হুদায়বিয়ার সন্ধি | | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩, হুদায়বিয়ার কাহিনিতে ফিরে আসি। আলোচনা কিছুটা চলার পর নবি করিম (সা) ও সুহায়েল লিখিতভাবে একটি চুক্তি করতে সম্মত হন। এই বিখ্যাত চুক্তিপত্রটি লেখার জন্য নবিজি (সা) আলি ইবনে আবি তালিবকে ডেকে বললেন, “এসো, আমাদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র (‘সুলহ’) লিখে দাও।”
হুদায়বিয়ার সন্ধি | | হুদায়বিয়ার সন্ধি (চুক্তি)-৩ | মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ ) জীবন

শুরুতেই নবিজি (সা) বললেন, “আসুন, আমরা ‘বিসমিল্লাহি আর-রহমান আর-রহিম’ দিয়ে লেখা শুরু করি।” সুহায়েল জবাবে বলল, “এই শব্দগুলো তো আমি কখনও শুনিনি। আমি জানি না ‘আল-রহমান’ কে। বরং আমরা যেভাবে আগে থেকে অভ্যস্ত সেভাবেই লিখি, ‘বিসমিক আল্লাহুম’ ।” স্মরণ করুন (৬৩তম পর্বে আলোচনা করেছি), নবিজি (সা) প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “কুরাইশরা যতক্ষণ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করবে, ততক্ষণ তারা আমার কাছে যে শর্ত চাইবে তা আমি মেনে নেব।”
তিনি আসলেই রক্তপাত এড়াতে চেয়েছিলেন; তাই তিনি সুহায়েলের প্রস্তাবে সম্মত হলেন। তারপর আবার তিনি আলোচনায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে বললেন, “চুক্তির এই শর্তে আল্লাহর রসুল মুহাম্মদ (‘মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’) এবং সুহায়েল ইবনে আমর একমত হয়েছেন।” আলি (রা) তৎক্ষণাৎ তা লিখে ফেললেন। সুহায়েল এ কথা শুনে বলল, “তোমাকে যদি আমরা আল্লাহর রসুল (‘রসুলুল্লাহ’) বলে বিশ্বাসই করতাম, তাহলে তো আমরা তোমাকে কাবাঘরে যেতে বাধা দিতাম না, তোমার সঙ্গে যুদ্ধও করতাম না।

লোকেরা তোমাকে আগে যেভাবে চিনত সেভাবেই লিখুক: ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ’।” নবিজি (সা) বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি তো আল্লাহরই রসুল, আপনি স্বীকার করেন আর না করেন। তবে, ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ’ লেখা হোক।” কিন্তু আলি (রা) বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমি ‘রসুলুল্লাহ’ কথাটি মুছব না।” একটি ভাষ্যে বলা হয়েছে, নবিজি (সা) আলির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে চুক্তিপত্রটি নিয়ে নিজ হাতে কথাটি কেটে দিয়েছিলেন।
এই ঘটনা থেকে আমরা মহানবির (সা) নিরহঙ্কারিতা এবং আলির (রা) মজবুত ইমানের পরিচয় পাই। এই ক্ষেত্রে আলি (রা) নবিজির (সা) অবাধ্য হয়ে নিজেকে সম্মানিতই করেছেন। নবিজি (সা) বললেন, “কুরাইশরা মুসলিমদের ওমরা করতে দেবে।” লক্ষ করুন, এবারও তিনি আগে প্রস্তাব করছেন।
কিন্তু সুহায়েল বলল, “যদি এই বছরের জন্য হয়, তাহলে দেবে না। আমরা তা হতে দিতে পারব না। বরং আগামী বছর সেটা হবে।” এরপর সুহায়েল তার শর্ত পেশ করল: “আমাদের মধ্য থেকে একজন লোকও তোমার কাছে যেতে পারবে না, এমনকি সে তোমার ধর্মের অনুসারী হলেও। এমন হলে (যদি কেউ যায়) তুমি তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে।” [ভুলে যাবেন না, সুহায়েল এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে।
তার এক ছেলে মুসলিমদের সঙ্গে আছে এবং অন্য ছেলেও চলে যেতে চায়। তাই সে চুক্তিতে এই শর্ত অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।] সুহায়েলের এই শর্ত শুনে সাহাবিরা বললেন, “এ তো অন্যায্য প্রস্তাব। কেউ স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের কাছে এলে তাকে আমরা কীভাবে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারি?” এই পর্যায়ে সাহাবিদের মধ্যে আলোড়ন শুরু হয় এবং আলি (রা) চুক্তিপত্র লেখা তা থেকে বিরত হন।
এরপর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সিরাহের সবচেয়ে চমকপ্রদ ও নাটকীয় ঘটনার সূচনা হয় । ঘটনাটি ছিল আবু জান্দালের পলায়ন। আর পুরো বিষয়টি ছিল সব মুসলিমের জন্য একটি পরীক্ষা।
আরও পড়ুনঃ