বিকল্প পথ নেওয়া | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১, মক্কায় যাওয়ার মূল রাস্তাটি যেহেতু খালিদ অবরোধ করে রেখেছিল, তাই একটি বিকল্প পথ খোঁজার প্রয়োজন দেখা দিল। নবিজি (সা) জিজ্ঞেস করলেন, “কে আমাদের অমুক অমুক পথ দিয়ে নিয়ে যেতে পারবে?” তিনি জানতেন যে আরেকটা পথ আছে, কিন্তু সেখানে কীভাবে যেতে হবে তা জানতেন না। তাঁর কথায় একজন সাহাবি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, ওই রাস্তা দিয়ে কীভাবে যেতে হয় তা আমি জানি।”
বিকল্প পথ নেওয়া | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-১ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

নবিজি (সা) তাঁকে পথপ্রদর্শক বানালেন ।
কিন্তু ওই বিকল্প রাস্তায় যাওয়ার জন্য কাঁটা ও আগ্নেয়গিরির পাথরে পূর্ণ পুরো একটি উপত্যকা পার হতে হয়েছিল। কাঁটা ও পাথরের আঘাতে সাহাবিদের অনেকেরই পায়ে রক্তক্ষরণ হয়। ব্যথায় তাঁদের এতটাই ফুলে গিয়েছিল যে নবিজি (সা) তাঁদের উৎসাহিত করার জন্য বলেছিলেন, “তোমাদের জন্য এই উপত্যকা (যার মধ্য দিয়ে আমরা এখন যাচ্ছি) বনি ইসরাইলের সেই দরজার মতো। তিনি যে দরজার কথা বলছেন তা কোরানে উল্লেখ আছে:
“(স্মরণ করো) যখন আমি বললাম, ‘তোমরা এ জনপদে প্রবেশ করো এবং যেখান থেকে ইচ্ছা ও যা ইচ্ছা খাও, মাথা নিচু করে প্রবেশ করো আর বলো ‘ক্ষমা চাই’।’…।” [সুরা বাকারা, ২:৫৮] এই আয়াত পাঠ করার পর নবিজি (সা) বললেন, “সব পাপ মোচন হওয়া ছাড়া কেউ-ই এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে যাবে না।” এই ক্ষমার বিষয়টি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিশ্চয়ই তাঁকে বলেছেন। কোরানের আয়াতের সঙ্গে নবিজির (সা) এই কথা সাহাবিদের ওই দুর্গম উপত্যকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

তবে তিনি একটি ব্যতিক্রমের কথাও বলেছিলেন: সবাই ক্ষমা পাবে, কিন্তু ‘লাল রঙের উটসহ লোকটি ছাড়া’। সাহাবিরা বিস্মিত হয়ে ভাবল, এই লোকটি কে! তাঁরা পেছনের দিকে একজন বেদুইন লোককে দেখতে পেলেন। লোকটি বলছে, “আমি একটা লাল উট হারিয়ে ফেলেছি! কেউ কি সেটা দেখেছে?” সাহাবিরা ভাবলেন, নিশ্চয়ই এই লোকটিই সে হবে। তাঁরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি আমাদের সঙ্গে আসছেন না কেন? চলুন আমরা নবিজির (সা) কাছে যাই। সম্ভবত তিনি আপনাকে ক্ষমাপ্রাপ্তদের মধ্যে রাখবেন।” কিন্তু আসলে লোকটির হৃদয়ে ছিল মুনাফেকি, যা তার উত্তর থেকেই বোঝা যায়। সে বলল, “তোমাদের সঙ্গীর কাছে গিয়ে পাপ মোচন করানোর চেয়ে উটের সন্ধান করাটা আমার কাছে বেশি পছন্দের কাজ।”
নবিজিকে (সা) ঘিরে মুনাফেকরাও ছিল
উপরে উল্লেখিত বেদুইনের ঘটনাটি থেকে দেখা যায় যে, যারা সেখানে নবিজির (সা) সঙ্গে শারীরিকভাবে অবস্থান করছিল তাদের সবাই প্রকৃত মুমিন ছিল না। আল্লাহ বলেন: “আরব বেদুইনদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ এবং মদিনাবাসীদের কেউ কেউ মুনাফেক। ওরা কপটতায় পাকা।” [সুরা তওবা, ৯:১০১]
মুসলিমদের মধ্যে সুন্নি নন এমন গোষ্ঠীর লোকেরা ওপরের আয়াতটি উল্লেখ করে বলে থাকেন, “দেখুন, আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলছেন যে নবিজির (সা) আশেপাশের লোকদের মধ্যে মুনাফেক ছিল।” তারা এ ক্ষেত্রে আবু বকর (রা), উমর (রা), আয়েশা (রা) প্রমুখদের কথা বোঝানোর চেষ্টা করে। আস্তাগফিরুল্লাহ! কোরান ও সুন্নাহে প্রধান সাহাবিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক প্রশংসা করা হয়েছে। পবিত্র কোরানে সাধারণভাবে বলা কোনো আয়াতকে (৯:১০১) আমরা বিশেষ অবস্থা কিংবা ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি না।
আরও পড়ুনঃ