজ [১৩:৪০]। এই প্রথম পর্যায়টি মক্কার পুরো সময় (অর্থাৎ ১৩ বছর) স্থায়ী হয়েছিল।

 

জেহাদের চারটি পর্যায় | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

দ্বিতীয় পর্যায়:

এই পর্যায়ে জেহাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার/অবিচার করা হয়েছিল [২২:৩৯]। সুতরাং এই পর্যায়ে জেহাদ ছিল ঐচ্ছিক। হিজরতের ঠিক পরপরই ছিল এই দ্বিতীয় পর্যায়ের সময়কাল।

তৃতীয় পর্যায়:

এই পর্যায়ে শুধুমাত্র কুরাইশের বিরুদ্ধে জেহাদ ওয়াজিব করা হয়, অন্য কোনো উপজাতির বিরুদ্ধে নয়। মদিনার সময়ের বেশি অংশই এই পর্যায়ে পড়ে। চতুর্থ পর্যায়। এই পর্যায়ে নবিজি (সা) আরবের সমস্ত মুশরিকের বিরুদ্ধেই জেহাদে লিপ্ত হয়েছিলেন। তখনই তিনি বলেছিলেন, “আমাকে লোকদের (আমার সময়ের আরবদের) সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রত্যেকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সাক্ষ্য না দেয়। এই জেহাদ ছিল পুরো আরব উপদ্বীপের বিরুদ্ধে। “

এখন প্রশ্ন হলো, চতুর্থ পর্যায়ের জেহাদের ওই বিধান কি এখনও প্রযোজ্য? এ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। এটি একটি তাত্ত্বিক বিষয়। আমাদের সময়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পণ্ডিত-গবেষক এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেননি। উমাইয়া শাসনের পর থেকে উম্মাহর ইতিহাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুসলিম খলিফারা অন্য কোনো জাতির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হননি। রাজনৈতিকভাবে ও ভৌগোলিকভাবে ইসলামের যা কিছু বিস্তার তা প্রথম দেড়শ বছরের মধ্যেই সংঘটিত হয়েছিল।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উম্মাহর ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়েই মুসলিমরা জেহাদকে সমগ্র মানবজাতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ হিসেবে ব্যাখ্যা করেনি। তারা বুঝতে পেরেছিল। যে জেহাদের জন্য উপযুক্ত সময়, স্থান ও প্রেক্ষাপট রয়েছে। অপ্রয়োজনে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো কারণ নেই। তবে নবিজি (সা) এবং সাহাবিরা যেসব অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তার পেছনে যেমন অনেক কারণ ছিল তেমনি কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যও ছিল:

১. এই অভিযানগুলোর অন্যতম লক্ষ্য ছিল কুরাইশদের বুঝিয়ে দেওয়া যে, মুসলিমরা একসময় পালিয়ে গেলেও এখন তাঁরা আর দুর্বল নন, শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে এসেছেন; এবং তাঁদের কাছ থেকে যা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তা তাঁরা আবার ফিরিয়ে নিতে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে এই বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করা যে, মুসলিমরা এখন একটি সার্বভৌম রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি। লক্ষ করুন, প্রথম কয়েক বছরে (খন্দকের যুদ্ধ অবধি, পঞ্চম হিজরি পর্যন্ত) মুসলিমরা কেবলমাত্র কুরাইশদেরই টার্গেট করেছিলেন। আরবের অন্য কোনো উপজাতির সাথে তারা সংঘর্ষে জড়াননি।

 

জেহাদের চারটি পর্যায় | বদরের যুদ্ধের প্রস্তুতি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

২. দ্বিতীয় লক্ষ ছিল কুরাইশদের অর্থের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া। কুরাইশদের অর্থের মূল উৎসই ছিল ‘রিহলাতাস সিতা ওয়াস সাইফ’ (শীত ও গ্রীষ্মের সফর)। এটিই কুরাইশদের মানসম্মান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল, মক্কাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল সমগ্র আরব উপদ্বীপের কেন্দ্রস্থল হিসেবে। এই লাইফলাইনটি (ব্যবসায়িক যোগসূত্রটি) না থাকলে কুরাইশদের অর্থনীতির ঢাকা অচল হয়ে পড়ত । সুতরাং নবিজি (সা) ‘রিহলাতাস সিতা’ (শীতের সফর, উত্তরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য পর্যন্ত) এবং ‘রিহলাতাস সাইফ’ (গ্রীস্মের সফর, দক্ষিণে ইয়েমেন পর্যন্ত) দুটোকে আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন।

সিরিয়া, রোম কিংবা বোসরা শহরে যাওয়ার জন্য কুরাইশদের মদিনার ঠিক পাশ দিয়ে যেতে হতো। উল্লেখ্য, বোসরা শহরটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ছিল। কুরাইশরা বোসরার যেসব বাণিজ্যিক কেন্দ্রে যেত, আজও সেখানে তার ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে। অতএব মুসলিমরা কুরাইশদের অর্থনীতির এই লাইফলাইন, বিশেষ করে সিরিয়ার দিকেরটি কেটে দিতে চেয়েছিলেন। তারা ইয়েমেনের দিকের লাইফলাইনও কাটার চেষ্টা করেছিলেন; সে আলোচনায় আমরা পরে আসব।

৩. অভিযানগুলোর তৃতীয় লক্ষ্য ছিল আশেপাশের উপজাতিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্রের আকার সম্প্রসারিত করা। বদর ও ওহুদের যুদ্ধের পরে মদিনা আকারে সম্প্রসারিত হয়েছিল। সুতরাং পার্শ্ববর্তী উপজাতিগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধার মাধ্যমে ভৌগোলিক কলেবর আরও বড়ো করার প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment