দ্বিতীয় পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

দ্বিতীয় পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত, এই পর্যায়ে নবি করিম (সা) সমগ্র মক্কা শহরের সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার জন্য একদিন সাফা পাহাড়ের শিখরে গিয়ে উঠলেন। পাহাড়টি কাবার খুবই কাছে, এখনকার তুলনায় বেশ উঁচু ছিল। সেই আমলে মক্কার কোনো ব্যক্তির সাফার চূড়ায় ওঠার মানে ছিল সে কিছু ঘোষণা করতে চায়। নবিজি (সা) সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে লোকদের ডাকতে লাগলেন ।

 

দ্বিতীয় পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

দ্বিতীয় পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সেই কালে মক্কা ছিল ছোট্ট একটি গ্রামের মতো, তার মোট অধিবাসীর সংখ্যা ছিল আনুমানিক এক হাজার। সহিহ বুখারিতে লেখা আছে, নবিজি (সা) যখন সব গোত্রের লোকদের ডাক দিলেন, তখন যে যার কাজ বন্ধ করে তাঁর কথা শোনার জন্য সেখানে সমবেত হলো। তিনি সবাইকে একত্রিত হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন।

নবিজি (সা) সমবেত জনতার উদ্দেশে বললেন: আমি যদি তোমাদের কোনো বিষয় সম্পর্কে অবহিত করি তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? জনতা: তুমি আমাদের ভাইয়ের ছেলে, আমাদের ছেলের মতোই। আমরা তোমাকে সব সময়ই ভালো বলে জানি। নবিজি (সা): তোমরা কি আমাকে কখনো কোনো মিথ্যা বলতে শুনেছ? জনতা: আমরা তোমার সম্পর্কে ভালো ছাড়া কিছুই শুনিনি। তুমি আল-আমিন। নবিজি (সা): যদি আমি তোমাদেরকে বলি যে এই পাহাড়ের অন্যদিকে এক প্রবল শত্রু সেনাবাহিনী তোমাদের সর্বস্ব লুণ্ঠনের জন্য অপেক্ষা করছে তাহলে তোমরা কি আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? জনতা (সমস্বরে): হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমরা কখনোই তোমাকে মিথ্যা বলতে শুনিনি ।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ পর্যায়ে নবি করিম (সা) বললেন, “তা-ই যদি হয়, তাহলে জেনে রাখো, আমি তোমাদের আল্লাহর বিরোধিতা করা এবং প্রতিমাপূজা করার ভীষণ পরিণাম এবং কেয়ামতের দিনের অবশ্যম্ভাবী কঠোর শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি। হে কাব ইবনে লুহাইয়ের গোত্র! তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচাও। আমি তোমাদের কোনোরূপ সাহায্য করতে সক্ষম হব না। হে বনি মুরাহ ইবনে কাব, তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচাও। আমি তোমাদের কোনোরূপ সাহায্য করতে সক্ষম হব না। হে বনি আবদ মানাফ… ইত্যাদি ইত্যাদি।”

নবিজি (সা) তাঁর সবচেয়ে দূর সম্পর্কের গোত্রকে উদ্দেশ করে আহ্বান শুরু করেছিলেন; তারপর ক্রমশ কাছের গোত্রগুলোকে উদ্দেশ করে আহ্বান জানাতে জানাতে একপর্যায়ে বনু হাশিম পর্যন্ত গিয়ে থামেন। তারপর তাঁর চাচা-ফুপুদের উদ্দেশে বলেন, “হে হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব”, “হে সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব” ইত্যাদি ইত্যাদি।

সবশেষে তিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তির উদ্দেশে একই সাবধানবাণী উচ্চারণ করেন, “হে ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, তুমি জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাও। আমি তোমাকে কোনোরূপ সাহায্য করতে সক্ষম হব না।” ফাতেমার জন্য তিনি আরও একটি বাক্যাংশ যোগ করেন, “তবে এই পৃথিবীতে আমার যা কিছু আছে তার সবই আমি তোমাকে দেব।” অর্থাৎ ‘আমি তোমার বাবা। তুমি আমার কাছে এই দুনিয়ায় যা কিছু চাইবে তা তুমি পাবে। কিন্তু পরকালে আমি তোমাকে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচাতে পারব না।’

 

দ্বিতীয় পর্যায় | ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজির (সা) অত্যন্ত আবেগময় এই বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবু লাহাব উঠে দাঁড়িয়ে হাতের মুঠিতে বালু নিয়ে আল্লাহর রসুলের (সা) দিকে ছুঁড়ে মারেন। আবু লাহাব এই অসভ্য আচরণের মধ্য দিয়ে যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হলো, ‘তুমি যা বলেছ তা আমার এই ছুড়ে মারা বালুর মতো মূল্যহীন। তারপর আবু লাহাব বলেন, “হে মুহাম্মাদ! তোমার সর্বনাশ হোক! এ জন্যই কি তুমি এখানে আমাদের ডেকেছ?”

এই সময়েই আল্লাহ আবু লাহাবকে উদ্দেশ করে পুরো একটি সুরা নাজিল করেন:

“ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুই হাতা আর ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধনসম্পদ ও উপার্জন তার কোনো কাজে আসবে না। সে অচিরেই আগুনের লেলিহান শিখায় প্রবেশ করবে, আর জ্বালানিকাঠের বোঝা বহনকারী তার স্ত্রীও, যার গলায় থাকবে পাকানো রশি।” [সুরা লাহাব, ১১১:১-৫) আবু লাহাবই প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রকাশ্যে আল্লাহর রসুলের (সা) কপার সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন এবং তাঁকে নিয়ে উপহাসও করেছিলেন। এর কিছুদিন আগে রসুলের (সা) বাড়িতে আমন্ত্রিতদের আসরেও তিনি এতটা অভদ্র আচরণ করেননি। কিন্তু এবার তিনি সব সীমা ছাড়িয়ে গেলেন, অহংকার তাঁর এতটাই অধঃপতন ঘটিয়েছিল। এভাবেই অন্য সব নবি-রসুলের মতো মুহাম্মদকেও (সা) তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম ও কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment