উসূলে ফিকহের মূলনীতি ও কিতাবুল্লাহ খাস ও আম | আকাঈদ ও ফিকহ

উসূলে ফিকহের মূলনীতি ও কিতাবুল্লাহ খাস ও আম আজকের আলোচনার বিষয়। “উসূলে ফিকহের মূলনীতি ও কিতাবুল্লাহ খাস ও আম [ Principles of Usul Fiqh and Kitabullah Khas and Amm ]” পাঠটি দাখিল এর ৯ম শ্রেণীতে [ Dakhil Class 9 ] এর আকাঈদ ও ফিকহ [ Aqaid & Fiqh ] বিষয়ের পাঠ ।

 

উসূলে ফিকহের মূলনীতি ও কিতাবুল্লাহ খাস ও আম

উসুল আল ফিকহের সংজ্ঞা গবেষক আলেমগণ দুই ভাবে প্রদান করেছেন। শাফেয়ী মাজহাবের আলেমদের মতে, “ফিকহ শাস্ত্রের দলিল-প্রমাণ জানা, দলিল-প্রমাণ থেকে মাসালা উদ্ঘাটন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা, বান্দার অবস্থা জানার ইলমের নাম ”উসুলে ফিকহ”। দ্বিতীয় সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে মালিকি, হানাফি ও হানবালি মাজহাবের আলেমদের মাধ্যমে। তাদের মতে, “উসুলে ফিকাহ সেই সকল মুলনীতির নাম যার মাধ্যমে শরিয়াতের বিস্তারিত উৎস থেকে হুকুম-আহকাম উদ্ঘাটন করা যায়”।

 

সুরা আত তীন

 

হানাফি আলেমদের মতে উসুল আল ফিকহের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শরিয়াতের হুকুম-আহকাম অর্থাৎ ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হারাম, মাকরুহ, মুবাহ। হানাফি মাজহাবের আরেকদল আলেমের মতে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শরিয়াতের দলিল-প্রমাণ যার মাধ্যমে হুকুম-আহকাম সাব্যস্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে অধিকাংশ আলেমের মতে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শরিয়াতের দলিল-প্রমাণ বা উৎসের প্রকার, তাদের তারতম্য বা স্তর, এই উৎস থেকে হুকুম উদ্ঘাটন বা ইসতিমবাত করার পদ্ধতি। উসুল আল ফিকহের প্রকৃতির দিকে খেয়াল করে বলা যায় যে, এই তৃতীয় মতটাই অধিক গ্রহণযোগ্য।

উসুল আল ফিকহে সাধারণত শরয়তি হুকুম, হাকিম, মাহকুম-আলাইহি, মাহকুম-ফিহ, শরিয়াতের মূল ও আনুসঙ্গিক (মুত্তাকাফ-মুখতালাফ ফিহ) উৎস, উৎসের প্রামাণিকতা, সেখান থেকে মাসালা ইসতিমবাত করার শর্তাবলি, মাসালা ইসতিমবাত করার পদ্ধতি অর্থাৎ ভাষা ভিত্তিক মূলনীতি, নসুসের মূলনীতি, ইজতিহাদ-তাকলিদ, মুজতাহিদ-মুকাল্লিদ, এদের অবস্থা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে।

শরিয়াতের মৌলিক উৎস হচ্ছেঃ কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস আর অমৌলিক উৎস হচ্ছে একাধিক। তবে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে সাতটি যথাঃ মাসালিহে মুরসালা, ইসতিহসান, উ’রফ, সাহাবীর বক্তব্য, পুর্ববর্তী শরিয়াত, সাদ্দে-যারাইয় ও ইসতিসহাব। আর ফিকাহের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কুরান-হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বান্দার আমল, অর্থাৎ নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি।

উসুলে ফিকহঃ পরিচয়, ইতিহাস ও ধারা আমাদের ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের তালিকায় “ইলমে-ফিকহ” ও “ইলমে-উসুলে-ফিকহ” নামে দুইটি শাস্ত্র রয়েছে। মুসলমান হিসাবে আমাদের জন্যে যে সকল ইবাদাত করনীয় তার বিবরণ বা শিক্ষা দেওয়া হয় ফিকাহ শাস্ত্রে। এই সকল ইবাদাত, মুয়ামালাত, মুয়াশারাত আমরা কুরআন-হাদিসের নস বা ভাষ্য থেকে আহরণ করে থাকি। কুরআন-হাদিসের নস(ভাষ্য) থেকে মাসালা ইসতিমবাত বা উদ্ঘাটন করার পথ-পদ্ধতি নিয়ে উসুলে ফিকাহতে আলোচনা করা হয়। সেই হিসাবে উসুলে ফিকাহ হচ্ছে ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি।

বর্তমান গ্রবন্ধে আমরা নিম্মোক্ত বিষয় ( ) নিয়ে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহঃ উসুলে ফিকহের সংজ্ঞা উসুলে ফিকহের আলোচ্য বিষয় উসুলে ফিকহের উৎস উসুলে ফিকহের শুরুর কথা ও উসুলের ফিকহের রচনা উসুলে ফিকহের পূর্ববর্তী গবেষকদের গবেষণা-ধারা বর্তমান গবেষকদের গবেষণা ও রচনা-পদ্ধতি (আলোচনাটি তৈরীতে “তারিখে ইলমে উসুলিল ফিকহ – ডঃ তাহির আল-আতবানী” ও “উসুলুল ফিকহ ওয়া মাদারিসুল বাহসি ফিহি- ডাঃ ওয়বাহ জুহাইলি” প্রবন্ধ থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে)

অর্থাৎ ফিকাহ শাস্ত্রের দলিল-প্রমাণ জানা অর্থ এই বিষয় জানা যে, কুরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াসের মাধ্যমে শরিয়াতের বিধান সাব্যস্ত হয়, শরিয়াতের নুসুস বা ভাষ্যে উল্লেখিত “আমর” ওয়জিবের জন্যে, “নাহি” তাহরিমের জন্যে – যদি এই আমর-নাহীর সাথে অন্যে কোন আলামাত যুক্ত না হয়। নুসুসের “আম” শব্দের মাধ্যমে তার সকল সদস্যকে বুঝানো হয় –তাতে “তাখসিস” না হলে ইত্যাদি বিষয় বুঝানো হয়েছে।

দলিল-প্রমাণ থেকে মাসালা উদ্ঘাটন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা এর মাধ্যমে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এই সমস্ত দলিল-প্রমাণ থেকে কীভাবে শরিয়াতের প্রয়োগিক মাসালা উদ্ঘাটন করতে হয় তার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। সুতরাং ইসতিদলাল-ইসতিমবাত সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, যেমন “নস” “জাহিরের” উপর প্রাধান্য পাবে, “মুতাওয়তির” “আহাদের” উপর প্রাধান্য পাবে ইত্যাদি।

বান্দার অবস্থা জানা, অর্থাৎ বান্দা মুজতাহিদ হলে তার কি শর্ত আর মুজতাহিদ না হয়ে মুকাল্লিদ হলে তার কি শর্ত এই সকল শর্ত নিয়ে এই শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ কখন একজন মুজতাহিদের ইজতিহাদ করা মাসায়িল আমাদের জন্যে বা মুকাল্লিদের জন্যে অনুসরন করা অপরিহার্য হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হয়ে থাকে। সুতরাং উসুলে ফিকহের সংজ্ঞা হবে “ফিকাহ শাস্ত্রের দলিল-প্রমাণ সম্পর্কে জানা, এরপর সেই দলিল-প্রমাণ থেকে হুকুম-আহকাম উদ্ঘাটন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা এবং কারা মাসালা উদ্ঘাটন করতে পারবে বা কাদের উদ্ঘাটন করা মাসালা সাধারন মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হবে সেই সম্পর্কে জানা”।

প্রথমে বলেছিলাম যে, উসুলে ফিকহের সংজ্ঞা দুইভাবে প্রদান করা হয়েছে। প্রথম সংজ্ঞা ইতিপুর্বে উল্লেখ করেছি, এবার দেখি দ্বিতীয় সংজ্ঞা কীভাবে প্রদান করা হয়েছে।

এই সংজ্ঞার মাধ্যমে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন উসুলবিদ কোন বিশেষ নস বা নসের ইসতিদলাল নিয়ে আলোচনা করেন না। অর্থাৎ উসুলবিদের আলোচনাতেই এই প্রসঙ্গ আসবে না যেঃ {وأحل الله البيع وحرَّم الربا..} {فمن شَهِد منكم الشهر فليصمه} উল্লেখিত আয়াতদ্বয়ের প্রথমটির মাধ্যমে সুদের অবৈধতা আর দ্বিতীয়টি দ্বারা রোজার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়, বরং তিনি শারিয়াতের মৌলিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করবেন, অর্থাৎ তার আলোচনাতে আসবে যে,

কুরআন-হাদিস শারিয়াতের উৎস এখান থেকে মাসয়ালা ইসতিমবাত করার পদ্ধতি, নাসকে “জাহির” এর উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, “মুতাওয়াতির” “আহাদের” উপর অগ্রাধিকার পাবে, “মুতলাক”কে মুকাইয়িদের” সাথে মিলানো হবে, শারিয়াতের সমস্ত “আমর” উজুবের অর্থে ইত্যাদি ধরনের মৌলিক নীতিমালা নিয়ে একজন উসুলবিদ আলোচনা করে থাকেন। الأدلة التفصيلية أو الجزئية

و الأدلة الكلية أو الإجمالية: এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইসলামী ফিকাহ বা উসুলে ফিকাহতে আমাদের সামনে দুই ধরনের দলিল রয়েছে। এক ধরনের দলিল কোন একটি বিশেষ অবস্থা বা বিধানের সাথে জড়িত, যেমন কুরআনের আয়াতঃ {حُرّمت عليكم أمهاتكم وبناتُكم..} {ولا تقربوا الزنى..} প্রথম আয়াতটির মাধ্যমে একটি বিশেষ হুকুম অর্থাৎ উল্লেখিত মাহরামের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা অবৈধ সাব্যস্ত হয় আর দ্বিতীয় আয়াতের মাধ্যমে সাব্যস্থ হয় যে, জিনা হারাম।

একই সাথে শারিয়াতে এ রকম দলিল রয়েছে যেগুলো বিশেষ একক কোন অবস্থা বা হুকুমের সাথে সম্পর্ক রাখে না, বরং সেগুলোর সম্পর্ক একাধিক হুকুমের সাথে, যেমন কুরআন-সুন্নাত, ইজমা-কিয়াস, আমর উজুবের অর্থ প্রদান করে, নাহি হুরমতের অর্থ প্রদান করে ইত্যাদি, এই সকল মুলনীতি উসুলবিদের আলোচনার বিষয়। পক্ষান্তরে প্রথম প্রকারের দলিল ফকিহ বা ফিকাহ বিশারদের আলোচনার বিষয়।

 

উসূলে ফিকহের মূলনীতি

উসূলে ফিকহের মূলনীতি ও কিতাবুল্লাহ খাস ও আম নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও দেখুনঃ 

Leave a Comment