দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন,  সহিহ বুখারির এক দীর্ঘ হাদিস নিয়ে আলোচনা , যেখানে জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রা) নবি করিমের (সা) কাছে প্রথমবার ওহি নাজিলের পর বেশ কিছুদিনের জন্য ওহি বন্ধ থাকার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন, সেই সময় নবিজি (সা) মক্কা ও এর উপত্যকাগুলোতে জিব্রাইলকে (আ) আবার দেখার অভিপ্রায়ে হাঁটাহাঁটি করতেন। কিছু কিছু স্কলারের মতে, ওহি নাজিল বন্ধ থাকার এই পর্বটি দুই বা তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল; তবে সময়টি খুব বেশি বলে মনে হয়। ইবনে আব্বাস (রা) এক বর্ণনায় ৪০ দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনে শিহাব আল-জুহরি বলেছেন, “এই সময়কাল তিরিশ কিংবা চল্লিশ দিন ধরে চলেছিল।”

 

 

দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

এই পুরো এক মাস দশ দিন ধরে নবিজি (সা) মানসিকভাবে অনেকটা দ্বিধান্বিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁর নিজের কথায়, “আমি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।” তিনি জিব্রাইলকে (আ) আবার দেখার আশায় প্রতিদিনই হেরা পর্বতে চলে যেতেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে কিছুই দেখতে পেতেন না। অবশেষে একদিন পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে আসার সময় তিনি তাঁর নাম ধরে ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি এদিক-ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলেন না। নবিজির (সা) কথায়, “আমি ওপরে তাকিয়ে একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেলাম যাকে আমি হেরা পর্বতে দেখেছিলাম। তিনি আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে বিস্তৃত এক সিংহাসনে বসে ছিলেন।” এই দৃশ্য দেখে তিনি ভয়ে কাঁপতে শুরু করেন।

এক বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) ঘটনার আকস্মিকতায় ও ভয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পড়েন। এবারও তিনি বিহ্বল হয়ে খাদিজার (রা) কাছে ছুটে যান। তাঁকে বলেন, “আমাকে ঢেকে দাও। আমাকে ঢেকে দাও।” ঠিক এই সময়েই দ্বিতীয়বারের মতো ওহি নাজিল হয়েছিল। সেটা ছিল সুরা মুদাসসিরের প্রথম সাত আয়াত (আগের পর্বে উল্লেখ করেছি)। এই যে ৩০-৪০ দিন নবি করিমের (সা) কাছে ওহি আসা বন্ধ ছিল, এর কী কারণ থাকতে পারে? এ বিষয়ে স্কলারদের ব্যাখ্যা হলো, এই সময়ের মধ্যে নবিজিকে (সা) ফেরেশতা জিব্রাইলের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের জন্য সাক্ষাতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করা, প্রস্তুত করা, ওহি সম্পর্কে আরও কৌতূহলী করে তোলাই কারণ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ জন্যই হয়তো তিনি জিব্রাইলের (আ) সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রতিদিন পর্বতে যেতেন। কিন্তু এত প্রস্তুতি সত্ত্বেও নবিজি (সা) জিব্রাইলকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এ থেকে মহানবি মুহাম্মদের (সা) মানবিক বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ পায়। কোনো ভণ্ড ব্যক্তি নিজেকে নবি হিসেবে দাবি করতে চাইলে এই ঘটনাটা খুব বড় করে ও ঘটা করে প্রচার করতে পারত। কিন্তু এখানে নবিজি (সা) কী করলেন? একজন আন্তরিক ও স্বাভাবিক জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের যা করার কথা, তিনি তাই-ই করেছেন, একজন রক্তমাংসের মানুষ যা করবে তাই-ই করেছেন।

এবার এই দ্বিতীয়বারের নাজিল হওয়া ওহির আয়াতগুলোর বিশেষত্ত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা যাক। নবিজি (সা) যখন হতবিহ্বল হয়ে খাদিজার (রা) কাছে ফিরে গেলেন, তখন ফেরেশতা জিব্রাইলও (আ) তাঁর সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন। নবিজিকে (সা) চাদরে ঢাকা অবস্থায় দেখে জিব্রাইল (আ) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া ওহি আবৃত্তি করেন, “হে চাদরাবৃত (যে কিনা নিজেকে কাপড়ে ঢেকে রেখেছ)! ওঠো, এবং সতর্ক (সাবধানবাণী প্রচার করো। এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। আর সকল অপবিত্রতা পরিহার করো। অধিক প্রতিদানের আশায় তুমি অন্যকে কিছু দান করো না। আর তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য ধৈর্যধারণ করো।

(১) বিষয়টি আক্ষরিক অর্থে দেখলে নিশ্চিত করুন যে আপনার পোশাকে অপবিত্রতা যেমন নেই, তেমনি তা দেখতেও সুন্দর।

(২) আর রূপকার্থে দেখলে নিশ্চিত করুন যে আপনার মধ্যে পাপের অপবিত্রতা নেই, আপনার মন ও হৃদয় খাঁটি।] এবং প্রতিমাগুলোকে পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করুন।’

 

দ্বিতীয়বারের ওহি | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তুমি মানুষদেরকে যে অনুগ্রহ করেছ তা সম্পর্কে তাদের স্মরণ করিয়ে দিও না।’ অর্থাৎ যখন আপনি যখন কোনো মানুষকে উপকার করবেন, তখন তার কাছ থেকে পাল্টা অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য আশা করবেন: না। এটা আন্তরিকতা প্রদর্শনেরও একটা ব্যাপার। যখন কোনো ব্যক্তি শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কারও উপকার করে, তখন তার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হওয়ার কোনো কারণ থাকে না।

কিন্তু যদি উপকার করার পেছনে তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তার ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণেই হয়তো নবি করিমের (সা) জন্য জাকাত বা সাদাকা (দান) গ্রহণের অনুমতি ছিল না। এটাই মরিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেন তাঁর নিজ নিজ সম্প্রদায়কে বলতে পারেন, আল্লাহ পবিত্র কোরানে সুরা শুরায় বলেছেন, “(হে রসুল) বলো, ‘এর (ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমি তোমাদের কাছ থেকে আত্মীয়ের ভালোবাসা ছাড়া কোনো পুরস্কার চাই না।”

[৪২ঃ ২৩ ] এবং সুরা হুদে আল্লাহ তাঁর রসুলকে (সা) বলতে বলছেন, “হে আমার সম্প্রদায়। এর পরিবর্তে আমি তোমাদের কাছে (ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে) ধনসম্পদ চাই না।” [ ১১:২৯ ) দ্বিতীয়বারের ওহির সর্বশেষ আয়াতটি ছিল, “তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য ধৈর্য ধরো।” অর্থাৎ জীবনে দুঃখ, ক্লেশ কিংবা বিপদ-আপদ থাকবে, তবু ধৈর্যধারণ করতে হবে। আর ধৈর্য ধরার উপায় হলো, তুমি যা কিছু করবে তা পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্য করো।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment