ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অধ্যায় আজকের আলোচনার বিষয়। “ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অধ্যায় [ Integrity in business trade ]” ক্লাসটি “ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অধ্যায় [ Integrity in business trade ]” অধ্যায়ের বা ২৭ম অধায়ের [ Chapter 27 ] পাঠ, যা ১০ম শ্রেণীতে পড়ানো হয়। “ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অধ্যায় [ Integrity in business trade ]” পাঠটি “হাদিস শরীফ [ Hadith Sharif ]” বিষয়ের অংশ।
ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অধ্যায়
জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষকে উপার্জনের নানাবিধ পথ বেছে নিতে হয়। ইসলামের দিক-নির্দেশনা হলো হালাল পথে জীবিকা উপার্জন করা। হারাম পথে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কারণ ইবাদত কবুলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত হলো হালাল উপার্জন।
হালাল পথে অর্থ-সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো সততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সর্বোত্তম উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তাই সর্বোত্তম।’

ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের গুরুত্ব ইসলামে অনস্বীকার্য। সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সঙ্গে বৈধ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতে ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।’ সুরা আন নিসা : ২৯
সততার সঙ্গে হালাল উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহিত করে ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ সুরা বাকারা : ২৭৫
বর্ণিত আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইসলাম উপার্জনের পেশা হিসেবে হালাল পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যেমন উৎসাহ দিয়েছে, তেমনি অবৈধপথে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করতে নিষেধ করেছে। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়া গেলেও এর শেষ পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কাজেই অন্যায়, জুলুম, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি, মজুদদারি ইত্যাদি অবৈধ।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবসায়ীদের মিথ্যা পরিহারের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সাহাবি ওয়াসিলা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে আসতেন এবং বলতেন, ‘হে বণিক দল! তোমরা মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কারবার থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে।’
ইসলামের নির্দেশনা হলো পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সব ব্যবসায়ীকে মিথ্যা কসম বর্জন করতে হবে। ব্যবসায় ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। দ্রব্যের কোনো দোষ-ত্রুটি থাকলে ক্রেতার সামনে তা প্রকাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হবে এবং তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। কোনো প্রকার গোপনীয়তার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ক্রয়ের ইচ্ছা না থাকলে কেবলমাত্র আসল ক্রেতাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী করে দেওয়া ইসলামে মারাত্মক অপরাধ।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নেওয়ার সময় বেশি নেওয়া এবং দেওয়ার সময় কম দেওয়া ইসলামে মারাত্মক অপরাধ। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের ধ্বংস অনিবার্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ওজনে কম দেয় তাদের জন্য ধ্বংস। তারা যখন লোকদের কাছ থেকে কিছু মেপে নেয়, তখন পুরোপুরি নেয়। আর যখন তাদের মেপে বা ওজন করে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কী ভেবে দেখে না যে, তারা সেই কঠিন দিনে পুনরুত্থিত হবে, যেদিন সব মানুষ স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে দণ্ডায়মান হবে।’ সুরা মুতাফফিফিন : ১-৫
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, অবৈধ উপার্জন ও লোভ-লালসাকে সংবরণ করতে হবে। এটাই ইসলামের দাবি ও শিক্ষা।
ব্যবসা বাণিজ্যে সততা অধ্যায় নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ