তৃতীয় ভাষ্য | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তৃতীয় ভাষ্য | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাষ্যের বিবরণ হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর কোনোটিতেই নেই। মুসনাদ ইমাম আহমদের ছয় খণ্ডের কোথাও নেই। এমনকি ইবনে ইসহাক বা ইবনে হিশামেও নেই। এগুলো তুলনামূলকভাবে কিছু অখ্যাত বইয়ে পাওয়া যায়। এই বইগুলোর তথ্য মূলত সেইসব পরবর্তীকালের উৎস থেকে সংগৃহীত যেখানে কোনো কিছু বাছবিচার না করে সব কাহিনিই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন: আল- তাবারির তাফসির ও আল-ওয়াহিদির আসবাব আল-নুজুল।

 

তৃতীয় ভাষ্য | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

তৃতীয় ভাষ্য | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

উল্লেখ্য, আল-তাবারি সর্বসাধারণের জন্য তাফসির লিখেননি, পণ্ডিত-গবেষকদের জন্য একটি বিশ্বকোষ রচনা করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ করেছিলেন, “আমি যা শুনেছি, তা খাঁটি বা ভুল যা-ই হোক না কেন, তার সবই আমি লিপিবদ্ধ করব।” মনে রাখতে হবে, আল-তাবারি আর বুখারি এক মাসের নয়। বুখারি ছিলেন একজন বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গির হাদিস সংগ্রাহক, তিনি খুব কঠোর যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো হাদিস গ্রহণ করতেন না।

আল-তাবারি ও আল-ওয়াহিদিসহ আরও কিছু সিরাহ লেখকের বর্ণনার ইবিলিস (শয়তান) সম্পর্কিত একটি গল্পের উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু এই গল্পগুলোতে ইবলিস জড়িত ছিল, স্যার উইলিয়াম মুয়ির (মৃ. ১৯০৫) নামের এক পশ্চিমা গবেষক বা প্রাচ্যবিদ সর্বপ্রথম এটিকে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ বলে উল্লে করেন। ওই ভদ্রলোক ইসলাম ধর্ম নিয়ে গবেষণা করে অধ্যাপক হয়েছিলেন, ইংরেজিতে সিরাহের ওপর বেশ বড় একটি বই রচনা করেছিলেন। তিনি তাঁর সিরাহ বইয়ের এই বিষয়ের অধ্যায়টির শিরোনাম দিয়েছিলেন স্যাটানিক ভার্সেস’। স্যাটানিক ভার্সেসের দুটি প্রচলিত ভাষ্যের (দ্বিতীয় ও তৃতীয়) মধ্যে অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও বর্ণনায় তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে:

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

প্রথম ভাষ্য

দ্বিতীয় ভাষ্য

তৃতীয় ভাষ্যঃ

দ্বিতীয় ভাষ্যে শয়তান ওই দুটি আয়াত বললে মুশরিকরা তা শুনতে পেয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় ভাষ্য অনুসারে, নবিজি (সা) শয়তানের মুখ থেকে ওই আয়াত দুটি শুনেছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে জিব্রাইল (আ) তাঁর কাছে তা তেলাওয়াত করছেন, তারপর নবিজি (সা) নিজের মুখে স্যাটানিক ভার্সেস পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এই ভাষ্যটি আরও জঘন্য, কারণ যারা এই কাহিনি বিশ্বাস করে। তারা এখন বলার সুযোগ পাচ্ছে যে, নবিজি (সা) শয়তান ও জিব্রাইলের (আ) মধ্যে পার্থক্য করতে পারেননি।

এটি অমুসলিমদের মূল যুক্তি। সালমান রুশদির বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস এই যুক্তির ওপর ভিত্তি করেই রচিত। এই ভাষ্যটি আল-ওয়াহিদি ও অন্যান্য ইসলামি উৎস থেকে পাওয়া যায়। সত্যি বলতে গেলে, স্যাটানিক ভার্সেসের কাহিনির উৎস অমুসলিম সূত্র নয়। এটি মুসলিম সূত্র থেকেই এসেছে। এ কারণেই অমুসলিমরা এই সুযোগটি আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারছে।

তাদের বক্তব্য হলো, শয়তান তাহলে কোরান পরিবর্তন করতে পারে। অমুসলিমরা এই কাহিনির মাধ্যমে উপসংহার টানতে চেষ্টা করেছে যে, মুহাম্মদ (সা) কোরান আবিষ্কার করেছেন, তিনি তাঁর ধর্মতত্ত্ব মানুষের মনমানসিকতা ও ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন করেছেন।

 

তৃতীয় ভাষ্য | স্যাটানিক ভার্সেস-এর ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

সারসংক্ষেপ

আমাদের কাছে তিনটি ভাষ্য আছে:

১) প্রথম ভাষ্যটির উৎস সবচেয়ে খাঁটি বা অথেনটিক; যেমন: সহিহ বুখারি, মুসনাদ ইমাম আহমদ প্রমুখ।

২) দ্বিতীয় ভাষ্য অনুসারে শয়তান চিৎকার করে কিছু বলেছিল যা মুসলিমরা শুনতে পায়নি, কিন্তু অমুসলিমরা কোনো না কোনোভাবে শুনেছে।

 ৩) তৃতীয় ভাষ্য অনুসারে শয়তান জিব্রাইল (আ) হওয়ার ভান করে। জিব্রাইল (আ) কোরান তেলাওয়াত করার সময় শয়তান শব্দ করে দুটি আয়াত বলে এবং নবিজি (সা) আয়াত দুটি তেলাওয়াত করেন। তৃতীয় ভাষা অনুসারে, কুরাইশরা সেজদা করলে জিব্রাইল (আ) ফিরে এসে নবিজিকে (সা) জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কী তেলাওয়াত করেছেন?” তিনি আবার স্যাটানিক ভার্সেস তেলাওয়াত করলে জিব্রাইল (আ) বলেন, “আমি তো আপনাকে কখনোই এটা বলতে বলিনি।”

এতে নবিজি (সা) নিজে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন ভেবে খুব ব্যথিত হন এবং মুষড়ে পড়েন। এরপর আল্লাহ তায়ালা সুরা হজের ৫২ নম্বর আয়াতটি নাজিল করেনঃ “আমি তোমার পূর্বে যেসব নবি ও রসুল পাঠিয়েছিলাম তারা যখনই কিছু তেলাওয়াত করত তখনই শয়তান তাদের আবৃত্তিতে বাইরে থেকে কিছু ছুড়ে ফেলত (অর্থাৎ কিছু ভুল বোঝাবুঝি ঢুকিয়ে দিত)। কিন্তু শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে আল্লাহ তা দূর করে দেন। তারপর আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলোকে সুসংবদ্ধ করেন। আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সুরা হজ, 22:52) অতএব তৃতীয় ভাষা অনুসারে শয়তান নবিজিকে (সা) ধোঁকা দিতে সফল হয়েছিল এবং তিনি এই আয়াত দুটো তেলাওয়াত করেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment