সুরা আল-হাশরের তাফসির | বনু নাদিরকে বহিষ্কার, আল্লাহ তায়ালা পুরো সুরা হাশর বনু নাদিরকে উদ্দেশ্য করে নাজিল করেছেন। ইবনে আব্বাস এই সুরাটিকে ‘সুরা বনু নাদির’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এটিকে ‘সুরা হাশর’ বলতে চাননি। কারণ হলো ‘হাশর’ শব্দের অর্থ ‘জমায়েত হওয়া’। সাধারণত আল্লাহ তায়ালা ‘হাশর’ শব্দটি কেয়ামতের দিনের অর্থে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এই সুরাটিতে কেয়ামতের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। বনু নাদিরের সাথে কী ঘটেছিল সেই আলোকে সুরাটি পড়লে এর প্রতিটি আয়াত খুব স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়।
সুরা আল-হাশরের তাফসির | বনু নাদিরকে বহিষ্কার | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

[৫৯:১] “আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তারা সবাই আল্লাহ তায়ালার অসীম মহিমা ঘোষণা করছে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
[৫৯:২] “তিনিই (সেই মহান সত্ত্বা) কিতাবিদের মধ্যে যারা সত্য প্রত্যাখ্যানে অনড়, তাদেরকে প্রথমবারের জমায়েতেই (হাশর’) তাদের বাসভূমি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তোমরা কল্পনাও করতে পারনি যে ওরা নির্বাসিত হবে। আর ওরা মনে করেছিল, ওদের দুর্ভেদ্য দুর্গগুলো আল্লাহর হাত থেকে ওদেরকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন একদিক থেকে এল যা ওরা ধারণাও করতে পারেনি। আর ওদের অন্তরে তা ত্রাসের সঞ্চার করল। ওদের বাড়িঘর ওদের নিজেদের হাতে ও বিশ্বাসীদের হাতে ধ্বংস হয়ে গেল। অতএব অন্ত দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, (এসব ঘটনা থেকে) তোমরা শিক্ষাগ্রহণ করো।”
আল্লাহ বলছেন, তিনি কিতাবিদের মধ্যে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের (বনু নাদির) প্রথম ‘হাশর’ থেকে বহিষ্কৃত করেছেন। আল্লাহ যখন ‘প্রথম হাশর’ উল্লেখ করেন, তখন প্রথমেই আমাদের মনে যে কথাটি আসে তা হলো একাধিক হাশর রয়েছে। প্রকৃতপক্ষেই একাধিক হাশরের ঘটনা ঘটেছিল। বনু কুরায়জার ক্ষেত্রে একটি হাশর ছিল। খায়বারের ক্ষেত্রে আরেকটি হাশর ছিল, বনু নাদির বহিষ্কারের পর যেখানে গিয়েছিল (সেখানকার ঘটনা নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করব)। তারপরে চূড়ান্ত হাশর (অর্থাৎ বিচারের দিন) তো আছেই। —আল্লাহ এরপর বলেন, “তোমরা কল্পনাও করতে পারনি যে ওরা নির্বাসিত হবে (বা চলে যাবে)।” বেশির ভাগ পণ্ডিতের মতে, আল্লাহ বনু নাদিরকে নিয়ে এই কথাটি বলেছেন।
তারা (বনু নাদির) ভেবেছিল যে তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করবে, কিন্তু আল্লাহ যে এমনভাবে তাদের পাকড়াও করবেন তা তারা ভাবতে পারেনি। এটি তাদের কল্পনায়ও ছিল না যে, মুসলিমরা এত দ্রুত এসে তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলবে এবং একইসঙ্গে তাদের মিত্রপক্ষদেরও তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাদের মনের মধ্যে সংশয় ও ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তাদের নিজের হাতে এবং মুমিনদের মাধ্যমে বাড়িঘরগুলোকে ধ্বংসের ঘটনায় দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন জ্ঞানী মানুষদের সাবধান হওয়ার ব্যাপার রয়েছে।
[৫৯:৩] “আল্লাহ ওদেরকে নির্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে পৃথিবীতে অন্য শাস্তি দিতেন; আর পরকালে ওদের জন্য রয়েছে আগুনের শাস্তি । [৫৯:৪] “এজন্য যে ওরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর কেউ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলে, আল্লাহ তো শাস্তিদানে কঠোর।” —আল্লাহ এখানে বলছেন যে তারা সহজেই পার পেয়ে গেল, কারণ তাদের মৃত্যুদণ্ডের বদলে কেবল নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। নবিজি (সা) তাদের প্রতি সর্বোচ্চ উদারতা দেখিয়েছেন। তবে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা) বিরোধিতা করার কারণে পরকালে তাদের জন্য শাস্তি নির্ধারিত হয়ে আছে।
[৫৯:৫] “(এ সময়) তোমরা যেসব খেজুরগাছ কেটে ফেলেছ এবং যেগুলো না কেটে রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে। এজন্য যে, এ দিয়ে আল্লাহ সত্যত্যাগীদের অপদস্থ করবেন।”
—গাছ কাটার ব্যাপারে সাহাবিরা ভেবেছিলেন, যা আমাদের উপকারে আসবে তা আমরা কেন ধ্বংস করব, ‘এই গাছগুলো তো অচিরেই আমাদের মালিকানায় আসবে, তবু আমরা এগুলো নষ্ট করব’ ইত্যাদি। এভাবে সাহাবিরা এর পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তর আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোরানের আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এটি ছিল একটি কৌশল, যা বনু নাদিরের মনোবল ভেঙে দিয়ে তাদের পদত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিল। উল্লেখ্য যে, চার মাজহাবের বেশিরভাগই বৈধ ইসলামি সেনাবাহিনীর জন্য এ জাতীয় কাজের অনুমতি দিয়েছে ।
[৫৯।৬] “আল্লাহ তাদের (নির্বাসিত ইহুদিদের) কাছ থেকে তাঁর রসুলকে যা দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়ায় বা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি। আল্লাহ তো যার ওপর ইচ্ছা তার ওপরেই তাঁর রসুলদের কর্তৃত্ব প্রদান করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।” – এটি ছিল ফায়ের বিষয়ে। এখানে আল্লাহ বলছেন, মুসলিমরা কোনো কিছু প্রাপ্তির জন্য লড়াই করেননি। তাই এটি ফায়ে, গনিমত নয়। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিমদের জন্য উপহার ।
[৫৯:৭] “আল্লাহ এ জনপদবাসীদের কাছ থেকে নিয়ে তাঁর রসুলকে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, রসুলের, তাঁর আত্মীয়স্বজনের, এতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের, যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই ধনসম্পদ আবর্তিত না হয়। রসুল যা কিছুর (অনুমতি) দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”

—আল্লাহ ফায়ের কে কত অংশ পাবে তার বিধান দিয়েছেন। অতঃপর তিনি এর পেছনের কারণটিও ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: “যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই যেন ধনসম্পদ আবর্তিত না হয়।” এই আয়াতটি আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে (১ শতাংশ বনাম ৯৯ শতাংশ) নাকচ করে ইসলামি অর্থনীতির ধারণা দেয়। ২০০০ সালে বিশ্বের ১ শতাংশ ধনীর কাছে মোট বৈশ্বিক সম্পদের ৪০ শতাংশ মালিকানা ছিল। অন্যদিকে ইসলামি ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য (‘মাকসিদ’) হলো ধনী যেন আরও বেশি ধনী না হয়, এবং সম্পদ যেন সমাজে সবার মাঝে ভাগ হয়ে যায়। এই আয়াতটি বনু নাদিরের সম্পদের উদ্দেশ্যে করা হলেও এ থেকে আমরা ইসলামিক অর্থনীতির উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ধারণা পাই।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “রসুল যা কিছুর অনুমতি দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো ও যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো।” পবিত্র কোরানে যে কয়েকটি আয়াতে নবিজির (সা) প্রতি আনুগত্য স্বীকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এই আয়াত সৰ্বাধিক সুস্পষ্ট। যদিও এই আয়াত বনু নাদিরের সম্পদের বণ্টনের জন্য নাজিল হয়েছিল, তবু এটি থেকে আমরা সাধারণ শিক্ষাও নিতে পারি ।
[৫৯:৮] “এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুজাহিদদের জন্য, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সাহায্যে এগিয়ে এসে নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি থেকে উৎখাত হয়েছে। তারাই তো সত্যাশ্রয়ী।” -আল্লাহ মুহাজিরদের নেয়ামতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে তাঁরা ফায়ের অংশ পাবেন। যখন আপনি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করেন তখন আল্লাহ আপনাকে তার চেয়েও বেশি ফিরিয়ে দেন।
[৫৯:৯] “মুহাজিরদের আসার আগে এই শহরটির যেসব আধিবাসী ইমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা (তাদেরকে) মনে মনে ঈর্ষা করে না, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা মুহাজিরদের নিজেদের ওপরে জায়গা দেয়।” –এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আনসারদের এমনভাবে প্রশংসা করেছেন যে এটি তাদের সবচেয়ে প্রিয় আয়াতে পরিণত হয়েছিল । আল্লাহ আনসারদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে তাঁরা সফল হয়েছেন।
[৫৯:১০] “যারা তাদের (মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের আগে আমাদের যে ভাইয়েরা ইমান এনেছে তাদের ক্ষমা করুন, আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো দয়াপরবশ, পরম দয়ালু।” —’যারা ওদের পরে এসেছে’ বলতে আমাদের (অর্থাৎ পরবর্তী যুগের মুসলিমদের) কথা বলা হয়েছে। মুহাজির বা আনসারদের মর্যাদা আমাদের চেয়ে অনেক ওপরে। তবে ইনশাআল্লাহ আমাদের জন্যও বরকত রয়েছে, আল্লাহ আমাদেরও এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
[৫৯:১১] “(হে রসুল), তুমি কি দেখনি সেই মুনাফেকদের, কিতাবিদের মধ্যে যারা সত্য-প্রত্যাখ্যানকারী তাদের সেইসব ভাই-বেরাদরকে বলে, ‘তোমাদের যদি তাড়িয়ে দেওয়া হয় তবে আমরাও তোমাদের সাথে বেরিয়ে যাব এবং আমরা তোমাদের ব্যাপারে কখনও কারও কথা মানব না। আর যদি তোমরা আক্রান্ত হও, আমরা অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করব।’ কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওরা ঘোর মিথ্যাবাদী।” —এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং বনু নাদিরের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি উভয়কেই ‘অবিশ্বাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বনু নাদিরকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যা বলেছিল তা তো কেউই জানত না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের বলা প্রতিটি কথা ফাঁস করে দিয়েছেন।
[৫৯:১২] “আসলে ওদের তাড়িয়ে দিলে মুনাফেকরা ওদের সাথে দেশত্যাগ করবে না, আর ওরা আক্রান্ত হলে এরা ওদের সাহায্য করবে না, এমনকি সাহায্য করতে এলেও পিঠটান দেবে। অবিশ্বাসীরা কোনো সাহায্যই পাবে না।” —আল্লাহ বলেন, মুনাফেকরা যদি সাহায্য করেও, একসময় তারা কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাবে, যেমনটি তারা করেছিল ওহুদের যুদ্ধে । [৫৯:১৩] “আসলে তাদের অন্তরে আল্লাহর চেয়ে তোমরাই বেশি ভয়ের কারণ । কেননা তারা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।” —আল্লাহ মুসলিমদের বলছেন, বনু নাদির তাদেরকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভয় করত। আল্লাহ আমাদের এমন কিছু বলছেন যা কেবল তাঁর পক্ষেই জানা সম্ভব; অর্থাৎ মানুষের মনে কী আছে তা তো কেবল তিনিই জানেন।
[৫৯:১৪] “এরা সকলে একযোগে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে না। এরা যুদ্ধ করবে কেবল সুরক্ষিত শহরের অভ্যন্তরে বা দুর্গপ্রাচীরের অন্তরালে থেকে। তাদের পারস্পরিক শত্রুতা খুবই মারাত্মক। তুমি মনে কর ওরা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু ওদের মনের মিল নেই। এর কারণ এই যে, ওরা এক নির্বোধ সম্প্রদায়।” —আল্লাহ তাদের (বনু নাদিরের) কাপুরুষতা প্রকাশ করে দিয়েছেন, এবং তারপর তিনি তাদের মধ্যেকার মতবিরোধ প্রকাশ করেছেন।
[৫৯:১৫] “এদের ঠিক আগে যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তির স্বাদ নিয়েছে তারাই এদের একমাত্র তুলনা। এদের জন্য রয়েছে নিদারুণ শান্তি।” —বনু নাদিরের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা কি বনু কায়নুকার পরিণতি দেখেনি?’ ‘তারা কি ওই উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেবে না?’ অন্য কথায়, ‘তুমি যদি আল্লাহর ওহি থেকে শিক্ষা না নাও, তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও।’
[৫৯:১৬] “এদের তুলনা সেই শয়তানের মতো যে মানুষকে বলে, ‘অবিশ্বাস করো।’ তারপর যখন সে অবিশ্বাস করে তখন শয়তান বলে, ‘তোমার সাথে তো আমার কোনো সম্পর্ক নেই; আমি বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।” —মুনাফেকদের বিষয়টি অনেকটা শয়তানের মতো। শয়তান মানুষকে বলে, “আল্লাহকে ত্যাগ করো’, এবং মানুষ যখন আল্লাহকে ত্যাগ করে, তখন সে বলে, ‘আমি তো তোমাকে এসব করতে বলিনি! তোমার ব্যাপারে আমার এখন আর কিছু করার নেই।’ এখানে আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথা বলা হয়েছে; সে অসংখ্যবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় আর তার দেখা পাওয়া যায়নি। সুতরাং আল্লাহ আক্ষরিক অর্থেই আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে শয়তানের সঙ্গে তুলনা করছেন।
[৫৯:১৭] “শেষ পর্যন্ত সত্য-প্রত্যাখ্যানকারী ও মুনাফেক উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর আর এটাই হচ্ছে সীমালঙ্ঘনকারীদের কর্মফল।” সুরার বাকি অংশে মুমিনদের কিছু বিষয় স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুরাটি শেষ হয়েছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কিছু সুন্দর নাম ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিয়ে । বনু নাদিরের ঘটনা না জানলে আমরা কখনই সুরা হাশরের মর্মার্থ বুঝতে পারতাম না। এটিই সিরাহ অধ্যয়নের অন্যতম প্রধান সুবিধা ।
বনু নাদিরের বহিষ্কারের সময়
বনু নাদিরকে কখন বহিষ্কার করা হয়েছিল তা নিয়ে আদি সিরাহ লেখকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ইসলামের প্রাথমিক কয়েকটি প্রজন্মের তথ্য অনুসারে ঘটনাটি বদরের যুদ্ধের ঠিক পরপরই সংঘটিত হয়েছিল। এই মত উরওয়া ইবনে জুবায়েরের (মৃ. ৯৪ হিজরি) এবং ইবনে শিহাব আল জুহরির (মৃ. ১২৪ হিজরি)। এঁরা দুজনই ছিলেন তাবেয়িদের মধ্যে সিরাহ বিষয়ে বিশিষ্ট পণ্ডিত ।
তবে ইবনে ইসহাক (মৃ. ১৫০ হিজরি), আল-ওয়াকিদি (মৃ. ২০৭ হিজরি), ইবনে সাদ (মৃ. ২৩০ হিজরি) এবং পরবর্তী যুগের পণ্ডিতেরা বলেন, প্রাথমিক যুগের পণ্ডিতেরা ভুল করেছেন অথবা বনু কায়নুকার বহিষ্কারের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছেন। ইবনে শিহাব আল জুহরি ছিলেন ইবনে ইসহাকের শিক্ষক, অর্থাৎ এক প্রজন্ম আগের ।
এ থেকে আমরা ধরে নিতে পারি, পরবর্তী যুগের পণ্ডিতেরা আগের পণ্ডিতদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে ঠিকঠাক করেছেন। পরবর্তী যুগের পণ্ডিতদের মতে, বদরের যুদ্ধের ঠিক পরপরই এ ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়, তা ঘটেছিল আরও পরে। কারণ বির মাউনার রক্তমূল্যের ঘটনা নিশ্চিতভাবেই ওহুদের যুদ্ধের পরে সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং সবচেয়ে যৌক্তিক মতামত হলো, বনু নাদিরকে বহিষ্কারের সময়টি ছিল হিজরতের ৪র্থ বছরের শাওয়াল মাস, অর্থাৎ বদরের যুদ্ধের অন্তত দুই বছর পরে ।
আরও পড়ুনঃ