ফিজারের যুদ্ধ এবং হিলফুল ফুদুল থেকে শিক্ষা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল,
ফিজারের যুদ্ধ এবং হিলফুল ফুদুল থেকে শিক্ষা | মহানবি মুহাম্মদের (সা) কৈশোর ও যৌবনের কাল | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
- ১) নবিজি (সা) ফিজারের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য কোনো অনুশোচনা করেননি। এর অর্থ হলো, তিনি যা করেছিলেন তা সঠিক ছিল। কিছু স্কলার এ থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, ধর্মীয় নয় এমন বিষয়েও যুদ্ধ করা ‘জায়েজ’ (অনুমোদিত)। ফিজারের যুদ্ধে দুই পক্ষই ছিল পৌত্তলিক। দুই পক্ষের কেউই পরিষ্কারভাবে সঠিক পথে ছিল না।
তবু কুরাইশদের জন্য এটি ছিল হারামের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং এর মর্যাদা সমুন্নত রাখার যুদ্ধ। নবিজি (সা) শারীরিকভাবে লড়াই না করলেও এতে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছিলেন। মূল কথাটি হলো, ধর্মীয় কারণ ছাড়া অন্য কারণেও মুসলিমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের সময়ে অনেক যুদ্ধই মুসলিম ভূখণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এসব ক্ষেত্রে যুদ্ধে জড়িত হওয়া বা না-হওয়ার সিদ্ধান্ত সেখানকার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিতে হবে।
- ২) হিলফুল ফুদুলের ঘটনাটিতে দেখা যায়, নবিজি (সা) তাঁর সময়ের সমাজের সব ভালো কার্যকলাপের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, যদিও সমাজটি মুসলিম ছিল না। সম্পৃক্ত বিষয়গুলো যে সব সময় ধর্মীয় ছিল তেমনও নয়। ন্যায়বিচার, সত্য ও নিপীড়িতদের পক্ষে অবস্থান নিতে পেরে নবিজি (সা) গর্ব বোধ করেছেন। তিনি বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে তিনি সব সময়ই ওই চুক্তিটি সমর্থন করবেন । এ থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, জনমানুষের কল্যাণের জন্য কোনো কাজে সম্পৃক্ত হওয়া একজন ভালো মুসলিম হওয়ারই একটি অংশ।
গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, আমাদের মধ্যে অনেক মুসলিমই মনে করেন, আমাদের শুধু ধর্মীয় বা ইসলামি বিষয়ের সঙ্গেই জড়িত হওয়া উচিত। বর্ণবান, নিপীড়ন, দারিদ্র্য, শিশু-নির্যাতন এসব বিষয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু সিরিয়া, ফিলিস্তিন ইত্যাদি বিষয়েই জড়িত হব। কিন্তু হিলফুল ফুদুলের ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারি, নবিজি (সা) যে সমাজে বাস করতেন তার একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ন্যায়বিচারকে সমর্থন করতেন। সুতরাং আমাদের সময়েও মুসলিমদের তা-ই করা উচিত; বিশেষত আমরা যারা অমুসলিম দেশে বাস করি।
কল্পনা করুন, টুপি-দাড়িওয়ালা মুসলিম রেড ক্রিসেন্ট কিংবা সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে টিভিতে রক্তদানের আহ্বান জানাচ্ছে, এর চেয়ে উপযোগী ‘দাওয়াত’ আর কী হতে পারে! ভেবে দেখুন, আমাদের এক বোন বর্ণবাদ, নিপীড়ন ইত্যাদির বিরুদ্ধে কথা বলছেন: ইসলাম সম্পর্কে কিছু না বললেও তার বার্তাটিই তো একটি কার্যকরী দাওয়াত। সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততাই আমাদের সর্বোত্তম দাওয়াত হতে পারে। নির্যাতন, বর্ণবাদ, শিশু-নিপীড়ন, দারিদ্র্য, এই সবকিছুই আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে। আপনি সমাজের এসব সমস্যার সঙ্গে জড়িত হলেই না মানুষ আপনাকে একজন আন্তরিক ব্যক্তি হিসেবে দেখবে। তারপর যখন আপনি একদিন তাদের সামনে এসে বলবেন, “আমি একজন মুসলিম”, তখন মানুষ আপনার ধর্মবিশ্বাসকেও আন্তরিক হিসেবে দেখবে।
নবি করিম (সা) তাঁর সমাজের সমস্যাবলির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সমাধানের জন্য সবার সঙ্গে মিলে কাজ করতেন। তারপর যখন তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন তখন অনেকেই তাঁর নতুন ধর্মবিশ্বাস তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করেনি বটে। কিন্তু তাঁর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থার কমতি ছিল না। কুরাইশদের কেউই তখন বলতে পারেনি, “আমাদের যখন তোমাকে দরকার ছিল তখন তুমি কোথায় ছিলে? তুমি আমাদের জ্ঞান দেবার কে?” মূল কথাটি হচ্ছে, সাধারণ মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ইত্যাদি ইস্যুতে সমাজে মুসলিমদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দাওয়াত শুধু ধর্মতত্ত্বের নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক নয়, আরও অনেক কিছু মিলিয়ে একটা ‘প্যাকেজ’।
- ৩) এ থেকে আমরা তৎকালীন সমাজে মহানবি মুহাম্মদের (সা) মর্যাদা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাই। আমরা দেখি যে হিলফুল ফুদুল চুক্তিতে তাঁকে একজন সাক্ষী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। সেই সময় নবিজির (সা) বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। এ থেকে এও বোঝা যায় যে, সমাজের লোকেরা তখন তাঁর মধ্যে তাদের একজন ভবিষ্যৎ নেতাকে দেখতে পেয়েছিল, যিনি সৎ ও সত্যবাদী
- ৪) কুরাইশদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য ও সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তাদের কিছু মানবিক গুণাবলিও ছিল। তারা অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। অতএব দেখা যাচ্ছে, সেই জাহেলি যুগেও সমাজে সদাচরণের প্রচলন ছিল ।
আরো পড়ুনঃ