খুজা গোত্র থেকে একজন দূত: বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

খুজা গোত্র থেকে একজন দূত: বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২, এখন আমরা আপস-আলোচনার ঘটনাগুলো বর্ণনা করব, যা দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা দূত চালাচালির মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছিল। প্রথম যে ব্যক্তি দূত হিসেবে আবির্ভূত হয় সে মক্কা ও মদিনার বাইরের খুজা গোত্রের। খুজারা তখন পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ না করলেও নবি করিমের (সা) প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা ছিল একজন সম্ভ্রান্ত আরব এবং খুজা গোত্রের অন্যতম প্রধান নেতা; সে গৃহযুদ্ধ চায়নি।

খুজা গোত্র থেকে একজন দূত: বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

খুজা গোত্র থেকে একজন দূত: বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বুদায়েল স্বেচ্ছায় একজন দূত হিসেবে নবিজির (সা) কাছে উপস্থিত হয়ে প্রস্তাব দিল, “হে মুহাম্মদ, আমি এইমাত্র হুদায়বিয়ার অপর প্রান্ত থেকে এসেছি। সেখানে আমি কাব ইবনে লুহাই এবং আমির ইবনে লুহাইয়ের পুত্রদেরকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখে এসেছি। তারা আপনাকে হারামে প্রবেশ করতে বাধা দিতে এবং আপনার সাথে লড়াই করার জন্য অপেক্ষা করছে।”

কাব এবং আমির ইবনে লুয়াই ছিলেন কুরাইশদের পূর্বপুরুষ। কাব ও আমিরের পুত্র বলতে এখানে কুরাইশদেরই বোঝানো হয়েছে ।

নবিজি (সা) বললেন, “আমরা তো যুদ্ধ করতে আসিনি, বরং আল্লাহর ঘরকে সম্মান জানাতে (ওমরা পালন করতে) এসেছি। অবশ্যই যুদ্ধ কুরাইশদের ক্ষতি করেছে এবং তাদের যন্ত্রণা দিয়েছে। তারা চাইলে আমরা তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আপস-মীমাংসায় আসতে পারি। আর তারা চাইলে আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তিনি (আল্লাহ) আমাকে বিজয় দান করেন, কিংবা আমার এই গর্দান কাটা পড়ে।”

 

islamiagoln.com google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

তারপর তিনি বললেন, “যদি তারা ইচ্ছা করে, আমি তাদের কিছু সময় দিতে পারি যাতে তারা এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে এবং তারপর আমাদের জন্য শহর ছেড়ে চলে যায়।” নবিজি (সা) এখানে যা বলতে চাইছেন তা হলো: যদি আমাদের উপস্থিতি তাদের জন্য বিব্রতকর হয়, তাহলে আমি তাদের কয়েক দিন সময় দেব। তারা সাময়িকভাবে মক্কা ছেড়ে চলে যেতে পারে। তারপর আমরা সেখানে প্রবেশ করব, ওমরা করব এবং ওমরা শেষ হলে চলে যাব ।

বুদায়েল বলল, সে নবিজির (সা) প্রস্তাবটি কুরাইশদের জানাবে। তা ছাড়া কী কারণে মুসলিমরা এখানে এসেছে তা এখন পর্যন্ত কুরাইশদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। বুদায়েল কুরাইশদের কাছে গিয়ে বলল, “আমি এই লোকটির সঙ্গে কথা বলেছি এবং সে-ও আমাকে কিছু কথা বলেছে। তোমরা যদি চাও, তাহলে আমি তোমাদের তা বলতে পারি।” ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, তাদের মধ্যে মূর্খ গোছের একজন বলে, “তোমার কথা শোনার কোনো কারণ আমরা দেখি না। তোমার তো নতুন কিছু বলার নেই।” কিন্তু তাদের মধ্যে বুদ্ধিমান একজন বলে, “তাকে বলতে দাও।”

 

খুজা গোত্র থেকে একজন দূত: বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা | হুদায়বিয়ার সন্ধি-২ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

 

বুদায়েল মুসলিমদের এখানে আসার পেছনের শান্তিপূর্ণ অভিপ্রায় এবং নবিজির (সা) প্রস্তাবটি কুরাইশদের কাছে পেশ করল। সেই সঙ্গে সে নিজের পরামর্শটাও জানাল: “হে কুরাইশগণ, তোমরা কেন এই লোকটির ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করছ? তিনি তো এখানে যুদ্ধ করতে আসেননি, বরং তিনি এই ঘরের (কাবার) পবিত্রতাকে সম্মান করতে এসেছেন।”

কুরাইশরা জবাবে বলল, সে এখানে কুরাইশদের মধ্যে সন্দেহের বীজ বপন করছে। “আল্লাহর কসম, আমরা তাকে কখনই মক্কায় ঢুকতে দেব না, কারণ তাহলে আরবরা বলবে যে আমাদের বিরুদ্ধে সে জিতে গেছে।” লক্ষ করুন, কুরাইশরা এখনও নিজেদের গর্ব আর সম্মান নিয়েই পড়ে আছে: ‘যখন আরবরা শুনবে যে মুহাম্মদ মক্কায় প্রবেশ করেছে, আর আমরা তাকে বাধা দিতে পারিনি, তখন আমাদের মানসম্মান বলে আর কিছু থাকবে না।’ এখানেই বুদায়েলের মধ্যস্থতা শেষ হয়ে যায়। সে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কুরাইশরা তাতে সাড়া দেয়নি। তাই আপস-আলোচনা এ যাত্রা আর এগুলো না ।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment