আমিনার মৃত্যু | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব, আগেই উল্লেখ করেছি, শিশু মুহাম্মদের (সা) বক্ষ উন্মুক্ত করার ঘটনার পরপরই। হালিমা তাঁকে তাঁর মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। সে সময়ের কেবল একটি ঘটনা সম্পর্কেই আমরা জানতে পারি; তা হলো, আমিনা তাঁর পুত্রকে নিয়ে ইয়াসরিব (মদিনা) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

আমিনার মৃত্যু | মহানবি মুহাম্মদের (সা) শৈশব | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন
আগেও আমরা আলোচনা করেছি, নবি করিমের (সা) প্রপিতামহী ছিলেন। ইয়াসরিবের আবদুল মুত্তালিবের পিতা ইয়াসরিবের এক নারীর প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করেছিলেন। এভাবে হিজরতের আগেই নবিজি (সা) এবং ইয়াসরিবের মধ্যে এক ধরনের সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল। ইয়াসরিবই একমাত্র শহর যেখানে নবিজি (সা) তাঁর বাল্যকালে বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং মক্কার বাইরের একমাত্র শহর যেখানে তাঁর কিছু আত্মীয়-স্বজন ছিল। বংশরক্ষা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রাখা আরবদের অপরিহার্য রীতি ছিল। তখনকার জাহেলি সমাজে সবাই যার যার আত্মীয়দের দ্বারা সুরক্ষিত থাকত।
আমিনা শিশুপুত্র মুহাম্মদকে (সা) সঙ্গে নিয়ে ইয়াসরিবে যাওয়ার উদ্দেশে মক্কা থেকে রওয়ানা হলেন। উম্মে আয়মান নামের এক পরিচারিকাকেও সঙ্গে নিলেন। উম্মে আয়মান অনেক বছর বেঁচে ছিলেন, তিনি পরবর্তী সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইয়াসরিব ভ্রমণের এই কাহিনিটি উম্মে আয়মানের কাছ থেকে পাওয়া: ঘটনাটির একমাত্র সাক্ষী ছিলেন তিনিই। কেউ যদি উম্মে আয়মানের সঙ্গে বসে নবিজির (সা) শৈশবের সময়ের গল্পগুলো লিখে রাখত তাহলেও আমরা অনেক ইতিহাস জানতে পারতাম।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, তা ঘটেনি। আমিনা যখন ইয়াসরিবে ভ্রমণ করেন, তখন নবি করিমের (সা) বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। কয়েকটি সিরাহ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, নবিজি (সা) সেই ভ্রমণের ৫০ বছর পরে (হিজরতের সময়ে) আবার মদিনায় এলে সেখানকার কিছু কিছু ভবন চিনতে পেরেছিলেন। আমিনা তাঁর পুত্রকে নিয়ে সেখানে কয়েক মাস অবস্থান করেছিলেন। মক্কায় ফেরার পথে মদিনার অদূরে আবওয়া নামের ছোট একটি লোকালয়ে আমিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। আবওয়ার লোকদের সাহায্যে উম্মে আয়মান আমিনাকে সেখানেই সমাধিস্ত করেন। আজও সেখানে আমিনার কবর রয়েছে।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, একদিন মদিনার আমলে] নবি করিম (সা) শহরের বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা থেকে বেরিয়ে গাছগাছালির আড়ালে সরে যান। একজন সাহাবি ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, “নবিজি (সা) সেখানে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিলেন। আমরা আগে তাঁকে কখনও এরকম করে কাঁদতে দেখিনি। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর দাড়ি ভিজে গিয়েছিল।” [জানা যায়, তিনি জনসমক্ষে হাতেগোনা কয়েকবার মাত্র কেঁদেছেন। অনেক সাহাবি তাঁকে কখনই কাঁদতে দেখেননি। সাহাবিরা প্রথমে কোনো প্রশ্ন করেননি। কিন্তু যখন তাঁরা নবিজিকে (সা) কাঁদতে দেখলেন, তখন সেখানে উপস্থিত কেউই আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। এতটাই ছিল তাঁর প্রতি সাহাবিদের ভালোবাসার গভীরতা।
নবিজি (সা) সাহাবিদেরকে বলেন, “আগে আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম।” [উল্লেখ্য যে, ইসলামের প্রাথমিক পর্বে মৃতদেহ দাফন করা ছাড়া কবরস্থানে যাওয়ার অনুমতি ছিল না।] “তবে আমি আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম আমি আমার মায়ের কবরে যেতে পারি কি না। [এখানে লক্ষণীয়, রসুল হলেও তিনি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া একটি পদক্ষেপও নিতেন না; এমনকি তাঁর মায়ের কবর জিয়ারতও করেননি।
“আমি আল্লাহর কাছে আমার মায়ের কবরে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে সে দিয়েছেন। সুতরাং এখন আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করার অনুমতি দিচ্ছি।” সুতরাং এ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কবর জিয়ারত করার অনুমতির ব্যাপারটি নবিজির (সা) তাঁর মায়ের কবর দেখতে চাওয়ার মধ্য দিয়েই এসেছে। তিনি কবর জিয়ারত করতে বলেছিলেন, কারণ এতে আমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় ।
আরো পড়ুনঃ