প্রথম ওহি নাজিলের পরে | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

প্রথম ওহি নাজিলের পরে | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু, আবার আমরা ওহি নাজিলের ঘটনায় ফিরে যাই। আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, প্রথম ওহি নাজিলের সঙ্গে সঙ্গে নবিজি (সা) খুব দ্রুত খাদিজার (রা) কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁর বুক রীতিমতো ধড়ফড় করছিল। তিনি খাদিজাকে (রা) বলেছিলেন, “আমাকে ঢেকে দাও। আমাকে ঢেকে দাও!” এ থেকে বোঝা যায়, ওই বিশাল অবয়বের ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) নবিজির (সা) (PII) জন্য শুধু বিস্ময়ের ব্যাপারই ছিল না, অনেকটা অপ্রত্যাশিতও ছিল।

 

প্রথম ওহি নাজিলের পরে | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

প্রথম ওহি নাজিলের পরে | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

তিনি খুবই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন এবং স্ত্রীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। এখানে এই বিষয়টি পরিষ্কার যে, নবিজি (সা) ওহি আসার ব্যাপারটি আগে থেকে জানতে পারেননি। এ থেকে বোঝা যায়, মুহাম্মদ (সা) সত্য কথা বলেছেন এবং তিনি একজন সত্য নবি ছিলেন। নবিজিকে চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর তিনি আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে খাদিজাকে (রা) হেরা গুহায় যা-কিছু ঘটেছিল তার সবই খুলে বলেন। এ থেকে স্ত্রীর প্রতি তাঁর অগাধ আস্থার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই। তিনি তো সেই সময় তাঁর চাচা আবু তালিবের কাছে যেতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।

নবিজি খাদিজাকে (রা) হেরা গুহার ঘটনা খুলে বলার পর বলেন, “আমি নিজেকে নিয়ে বড্ড ভয় পাচ্ছি।” নিজেকে নিয়ে এই ভয় পাওয়ার অর্থ কী তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে; এ বিষয়ে অনেক রকমের মত আছে। তবে এটা স্পষ্ট যে। (১) নবিজি হয়তো জিব্রাইলের (আ) সজোরে চাপের কারণে মৃত্যুভয় পেয়েছিলেন; কিংবা (২) তিনি ভয় পাওয়ার মতো এমন কিছু দেখতে পেয়েছিলেন যা সাধারণ মানুষ দেখতে পায় না, এবং তিনি হয়তো অনুভব করছিলেন যে তিনি জ্ঞান হারাতে পারেন।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তাই খাদিজা (রা) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ্ আপনাকে কখনোই অবমাননা করবেন না। আপনি তো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের পাশে দাঁড়ান, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, অতিথিদের সযত্নে আপ্যায়ন করেন এবং সত্য পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।

এখানে লক্ষ করুন, পবিত্র কোরান বা হাদিস থেকে কোনো জ্ঞান ছাড়াই খাদিজা (রা) তাঁর স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনা থেকে কতো চমৎকারভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করছেন। তাঁর কথার মর্মার্থ হলো: ‘আপনি যদি সৎকর্ম করেন তবে আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন।’ এ থেকেই বোঝা যায় আল্লাহ তায়ালা কেন খাদিজাকে (রা) মহানবি মুহাম্মদের (সা) জন্য স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

এক বর্ণনা অনুসারে, নবিজি (সা) ওহি নাজিলের পর বাড়ি ফিরে এলে খাদিজা (রা) প্রথমে আদ্দাস নামের এক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির কাছে গিয়েছিলেন। ঘটনা শুনে আদ্দাসের প্রতিক্রিয়া ছিল, “কী? মক্কার মতো এই বর্বর স্থানে আল্লাহর ফেরেশতা? এটা কীভাবে সম্ভব?” তার কথা শুনে খাদিজা (রা) বুঝতে পেরেছিলেন, ঘটনাটির সঙ্গে ইহুদি বা খ্রিষ্টান ধর্মের কোনো সম্পর্ক আছে। তাই তখন তিনি ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে যান।

 

প্রথম ওহি নাজিলের পরে | জায়েদ বিন হারিসা এবং ওহি নাজিলের শুরু | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

আগের একটি পর্বে আমরা উল্লেখ করেছি, ওয়ারাকা সেই সময়ে ওই অঞ্চলের চারজন হুনাফার (যারা মূর্তিপূজা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন) মধ্যে একজন ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ছিলেন। ওই চারজনের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ। তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন এবং হিব্রু ভাষায় লিখতে শিখেছিলেন। সহিহ বুখারির হাদিস অনুসারে, ওয়ারাকা এক সময় খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। সম্ভবত তিনি ছিলেন একজন ইহুদি খ্রিষ্টান। খাঁটি ইহুদি কিংবা খ্রিষ্টান হলেও তিনি সিরিয়াক বা গ্রিক ভাষায় লিখতেন, হিবরু ভাষায় নয়। ওয়ারাকা ট্রিনিটিতে বিশ্বাস করতেন না। ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মের নবিদের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ছিল। কিন্তু তিনি ইহুদি বা খ্রিষ্টানদের মতো করে উপাসনা করতেন না।

যা-ই হোক, বিস্তারিত শুনে ওয়ারাকা আগ্রহী হয়ে উঠলেন। তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম! এ তো সেই একই ‘আল-নামুস’ (গোপন বিষয়ের সংরক্ষণকারী), যিনি মুসার (আ) কাছে এসেছিলেন।” ওয়ারাকা কিন্তু যিশুখ্রিষ্টের কথা বলেননি, কারণ সম্ভবত তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে মুহাম্মদের (সা) সঙ্গে মুসারই (আ) মিল বেশি হবে।

বহু বছর পরে, সম্ভবত ইসরা ও মিরাজের পর, ওয়ারাকার কিছু আত্মীয়- স্বজন নবিজিকে (সা) জিজ্ঞেস করেছিলেন, “পরকালে ওয়ারাকার ভাগ্যে কী আছে?” নবিজি (সা) তাঁদের বলেছিলেন, তিনি ওয়ারাকাকে সাদা পোশাক পরা অবস্থায় জান্নাতের বাগানে দেখেছেন। অতএব এ কথা বলা যায় যে, ওয়ারাকা মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণকারী প্রথম সাহাবি। প্রথম ওহি নাজিল হওয়ার পরে ওয়ারাকা খুব অল্প সময় বেঁচে ছিলেন।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment