নবিজির (সা) মক্কায় ফিরে আসা | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নবিজির (সা) মক্কায় ফিরে আসা | তায়েফের ঘটনা, আগেই উল্লেখ করেছি, মক্কা থেকে চলে যাওয়া এবং দশ দিনের জন্য অদৃশ্য থাকার কারণে নবিজির (সা) জন্য মক্কার দ্বার একপ্রকার রুদ্ধই হয়ে গিয়েছিল। তিনি তখন এক অনিশ্চিত অবস্থায় পড়ে গিয়েছেন। জায়েদ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রসুল! মক্কা থেকে ‘বহিষ্কৃত হয়ে আপনি এখন আবার কীভাবে সেখানে প্রবেশ করবেন?” নবিজি (সা) শান্তভাবে জবাব দিলেন, “আল্লাহই আমাদের জন্য একটি পথ বের করে দেবেন। অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রসুলকে (সা) সাহায্য করবেন এবং সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন।”

 

নবিজির (সা) মক্কায় ফিরে আসা | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

নবিজির (সা) মক্কায় ফিরে আসা | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

মক্কা বা তায়েফে এই মুহূর্তে নবিজির (সা) কোনো স্থান নেই। তিনি আক্ষরিক অর্থেই মরুভূমিতে তাঁবু গেড়ে আছেন। কিন্তু এই অবস্থায়ও তাঁর তাওয়াক্কুলের (আল্লাহর ওপর ভরসার) কোনো কমতি নেই। তিনি যা কিছু করা সম্ভব তার সবকিছুই করেছেন, কোনো কিছুই কম করেননি। এখন সবকিছু আল্লাহর হাতে। নবি করিম (সা) দুই কিংবা তিনজন মিত্রভাবাপন্ন কুরাইশের কাছে দূত পাঠালেন যারা তাঁকে সাহায্য করতে পারে।

সংগত কারণেই তিনি বনু মাখজুমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি কারণ আবু জেহেল ও ওয়ালিদ ইবনুল মুগিৱা ছিল ওই গোত্রের নেতৃত্বে—তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখেননি। প্রথমে যে ব্যক্তির কাছে নবিজি (সা) বার্তা পাঠালেন, তিনি হলেন আল-আখনাস ইবনে শুরায়েক কিন্তু তিনি পাল্টা বার্তা দিলেন, “আপনাকে রক্ষা করার মতো অবস্থায় আমি নেই।” এরপর তিনি সুহায়েল ইবনে আমরের কাছে একই বার্তা পাঠালেন। [খেয়াল করুন, সুহায়েল ও আল-আখনাস উভয়ই শেষ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ থেকে বোঝায়, নবিজি (সা) পরিকল্পনাহীনভাবে যেকোনো লোকের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি জানতেন, এই লোকেরা তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারেন, তাঁরা আবু লাহাব কিংবা আবু জেহেলের মতো নন।

যা-ই হোক, সুহায়েল ইবনে আমরও ফিরতি বার্তায় জানালেন, তিনিও সুরক্ষা দিতে পারবেন না। আল-আখনাস ও সুহায়েল যে অজুহাত দেখান, তা মোটেই জোরালো ছিল না। তাঁরা চাইলে তাঁকে সুরক্ষা দিতে পারতেন। ঠুনকো অজুহাত দেখালেও এ থেকে এটুকু অন্তত প্রমাণ হয় যে, ইসলামের প্রতি তাদের বৈরিতা আবু জেহেল ও অন্য কতিপয় কাফেরের মতো ছিল না।

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

অতঃপর নবিজি (সা) বনু নওফাল ইবনে আবদ মানাফ গোত্রের প্রধান মুর্তিম ইবনে আদির কাছে অনুরোধবার্তা পাঠালেন। আমরা ১৮তম পর্বে মুতিম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তিনিই সেই ব্যাক্তি যিনি কুরাইশদের বয়কট ভেঙেছিলেন, বনু হাশিমের জন্য মক্কার বাইরে উপত্যকায় খাবার পাঠাতেন।] নবিজি (সা) তাঁকে বার্তা পাঠালেন, “আপনি কি আমাকে সুরক্ষা দেবেন?” মুতিম কেবল ‘হ্যাঁ’ বলেই ক্ষান্ত হননি, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পুত্রদেরকে নির্দেশ দিলেন, “তোমরা প্রস্তুত হও এবং মুহাম্মদকে (সা) ফিরিয়ে আনো।

তারপর তাঁকে সরাসরি আমার কাছে নিয়ে এসো।” মুতিমের নির্দেশ মোতাবেক তাঁর পুত্ররা যুদ্ধের পোশাক পরে মক্কার বাইরে গিয়ে নবিজিকে (সা) নিয়ে ফিরে এল। মুতিম ইবনে আদি তাঁকে গ্রহণ করার জন্য নিজে কাবায় গেলেন। তিনি নবিজিকে (সা) বললেন, “তাওয়াফ করো। আমি তোমার (তোমাকে পাহারা দেওয়ার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকছি।”

নবিজি (সা) প্রহরীবেষ্টিত অবস্থায় তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে মুতিম উঠে দাঁড়িয়ে বললেন: হে মক্কাবাসী! আমি মুহাম্মদকে (সা) আমার সুরক্ষা দিয়েছি। আবু সুফিয়ান (উঠে দাঁড়িয়ে): আপনি কি তাঁর অনুসারী হয়েছেন? নাকি আপনি (এখনও পৌত্তলিকই আছেন এবং) শুধু তাকে সুরক্ষা দিচ্ছেন?

মুতিম: না, আমি তার অনুসারী নই। আমি শুধু তাঁকে সুরক্ষা দিচ্ছি। আবু সুফিয়ান বলল, তাহলে আমরা তা মেনে নেব (অর্থাৎ আমাদের কিছু বলার নেই)। এখানে একটা বিষয় খেয়াল করুন, মুতিম যদি আগেভাগেই ইসলাম গ্রহণ করতেন, তাহলে কুরাইশরা নিশ্চিতভাবেই তাঁর পক্ষ থেকে নবিজিকে (সা) সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করত। সুতরাং কিছু লোকের ইসলাম গ্রহণ না করার পেছনে আল্লাহ তায়ালার প্রজ্ঞা কাজ করেছে।

 

নবিজির (সা) মক্কায় ফিরে আসা | তায়েফের ঘটনা | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

মক্কায় ফিরে আসার পরে নবিজি (সা) দেড় থেকে দুই বছরের মতো মুতিম ইবনে আদির সুরক্ষায় ছিলেন। তিনি জানতেন, মুতিমের সুরক্ষা সত্ত্বেও পরিস্থিতি তাঁর প্রতিকূল ও অনিশ্চিত। তাই তিনি অন্য উপায় খুঁজতে লাগলেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাকে মদিনায় হিজরত করার অনুমতি দিলেন। হিজরতের অল্পকাল পরেই মুর্তিম ইবনে আদি মারা যান।

[ আনুষঙ্গিক বিষয়: সুরক্ষা দেওয়া ও বয়কট ভাঙায় অবদান রাখার কারণে নবিজি (সা) মুতিমের অনেক প্রশংসা করেছেন। নবিজি (সা) হয়তো মুতিমের জানাজা পড়েননি কিংবা তাঁর জন্য দোয়াও করেননি, কিন্তু তিনি তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছেন।

সহিহ বুখারির একটি হাদিসে আছে, নবি করিম (সা) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের কিংবা মন্দ ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই ধর্মকে সাহায্য করেন।” তাই আমাদের এই সময়ের মুতিমদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা দরকার। আমরা তাদের প্রশংসা করব, তারাও আমাদের প্রশংসা করবে। তাদের মধ্যে অনেকেই নাস্তিক কিংবা খ্রিষ্টান হতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে একটি সীমারেখাও থাকতে হবে, যা হলো, আমরা তাদের ধর্মের প্রশংসা করব না।

তায়েফে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরে নবিজি (সা) অন্য একটি শহরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারতেন। আবিসিনিয়ায় যেতে পারতেন, যেখানে নাজাশি অবশ্যই তাঁকে সাদরে গ্রহণ করতেন। কিন্তু তখনো তিনি জন্মভূমি মক্কাতেই বসবাস করতে চেয়েছিলেন। মক্কায় থাকা জীবন-মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়ানোর পরই কেবল তিনি সেখান থেকে চলে যান।

আরো পরূনঃ

Leave a Comment