সূরা হা মীম সেজদাহ্ পাঠ [ Repetition ] আজকের ভিডিও এর বিষয়। “সূরা হা মীম সেজদাহ্ [ Surah Ha mim Sajda ]” আল-কুরআনের [ Al-Quran ] ৪১তম সূরা বা অধ্যায় [ Surah/Chapter 41], এর আয়াত সংখ্যা ৫৪টি। “সূরা হা মীম সেজদাহ্ [ Surah Ha mim Sajda ]” মাক্কী সূরা [ Makki Surah ]।
সূরা হা মীম সেজদাহ্
সূরা হা মীম সেজদাহ্ বা সূরা ফুস্সিলাত, (আরবি: سورة فصلت), (বিশ্বাসী), মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৪১তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৫৪ টি।
(৪১-হামীম-আস-সাজদাহ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
(আরবী) فَإِنْ أَعْرَضُوا فَقُلْ أَنْذَرْتُكُمْ صَاعِقَةً مِثْلَ صَاعِقَةِ عَادٍ وَثَمُودَ নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত অনুসারে এর নাযিল হওয়ার সময়কাল হচ্ছে হযরত হামযার (রা:) ঈমান আনার পর এবং হযরত উমরের (রা:) ঈমান আনার পূর্বে। নবী করিম ﷺ এর প্রাচীনতম জীবনীকার মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল-কারযীর বরাত দিয়ে এই কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন যে, একদিন কিছু সংখ্যক কুরাইশ নেতা মসজিদে হারামের মধ্যে আসর জমিয়ে বসেছিল এবং মসজিদের অন্য এক কোণে রসূলুল্লাহ ﷺ একাকী বসেছিলেন।

এটা এমন এক সময়ের ঘটনা যখন হযরত হামযা ঈমান এনেছিলেন এবং কুরাইশরা প্রতিনিয়ত মুসলমানদের সাংগঠনিক উন্নতি দেখে অস্থির হয়ে উঠছিলো। এই সময় ‘উতবা ইবনে রাবী’আ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর) কুরাইশ নেতাদের বললেন, ভাইসব, আপনারা যদি ভালো মনে করেন তাহলে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের ﷺ সাথে আলাপ করতে এবং তাঁর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারি। সে হয়তো তার কোনটি মেনে নিতে পারে এবং আমাদের কাছেও তা গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। আর এভাবে সে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে।
উপস্থিত সবাই তার সাথে একমত হলো এবং ‘উতবা উঠে নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে বসলো। নবী ﷺ তার দিকে ফিরে বসলে সে বললো: ভাতিজা, বংশ ও গোত্রের বিচারে তোমার কওমের মধ্যে তোমার যে মর্যাদা তা তুমি অবগত আছো। কিন্তু তুমি তোমার কওমকে এক মুসিবতের মধ্যে নিক্ষেপ করেছো। তুমি কওমের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছো। গোটা কওমকে নির্বোধ প্রতিপন্ন করেছো। কওমের ধর্ম ও তাদের উপাস্যদের সমালোচনা করেছো এবং এমন কথা বলতে শুরু করেছো যার সারবস্তু হলো, আমাদের সকলের বাপ-দাদা কাফের ছিল।
এখন আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন। আমি তোমার কাছে কিছু প্রস্তাব রাখছি প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো। “হয়তো তার কোনটি তুমি গ্রহন করতে পার।” রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: আবুল ওয়ালীদ, আপনি বলুন, আমি শুনবো। সে বললো: ভাতিজা, তুমি যে কাজ শুরু করেছো তা দিয়ে সম্পদ অর্জন যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে এতো সম্পদ দেব যে, তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে সম্পদশালী হয়ে যাবে। এভাবে তুমি যদি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করে থাকো তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বানিয়ে নিচ্ছি, তোমাকে ছাড়া কোন বিষয়ে ফায়সালা করবো না।
যদি তুমি বাদশাহী চাও তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের বাদশাহ বানিয়ে নিচ্ছি। আর যদি তোমার ওপর কোন জিন প্রভাব বিস্তার করে থাকে যাকে তুমি নিজে তাড়াতে সক্ষম নও তাহলে আমরা ভালো ভালো চিকিৎসক ডেকে নিজের খরচে তোমার চিকিৎসা করিয়ে দেই। ‘উতবা এসব কথা বলছিলো আর নবী ﷺ চুপচাপ তার কথা শুনছিলেন। অতপর তিনি বললেন: আবুল ওয়ালীদ, আপনি কি আপনার সব কথা বলেছেন? সে বললো: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে এখন আমার কথা শুনুন।
এরপর তিনি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে এই সূরা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। উতবা তার দুই হাত পেছনের দিকে মাটিতে হেলান দিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে শুনতে থাকলো। সিজদার আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি সিজদা করলেন এবং মাথা তুলে বললেন: হে আবুল ওয়ালীদ, আমার জবাবও আপনি পেয়ে গেলেন। এখন যা ইচ্ছা করেন।” ‘উতবা উঠে কুরাঈশ নেতাদের আসরের দিকে অগ্রসর হলে লোকজন দূর থেকে তাকে দেখেই বললো: আল্লাহ্র শপথ! ‘উতবার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। যে চেহারা নিয়ে সে গিয়েছিল এটা সেই চেহারা নয়।
সে এসে বসলে লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলো: কি শুনে এলে। সে বললো: “আল্লাহ্র কসম! আমি এমন কথা শুনেছি যা এর আগে কখনো শুনিনি। আল্লাহ্র কসম! এটা না কবিতা, না যাদু, না গণনা বিদ্যা। হে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ, আমার কথা শোন এবং তাঁকে তাঁর কাজ করতে দাও। আমার বিশ্বাস, এ বাণী সফল হবেই। মনে করো আরবের লোকেরা যদি তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে তাহলে নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তোলা থেকে তোমরা রক্ষা পেয়ে যাবে এবং অন্যরাই তাঁকে পরাভূত করবে।
পক্ষান্তরে সে যদি আরবদের বিরুদ্ধে বিজয় হয় তাহলে তাঁর রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব এবং তাঁর সম্মান ও মর্যাদা তোমাদের সম্মান ও মর্যাদা হবে।” তার এই কথা শোনা মাত্র কুরাঈশ নেতারা বলে উঠলো: “ওয়ালীদের বাপ, শেষ পর্যন্ত তোমার ওপর তার যাদুর প্রভাব পড়লো” ‘উতবা বললো: “আমি আমার মতামত তোমাদের সামনে পেশ করলাম। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা করতে থাকো।” (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩১৩-৩১৪)
। আরও কতিপয় মুহাদ্দিস বিভিন্ন সনদে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা:) থেকে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে শব্দগত কিছু মতপার্থক্য আছে। ঐ সব রেওয়ায়েতের কোন কোনটিতে এ কথাও আছে যে, নবী ﷺ তিলাওয়াত করতে করতে যে সময়فان اعرصوا فقل انزرتكم صاعقة مثلفان اعرصوا فقل انزرتكم صاعقة مثل صاعقة عاد وثمود (এখন যদি এসব লোক মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে এদেরকে বলে দাও আমি তোমাদেরকে আদ ও সামূদ জাতির আযাবের মত অকস্মাত আগমনকারী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি।)
আয়াতটি পড়লেন তখন উতবা আপনা থেকেই তাঁর মুখের ওপর হাত চেপে ধরে বললো: “আল্লাহ্র ওয়াস্তে নিজের কওমের প্রতি সদয় হও।” পরে সে কুরাইশ নেতাদের কাছে তার এ কাজের কারণ বর্ণনা করেছে, এই বলে যে, আপনারা জানেন, মুহাম্মাদের ﷺ মুখ থেকে যে কথা বের হয় তা সত্যে পরিণত হয়। তাই আমি আমাদের ওপর আযাব নাযিল না হয় এই ভেবে আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম।

সূরা হা মীম সেজদাহ্ নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ